TMC: দুই পদে নেতা বদল, কারণ নিয়ে জল্পনা

লোকসভা ভোটের আগে তারুণ্যে জোর দেওয়ার পাশাপাশি, আসানসোলের ১০৬টি ওয়ার্ডের পুরভোটকেও তৃণমূল পাখির চোখ করতে চাইছে বলে ধারণা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২১ ০৬:৩০
Share:

প্রতীকী ছবি।

গোটা রাজ্যের মতো পশ্চিম বর্ধমানেও দল এবং শাখা সংগঠনের নেতৃত্বে বদল আনল তৃণমূল। অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের বদলে বিধান উপাধ্যায়কে দলের জেলা সভাপতি এবং বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের বদলে অভিজিৎ ঘটককে আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি করা হল। এই দুই বদলকে সামনে রেখে জেলার রাজনীতির সঙ্গে পরিচিত মহলের একাংশের মধ্যে জল্পনা, আগামীর লোকসভা এবং পুর-ভোটের দিকে তাকিয়েই হয়তো তারুণ্যে জোর দিল তৃণমূল।

Advertisement

দলের জেলা সভাপতি হয়েই বারাবনির তৃণমূল বিধায়ক বিধান উপাধ্যায় বলেন, ‘‘সামনে কঠিন লড়াই। এমন এক সময়ে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি যথাসাধ্য
চেষ্টা করব।’’

দলের জেলা চেয়ারম্যান করা হয়েছে কুলটির প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়কে। ঘটনাচক্রে, এর আগে এই পদে ছিলেন আসানসোল উত্তরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক। তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, দলের ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি মেনেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে জেলা তৃণমূলের অন্দরে গুঞ্জন, বর্তমান জেলা কমিটিতে যাঁরা ঠাঁই পেয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই দলের অভ্যন্তরে মলয়বাবুর অনুগামী হিসেবেই পরিচিত। যদিও এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া
মেলেনি মলয়বাবুর।

Advertisement

কিন্তু জেলা সভাপতি পদে বদল কেন? জেলার নানা প্রান্তের স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশের মতে, প্রথমত, অপূর্ববাবুর বয়স ৭০-এর আশপাশে। এই পরিস্থিতিতে বছর ৫২-র বিধানবাবুকে দায়িত্বে এনে আসলে চেষ্টা করা হয়েছে হয়েছে তুলনায় নবীনদের তুলে ধরার। দ্বিতীয়ত, নানা সময়ে অপূর্ববাবুর বিভিন্ন পদে কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু ইদানীং, তাঁর ‘সক্রিয়তা’ নিয়ে দলের অন্দরে একটি অংশের প্রশ্ন ছিল। পাশাপাশি, তাঁর আমলে দলের কুলটি, জামুড়িয়া-সহ নানা জায়গায় দলীয় ‘কোন্দল’ সামাল দেওয়াও যাচ্ছিল না। যদিও অপূর্ববাবু নিজে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দল তখন মনে করেছিল আমাকে দরকার, তাই দায়িত্ব দিয়েছিল। সাধ্যমতো কাজ করছি। এখন দল মনে করছে, সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে রদবদল দরকার। তা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ বিধানবাবু বলেন, ‘‘এটা নবীন-প্রবীণের বিষয় নয়। অপূর্ববাবুর মতো নেতাদের কাজ দেখে, পরামর্শ মেনেই আমরা চলব।’’

পাশাপাশি, মূলত শিল্প-প্রধান জেলায় তৃণমূলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আইএনটিটিইউসি-র মজবুত সংগঠন। কিন্তু বছর ৫৫-র বিশ্বনাথবাবু দায়িত্বে থাকাকালীন শ্রমিক সংগঠনের ‘কোন্দল’, স্থানীয়দের নিয়োগকে কেন্দ্র করে ‘অশান্তি’-সহ বিভিন্ন ঘটনা সামনে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে সংগঠনের দায়িত্বে ‘নতুন মুখ’ নিয়ে আসাটা তাই জরুরি ছিল বলেই মনে করছেন আইএনটিটিইউসি-র নানা প্রান্তের সদস্যেরা। পাশাপাশি, অভিজিৎবাবুর বয়সও কম, বছর ৪৫। তাই সংগঠনকে তিনি অনেক বেশি সময়ও দিতে পারবেন। অভিজিৎবাবু নিজেও বলেন, ‘‘শ্রমিক সংগঠনকে মজবুত করাই আমার প্রথম কাজ। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করব।’’ বিশ্বনাথবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। অভিজিতের জন্য শুভেচ্ছা রইল। কখনও আমাকে দরকার হলে, অবশ্যই পাশে থাকব।’’

এই রদবদলের মাধ্যমে লোকসভা ভোটের আগে তারুণ্যে জোর দেওয়ার পাশাপাশি, আসানসোলের ১০৬টি ওয়ার্ডের পুরভোটকেও তৃণমূল পাখির চোখ করতে চাইছে বলে ধারণা। এক দিকে, আসানসোলের বিস্তীর্ণ এলাকায় রয়েছে শ্রমিকদের বাস। সেখানে বর্তমানে পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অভিজিৎবাবুকে শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি, এ বারই ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে দলের আসানসোল পুর-এলাকার আহ্বায়ক করা হয়েছে দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনকে। উল্টো দিকে, দুর্গাপুর পুরসভায় একই দায়িত্ব পেয়েছেন মৃগেন্দ্র পাল। ঘটনাচক্রে, জেলা তৃণমূলের অন্দরে, আসানসোল-দুর্গাপুর, দু’টি আলাদা সাংগঠনিক জেলা করার বিষয়ে আলোচনা ছিল। দু’জনকে আলাদা ভাবে আহ্বায়ক করার নেপথ্যে তা-ও কাজ করেছে বলে অনুমান। ভি শিবদাসন নতুন দায়িত্ব পেয়ে বলেছেন, ‘‘পুর-ভোটকে পাখির চোখ করেই আমরা
কাজ করব।’’

পাশাপাশি, মহিলা তৃণমূল এবং যুব তৃণমূলের নতুন জেলা সভাপতি করা হয়েছে যথাক্রমে মিনতি হাজরা এবং কৌশিক মণ্ডলকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement