বিশালাক্ষীর ভোগে পান্তা, ল্যাটা মাছ

দেবীর নামে দাঁইহাটের ওই পাড়ার নামও বিশালাক্ষী পাড়া। দেবী মন্দিরের পাশেই রয়েছে রঘুনাথ, গুপীনাথ ও জগন্নাথের মন্দির। বছরভর তিন বেলা অন্নভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে। পরিবারের সদস্যদের দাবি, এ বার এই পুজো ৩৩৪ বছরে পা দিল।

Advertisement

সুচন্দ্রা দে

কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৪৬
Share:

দাঁইহাটের বিশালাক্ষী মন্দির। —নিজস্ব চিত্র।

দেবী এখানে মৃন্ময়ী নন, তাঁর দশ হাতও নেই। এখানে দেবী প্রতিমাটি কাঠের তৈরি। তিনি দ্বিভুজা। দেবীর সঙ্গে নিত্য পুজো করা হয় গৃহদেবতা রঘুনাথ, গুপীনাথ ও জগন্নাথ। সাধারণ অন্নভোগের পাশাপাশি দশমীতে পান্তা ভাত ও পোড়া ল্যাটা মাছ ভোগ দেওয়া হয় দেবী বিশালাক্ষীকে। এমনটাই চল দাঁইহাটের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুজোয়।

Advertisement

দেবীর নামে দাঁইহাটের ওই পাড়ার নামও বিশালাক্ষী পাড়া। দেবী মন্দিরের পাশেই রয়েছে রঘুনাথ, গুপীনাথ ও জগন্নাথের মন্দির। বছরভর তিন বেলা অন্নভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে। পরিবারের সদস্যদের দাবি, এ বার এই পুজো ৩৩৪ বছরে পা দিল। দাঁইহাটের ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, ১০৯০ বঙ্গাব্দে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পূর্বপুরুষ নন্দকিশোর গোস্বামী পঞ্চমুণ্ডের আসনে সিদ্ধিলাভ করে গঙ্গাতীরে চারধাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্নাদেশ পান। সেই মতো রঘুনাথ, গুপীনাথ ও জগন্নাথ মহাকালের উপর দণ্ডায়মান বিশালাক্ষীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেন। নিম কাঠের তৈরি ফুট পাঁচেকের দেবী মূর্তির এক হাতে রয়েছে খড়্গ। অন্য হাতে দেবীর বরাভয় মুদ্রা। নন্দকিশোরের পরে তাঁর দৌহিত্র শ্রীদাম গোস্বামীর উপরে পুজোর ভার পড়ে। জনশ্রুতি, দেবী বিগ্রহে মুগ্ধ বর্ধমানের রাজ পরিবার গোস্বামী পরিবারকে ৩৬৫ বিঘা জমি দান করে। শ্রীদামের বংশধর মন্দিরের বর্তমান সেবায়ত দেবনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়, সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়রা জানান, মাটির মূর্তি গড়া হয় না। সারা বছরের মতো শারদোৎসবের সময়েও কাঠের মূর্তিতেই পুজো হয়। বছর চোদ্দো আগে পাকা মন্দির নির্মিত হয়েছে। এখানে বিসর্জন হয় শান্তি ঘট ও গণেশ ঘটের। তিন বছর অন্তর দেবীর ‘অঙ্গরাগ’ করা হয়।

বিশালাক্ষী পুজো উপলক্ষে ঢাক বাজিয়ে গঙ্গায় ঘট ভরতে যাওয়া হয়। অষ্টমীতে রয়েছে কুমারী পুজোর চলও। শাক্ত মতে পুজোর পরে বলির প্রথা রয়েছে। অন্নভোগের পাশাপাশি দশমীতে পান্তা ভাত, শাক, শুক্তো, আনাজ ও চাটনির সঙ্গে দেবীকে পোড়া ল্যাটা মাছ নিবেদন করা হয়। আষাঢ় মাসে বিপত্তারিণী পুজো ও চৈত্র মাসে বাসন্তীপুজোয় ভিড় হয় বিশালাক্ষীর মন্দিরে। পুজোকে ঘিরে আনন্দে মেতে ওঠেন বিশালাক্ষী পাড়া ও লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারাও।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন