রাতের স্টেশন

রোজ রেল লাইন দিয়েই যাতায়াত, উর্দিধারী কই!

রাত ১১টা ৫৮। অঝোরে বৃষ্টি। বর্ধমান স্টেশনের ডিজিট্যাল ঘড়ির নীচে চাদর পেতে সার দিয়ে শুয়ে লোকজন। জেগে আছেন গুটিকয়েক যাত্রী আর হকারেরা। স্টেশনে যাতায়াতের পথে একসময় বসানো ছিল মেটাল ডিটেক্টর।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪৭
Share:

বর্ধমান স্টেশনের মহিলা সহায়তা কেেন্দ্র দেখা মেলে না কারও। ছবি: উদিত সিংহ।।

রাত ১১টা ৫৮। অঝোরে বৃষ্টি। বর্ধমান স্টেশনের ডিজিট্যাল ঘড়ির নীচে চাদর পেতে সার দিয়ে শুয়ে লোকজন। জেগে আছেন গুটিকয়েক যাত্রী আর হকারেরা।

Advertisement

স্টেশনে যাতায়াতের পথে একসময় বসানো ছিল মেটাল ডিটেক্টর। পুড়ে যাওয়ার পরে অবশ্য আর বসানো হয়নি। কাজেই নিশুত মাঝরাত হোক বা ব্যস্ত সকাল স্টেশনে যাতায়াত অবাধ। অথচ এই স্টেশনেই কয়েকদিন আগে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল জঙ্গি মুসা। এ ছাড়াও চুরি বা অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়ার ঘটনা তো আকছার ঘটছে।

পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন বর্ধমান। রাজধানী, শতাব্দীর মতো ট্রেন থেকে শুরু করে ৭৫ জোড়া এক্সপ্রেস যাতায়াত করে এ লাইনে। রয়েছে অসংখ্য লোকাল ট্রেন। রেলের হিসেবে, রাত ৮টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ৩৭ হাজার মানুষ স্টেশনটি ব্যবহার করেন। অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে এখনও ক্লোজড্‌ সার্কিট ক্যামেরা নেই। রাতের কয়েক ঘণ্টায় দেখা গেল না জিআরপি বা আরপিএফের টহলদারিও। একমাত্র দূরপাল্লার ট্রেন থামলে ইনসাসধারী দুই আরপিএফ কর্মীকে স্টেশনে দাঁড়াতে দেখা গেল।

Advertisement

১ নম্বর প্লাটফর্মের শেষ মাথায় (ওভারব্রিজের দিকে) বর্ধমান জিআরপি স্টেশন। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, জলপাই রঙের জামা পড়ে কয়েকজন পাহারা দিচ্ছেন। কোলাপসিবল গেটটি বন্ধ। লাইন পেরিয়েই এক প্লাটফর্ম থেকে আর এক প্লাটফর্মে ডাকঘরের প্যাকেট পৌঁছে দিচ্ছেন রেলকর্মীরা। দূরে ট্রেনের আলো দেখতে পেলে সরে যাচ্ছেন। পুলিশ বা আরপিএফ কিছু বলে না? ভয় লাগে না ?

ওই কর্মীদের সটান জবাব, “বছরভর এই কাজ করছি। কেউ কিছু বলে না। ১৫-২০টা প্যাকেট ফুট ব্রিজ দিয়ে নিয়ে যেতে কম সময় লাগে? সময় বাঁচানোর জন্য ঝুঁকি নিতেই হয়।” গভীর রাতেও দেখা যায়, ঝুঁকি নিয়েই এক ট্রেন থেকে আরেক ট্রেনের দরজায় লাফিয়ে উঠছেন যাত্রীরা। অন্ধকারের মধ্যেই খুশি মত লাইন পেরিয়ে প্লাটফর্মে যাচ্ছেন অনেকেই। নিষেধ করার কেউ নেই।

বেশ কয়েক বছর আগে ২ নম্বর প্লাটফর্মে জিআরপি ‘মহিলা সহায়তা বুথ’ খুলেছিল। তবে মহিলাদের সাহায্য করার জন্য শেষ কবে পুলিশ বসেছিল সেখানে, তা মনে করতে পারছেন না স্টেশনের কোনও হকার বা স্টলের মালিকেরা। দিনে ও রাতে—দু’বেলা গিয়েই দেখা দেখা যায়, ওই বুথ চলে গিয়েছে পুরুষদের দখলে। তাঁরাই সেখানে বসেন। আর চায়ের ভাঁড় ফেলেন বুথের ভিতরে। ওই সব হকারেরা বলেন, “আমাদেরই নিরাপত্তা নেই তো, মহিলাদের। মাঝেমধ্যেই তো নানা ঘটনা কানে আসে। ক’জন যাত্রী আর জিআরপি-র কাছে ছুটে যায় বলুন তো?” সিতাভোগ-মিহিদানা বিক্রেতা এক হকার বললেন, “পেটের দায়ে এখানে পড়ে আছি। জেনে বুঝেও চুপ থাকতে হয়।” যাত্রী সুরক্ষা কমিটির এক সদস্য বলেন, “আতঙ্কে তো রয়েছিই। স্টেশনে ন্যূনতম নিরাপত্তাও নেই। সম্প্রতি এক জঙ্গি ধরা পড়েছে। তারপরেও নিরাপত্তা ঢিলেঢলা।”

বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রাক্তন সাংসদ সইদুল হক বলেন, “রেলের নিরাপত্তা আধুনিকীকরণের জন্য বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।” রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ও।

যদিও পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের নিরাপত্তা-কমিশনার বিভাগের এক কর্তার দাবি, “যথেষ্ট নিরাপত্তা রয়েছে। মাস দু’য়েকের মধ্যে সিসি ক্যামেরায় বর্ধমান স্টেশন মুড়ে ফেলা হবে। নতুন করে তিনটি মেটাল ডিটেক্টর বসানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

যদিও প্রায় পৌনে দু’ঘন্টা স্টেশনে কাটানোর পরেও খাঁকি উর্দি-ধারী কাউকে দেখা গেল না। তেনারা কী দেখা দেন না? চায়ে চুমুক দিয়ে এক স্টল-মালিক বলেন, “চা, পান বিরতির সময় দেখি। তা ছাড়া কখন আসেন, কখন যান ঠিক টের পাই না।”

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন