কাঁকসা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে। নিজস্ব চিত্র।
খাঁ খাঁ চেয়ার-টেবিল। রয়েছেন শুধু তিনি। কিন্তু তিনিও তখন ভাত-ঘুমে। কাজ নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠা কাঁকসার ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, গোটা অফিসে মোটে এক জন কর্মী রয়েছেন। কিন্তু তিনি হাত গুঁটিয়ে ঘুমাচ্ছেন। এই দফতরের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগ তো রয়েছেই। ক্ষুব্ধ ব্লক প্রশাসনও। ব্লক প্রশাসনের অভিযোগ, বালিঘাটে অভিযানের সময়েও এই দফতরের আধিকারিক ও কর্মীদের পাওয়া যায় না।
কাঁকসা ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। পুকুরের চরিত্র বদল করে বোজানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ যেমন উঠেছিল, তেমনই সরকারি জমি অন্যের নামে রেকর্ড করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। মাস খানেক আগেই বন দফতরের জমি প্লট করে বিক্রি করার অভিযোগ ওঠে কয়েকজন জমি মাফিয়ার বিরুদ্ধে। সে ক্ষেত্রেও ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের দিকেই অভিযোগের আঙুল ওঠে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, অনৈতিক কাজ সহজে হয়ে গেলেও সাধারণ মানুষকে সামান্য জমির রেকর্ড করতেই বারবার ঘোরানো হচ্ছে।
মাস তিনেক ধরে দফতরে এসে ঘুরে যাচ্ছেন বছর যাটের কাঁকসার পানাগড় বাজারের বাসিন্দা সরস্বতীদেবী। তিনি জমির রেকর্ড করানোর জন্য দফতরে এসে ঘুরে যাচ্ছেন। বুধবারও তিনি দফতরে এসে দীর্ঘক্ষণ বসে ছিলেন। শেষে তিনি বিডিও-র (কাঁকসা) কাছে গিয়ে নিজের পরিস্থিতির কথা জানান।
অথচ সেই সময়েই ওই অফিসে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র কর্মী চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। দফতরের আধিকারিকের চেয়ার ফাঁকা। দফতরে আসা মানুষজনদের অভিযোগ, ‘‘এ ছবি প্রতিদিনের। অধিকাংশ দিনই কর্মীরা থাকেন না। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই দফতরে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসেন। এ দিনও প্রচুর মানুষ এসেছিলেন। কিন্তু কোনও কাজ না হওয়ায় হতাশ হয়ে তাঁরা ফিরে যান।
এ সব অভিযোগ পৌঁছেছে ব্লক প্রশাসনের কাছেও। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় দিনই বহু মানুষ ওই দফতরে কাউকে না পেয়ে তাঁদের কাছে অভিযোগ করেন। অসন্তুষ্ট ব্লক প্রশাসনও। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ভূমি অফিসে ফোন করা হলেও অনেকে ফোন তোলেন না।’’ কাঁকসার বিডিও অরবিন্দ বিশ্বাস জানান, তাঁদের তরফেও ওই দফতরের আধিকারিককে মানুষকে সহযোগিতার জন্য বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এরপরেও যদি অবস্থার পরিবর্তন না হয়, আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।’’ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, ‘‘যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবেন।’’