ধৃত মাফিয়া রাজুও

মণীশকে টিকিট কেন, ক্ষোভ ছিল বিজেপিতে

তাঁকে যখন প্রার্থী করা হয়, প্রতিবাদে সরব হয়েছিল দলেরই একাংশ। ভোটে পরাজয়ের পরে তাঁকে দল থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়। রানিগঞ্জের সেই বিজেপি প্রার্থী মণীশ শর্মাকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর ও আসানসোল শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:০০
Share:

ভোটের আগে প্রচারে মণীশ শর্মা। ফাইল চিত্র।

তাঁকে যখন প্রার্থী করা হয়, প্রতিবাদে সরব হয়েছিল দলেরই একাংশ। ভোটে পরাজয়ের পরে তাঁকে দল থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়। রানিগঞ্জের সেই বিজেপি প্রার্থী মণীশ শর্মাকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে কয়লা কারবারের বহু মামলায় অভিযুক্ত রাজু ঝা-সহ জনা ছয়েককে। সোমবার রাতে কলকাতায় গ্রেফতার করার সময়ে তাদের কাছে কিছু অস্ত্রশস্ত্র ও নতুন নোটে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা মিলেছে বলে জানিয়েছে এসটিএফ।

Advertisement

রানিগঞ্জের বড়বাজার এলাকার বাসিন্দা মণীশবাবুর পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। গত বিধানসভা ভোটের কিছু দিন আগে তাঁকে দলের রানিগঞ্জ মণ্ডল সভাপতি করে বিজেপি। ভোটে তাঁকে প্রার্থী করার পরে অবশ্য দলের একাংশ ক্ষোভ-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। পুরনো কর্মী-সমর্থকেরা অভিযোগ করেন, মণীশবাবু অনৈতিক কাজকর্মে জড়িত। তাই তাঁকে প্রার্থী করায় দলের ভাবমূর্তি খারাপ হবে। তখন তা কানে তোলেননি দলীয় নেতৃত্ব। তবে ভোটে পরাজয়ের পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে বারবার দলের অনুশাসন ভাঙার অভিযোগ ওঠায় তদন্ত শুরু হয় বলে জানান বিজেপির আসানসোল জেলা সভাপতি তাপস রায়। তিনি বলেন, ‘‘জুন মাসে মণীশ শর্মাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার পর থেকে দলের সঙ্গে তাঁর আর কোনও সম্পর্ক নেই।’’

রাজু ঝা অবশ্য এর আগেও কয়েক বার গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোটবেলায় রানিগঞ্জের বস্তিতে থাকত রাজু। ছোটখাট চুরি দিয়ে হাতেখড়ি। পরে খনি অঞ্চলে কয়লা পাচারে অন্যতম প্রধান কারবারি হয়ে ওঠে। নয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে প্রায় দেড় দশক এই অবৈধ কারবার রমরমিয়ে সে চালিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। শুধু তাই নয়, অন্ডাল থেকে ডানকুনি পর্যন্ত রাজুর নামে ‘প্যাড’ চলত, যা দেখালে পুলিশের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশে বেআইনি কয়লা বিনা বাধায় পৌঁছে যেত গন্তব্যে। অভিযোগ, সেই সময় রাজুর এতটাই কর্তৃত্ব ছিল যে বৈধ কয়লা পরিবহণেও প্যাডের টাকা দিতে হতো। না হলে কয়লার ছাড় মিলত না। ২০০৬ সালে এক বার তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু কিছু দিন পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায় সে।

Advertisement

পুলিশের নানা সূত্রের খবর, রাজুর সম্পত্তির পরিমাণ কয়েকশো কোটি টাকা। দুর্গাপুরের বিধাননগরে বাড়ি করে থাকত সে। হোটেল, পরিবহণ, প্রোমোটারি-সহ নানা ব্যবসাও শুরু করে। শহরে বকলমেও তার রেস্তোরাঁ, পার্কিং প্লাজা, দোকান, শো-রুম ইত্যাদি রয়েছে। আগে সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ড থেকে তার বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার বিলাসবহুল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস চলত। সেগুলি এখন বিহারে চলে বলে পুলিশ জেনেছে। বীরভূমেও রাজুর বিরুদ্ধে কয়লা পাচার সংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে।

রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরে ২০১১ সালের ৩ জুলাই বিকেলে রানিগঞ্জের পঞ্জাবি মোড়ের কাছে রাজুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে দিন রানিগঞ্জে একটি কালী মন্দিরে অনুষ্ঠানে গিয়েছিল সে। পুলিশ অনুসরণ করছে বুঝতে পেরে অন্যের গাড়িতে চড়ে পালানোর চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পরে জামিন পায় রাজু। কারবারও অনেকটা গুটিয়ে ফেলে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

২০১৪ সালে কাঁকসার কুলডিহা ও জায়গোড়িয়া গ্রামে দু’টি কয়লা ডিপোয় হানা দিয়ে প্রচুর কয়লা, বিস্ফোরক ও গাঁজা উদ্ধার করে পুলিশ। ডিপো দু’টি রাজুর বলে পুলিশ দাবি করেছিল। তবে রাজুকে ধরা যায়নি। ২০১৫-র ৬ মে পুলিশ রাজু ও আরও দুই বেআইনি কয়লা কারবারে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। পুরনো মামলায় আরও কয়েক বার ধরা পড়েছে রাজু। প্রতি বারই কিছু দিন পরে জামিন পেয়ে গিয়েছে সে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন