ফোন করলেই বাড়ি পৌঁছে যাবে চকোলেট, দোদমা

তখনও বাজার পুরোপুরি জমেনি। দোকানের সামনে সার দিয়ে আতসবাজি সাজাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। দোকান উপচে রাস্তাতেও পৌঁছে গিয়েছে ফুলঝুরি, তুবড়ি, রংমশাল। তবে শব্দবাজির দেখা নেই।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০২
Share:

চলছে আতসবাজি কেনাবেচা। তেঁতুলতলা বাজারে তোলা নিজস্ব চিত্র।

তখনও বাজার পুরোপুরি জমেনি। দোকানের সামনে সার দিয়ে আতসবাজি সাজাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। দোকান উপচে রাস্তাতেও পৌঁছে গিয়েছে ফুলঝুরি, তুবড়ি, রংমশাল। তবে শব্দবাজির দেখা নেই।

Advertisement

সত্যিই কি নেই?

দু’এক জন ব্যবসায়ী ‘না’ বললেও আর এক জন দিব্যি দোকানের ভিতরে নিয়ে গিয়ে হাতে তুলে দিলেন কালীফটকা, দোদমা।

Advertisement

পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় যতই শব্দবাজি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করুন, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো দিব্যি বিকোচ্ছে শব্দবাজি।

বর্ধমান শহরের তেঁতুলতলা বাজার-সহ একাধিক রাস্তায় সার দিয়ে বাজির পাইকারি ও খুচরো দোকান বসেছে। মহিলা, কিশোর সবাই বাজি বিক্রেতা। পসরায় সাজানো ফুলঝুরি, চরকি, রংমশাল, তুবড়ির মাঝে শব্দবাজির গন্ধ পর্যন্ত নেই। ইনিয়েবিনিয়ে শব্দবাজির কথা জিজ্ঞেস করে লাভ না হওয়ায় এক ব্যবসায়ীকে সরাসরি প্রশ্ন করা হল, ‘‘দাদা, কালীপুজোর বিসর্জনে শব্দ না হলে মানায়। চকলেট বা দোদমা নেই?” গোলগাল চেহারার মাঝবয়সী ভদ্রলোক বললেন, “সবই আছে। একটু লুকিয়ে রাখতে হয়।” কিন্তু পুলিশ? পাশের একটি দোকানের ভিতর দু’তিন জন যুবক বসেছিলেন। তাঁরা বললেন, “পুলিশ ডালে ডালে গেলে আমাদেরও পাতায় পাতায় যেতে হয়। থলির নীচের দিকে বাজি থাকে, আর উপরের দিকে কালীপুজোর উপকরণ। জানেনই তো পুলিশ কালী-ভক্ত। ওই ব্যাগে আর তল্লাশি করবে না।” শুধু মোটরবাইকে করে নয়, এ ভাবেই বাসের ছাদে, ছোট মালবাহী গাড়িতে বর্ধমান থেকে ‘হোম ডেলিভারি’ হচ্ছে অন্য গ্রামে। অর্থাৎ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা অনায়াসে নিয়ে যাচ্ছে চকলেট বোমা-দোদমার মতো শব্দবাজি।

জানা গেল, কিনে নিয়ে যাওয়ায় হ্যাপা থাকায় ভাতার, মেমারিতে পৌঁছেও দেওয়া হয় শব্দবাজি। ওই এলাকার একটি বাজির দোকানের এক কর্মী জানালেন, এমনি নিয়ে যেতে গেলে পুলিশ ধরতে পারে। তাই তাঁরাই পৌঁছে দেন। দর জিজ্ঞেস করায় জানালেন, ‘‘ফোন করে বরাত দেবেন। পাঁচ হাজার টাকা বাজি কিনলেই বর্ধমান শহরের বাইরেও হোম ডেলিভারি করি।’’ কথা চলার মাঝেই এক কিশোর এগিয়ে এসে বলে, ‘‘সব মিলবে। আমার সঙ্গে আসুন।’’ পিছু পিছু যেতেই দেখা গেল, একটা গলির ভিতর কয়েকটা দোকানের পরেই সাটার নামানো ঘর। সাটার তুলে ওই কিশোরের প্রশ্ন, ‘‘৩০, ৫০, ৭৫ টাকার মধ্যে চকোলেট বোমার কোন প্যাকেটটা নেবেন? দোদমা রয়েছে ৬০ ও ৮০ টাকার। দাম যত বাড়বে, আওয়াজও তত বাড়বে।’’ ওই কিশোরেরই দাবি, শক্তিগড়, খণ্ডঘোষ, রায়না থেকেও বরাত মিলেছে। শহরের বাইরে বাজি পাঠালে কি বেশি টাকা? দোকানের মালিক বললেন, ‘‘একেবারে ক্যাশ অন ডেলিভারি। বাজির সঙ্গে যাতায়াত খরচ ধরেই আমরা বিল পাঠাব।’’ তিনিই জানালেন, মহালয়ার আগে কিংবা মহাষ্টমীর সন্ধিক্ষণে গ্রাম বাংলায় বাজি ফাটানোর রেওয়াজ রয়েছে। বনেদি বাড়িগুলিতে ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ পদ্ধতিতেই বাজি পাঠানো হয়েছিল।

পুলিশ অবশ্য এখনও বাজি ধরতে ময়দানে নামেনি সেভাবে। যদিও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ২৬০৯ প্যাকেট শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। দুটি মামলায় তিন জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। কালীপুজোর মুখে অভিযান আরও কড়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

যদিও এ সবে ডরান না ব্যবসায়ীরা। এক জন তো বলেই ফেললেন, ‘‘শব্দবাজি কী আটকানো যাবে? ক্রেতা থাকলে বিক্রেতাও থাকবে। বেরোবে বিক্রির নতুন ফন্দিফিকিরও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন