বিধান উপাধ্যায়কে ঘিরে উল্লাস। নিজস্ব চিত্র
মেয়র কে হবেন, এ প্রশ্ন নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই আসানসোল পুর-এলাকায় চলছিল জল্পনা। কয়েকটি নামও ভাসছিল রাজনৈতিক মহলে। কিন্তু শুক্রবার কার্যত চমক দিলেন তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। এ দিন দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের শেষে জানানো হল, বারাবনির বিধায়ক তথা দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায় হতে চলেছেন শহরের মেয়র। এই ঘোষণার পরে, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, দলের কোনও গোষ্ঠীতে না থাকার কারণেই হয়তো বিধানকে মেয়র করা হল। যদিও জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব এবং খোদ বিধান এই তত্ত্বে আমল দিচ্ছেন না।
পুরভোটের ফল ঘোষণার পরেই মেয়র কে হবেন তা নিয়ে শহর জুড়ে অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়, অভিজিৎ ঘটক, উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিতাভ বসু প্রমুখের নাম নিয়ে জল্পনা চলছিল। কোনও ভাবেই এই আলোচনায় আসেনি বিধানের নাম। কারণ, তিনি পুরভোটে প্রার্থীও ছিলেন না। ফলে, বিধানের নাম মেয়র হিসাবে ঘোষিত হওয়ার পরেই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় কাটাছেঁড়া। বিধান নিজে অবশ্য বলছেন, “দল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটাই চূড়ান্ত। আমি আমার দায়িত্ব পালন করব।”
বিধান বারাবনির তিন বারের বিধায়ক। তৃণমূল সূত্রে খবর, আগামী ছ’মাসের মধ্যে তাঁকে যে কোনও ওয়ার্ড থেকে জিতিয়ে আনা হবে।
ঘটনাচক্রে, তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছিল, পুরভোটের ফলপ্রকাশের পরেই ওই পাঁচ জনের নাম নিয়ে আলোচনা চলছিল। তাঁদের হয়ে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে তদ্বিরও করছিলেন জেলার কয়েক জন প্রভাবশালী নেতা। কিন্তু ওই পাঁচ নেতার কাউকে এক জন মেয়র করলে ‘সাংগঠনিক ভারসাম্যে’ কিছু সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের দাবি। যদিও, তৃণমূল নেতৃত্ব এ তত্ত্বে আমল দেননি।
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, শুক্রবার জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক শুরু হওয়ার আগে আসানসোলের মেয়র পদের জন্য রাজ্যের মন্ত্রী তথা আসানসোল উত্তরের বিধায়ক মলয় ঘটকের সঙ্গে আলোচনা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ সূত্রে দাবি, তখনই ‘ভারসাম্য’ রক্ষার সূত্রে উঠে আসে বিধানের নাম। কারণ, দলীয় রাজনীতিতে বিধান কোনও শিবিরের অন্তর্ভুক্ত হন।
যদিও, এ তত্ত্বে আমল দেননি জল্পনায় থাকা ওই পাঁচ জন। অভিজিৎ, উজ্জ্বল থেকে অমরনাথ, সকলেই বলছেন, “দলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।” ঘটনাচক্রে, আসানসোল পুরসভার ডেপুটি মেয়র করা হয়েছে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওয়াসিমুল হক এবং ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অভিজিৎকে। ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমরনাথকে করা হয়েছে পুরসভার অধ্যক্ষ। ঘটনাচক্রে, এ বারেই প্রথম আসানসোলে দু’জন ডেপুটি মেয়র হলেন।
কিন্তু বিধানের মেয়র হিসাবে নাম ঘোষণার পরেই সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির প্রতিক্রিয়া, “ব্যক্তিগত ভাবে বিধানের প্রতি শুভেচ্ছা থাকল।” তবে, বিজেপির জেলা সভাপতি দিলীপ দে, সিপিএমর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়, কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীদের কার্যত এক সুরে কটাক্ষ, “তৃণমূল যে কতটা কোন্দলে জর্জরিত, এই সিদ্ধান্তে তা প্রমাণিত। কারণ, তৃণমূল তাদের ৯১ জন জেতা কাউন্সিলরের এক জনকেও মেয়র করতে পারল না স্রেফ অন্তর্ঘাত সামলানোর জন্য। তা ছাড়া, বিধান উপাধ্যায় পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা।” ঘটনাচক্রে, বারাবনির পাঁচগাছিয়ায় বিধানের পৈতৃক বাড়ি হলেও তিনি বর্তমানে ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের আপকার গার্ডেনে এক আবাসনে থাকেন। তাই তিনি এখন আসানসোল পুর-এলাকার বাসিন্দা।
এ সব কটাক্ষে আমল দিচ্ছেন না তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন। তাঁর কথায়, “দল একেবারেই ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থেই আমাদের দল কাজ করে। সুতরাং, আমাদের মেয়র কে হবেন, সে বিষয়ে বিরোধীদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই।”