সোনার দোকান ফাঁকা।
হাতে আর গোটা দু’টো সপ্তাহও নেই। ষষ্ঠীর সকাল থেকে দশমীর সন্ধে— কখন কী গায়ে চাপাতে হবে, রীতিমতো পরিকল্পনা করে কেনাকাটা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু শুধু জামাকাপড় কিনলেই হবে না, সঙ্গে চাই মানানসই গয়না। পুজোর বাজারে বেরিয়ে গয়নার দোকানে ঢুঁ তাই নিয়ম করেই দেন অনেকে। পুজো উপলক্ষে সোনাদানা কিনলে সমৃদ্ধি ও শ্রীবৃদ্ধি হয়, এই বিশ্বাসেও অনেকে গয়না কেনেন। তাই পুজোর বাজারের দিকে তাকিয়ে থাকেন গয়নার ব্যবসায়ীরাও। কিন্তু এ বার তাঁদের মুখে খুব একটা হাসি ফুটছে না। সোনার দাম চড়া থাকায় দোকানে তেমন ভিড় নেই বলে আক্ষেপ করছেন দুর্গাপুরের ব্যবসায়ীরা। তার বদলে রুপো বা অন্য ধাতুর নানা ডিজাইনের গয়নাই বিক্রি হচ্ছে বেশি।
কেউ পছন্দ করেন হাল্কা সোনার গয়না, কেউ বা ভারী কাজের। সেই অনুযায়ী পুজো-স্পেশাল পসরা সাজিয়ে থাকেন গয়না ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তাঁর জানান, গত বছর এই সময়ে সোনার যা দাম ছিল, তার থেকে এখন প্রায় পাঁচ-সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা বেড়ে গিয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, পুজোর মরসুমে মোটামোটি যা বিক্রি হয় তার ৮০% শতাংশ হয়ে যায় দু’সপ্তাহ আগেই। কিন্তু এ বার অনেকটাই মন্দা। অন্য বছরে যা বিক্রি হয় তার তুলনায় ৪০-৫০ শতাংশ হয়েছে বলে জানান তাঁরা। দোকানে ভিড় নেই একেবারেই। সারা বছর যেমন বিক্রি হয়, তেমনই চলছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি।
স্টলে বিকোচ্ছে ধাতু-পাথরের গয়না। —নিজস্ব চিত্র
ক্রেতারাও অনেকে দাম একটু কমার অপেক্ষায় আছেন। উখড়ার বাসিন্দা, বছর চল্লিশের তুলি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রত্যেক বার পুজোর সময় কম-বেশি খানিকটা সোনা কিনে রাখি। এটা আমাদের বাড়ির রেওয়াজ। কিন্তু এই বছর দামটা বেশ চড়া। তাই আপাতত কিনছি না। দেখি, পুজোর পরে যদি একটু কমে, তখন কিনব।’’
ক্রেতা টানতে অনেক দোকানে পুজো উপলক্ষে গয়নার মজুরির ওপর বিশেষ ছাড়ের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কোথাও আবার আছে গিফটের চমক। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি খুব একটা পাল্টায়নি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তবে ধনতেরাস আশার আলো নিয়ে আসবে বলে মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের অনেকেরই মতে, ধনতেরাসে এখন বাঙালিরাও পাল্লা দিয়ে সোনা কেনেন। তাই হয়তো দুর্গাপুজোয় সোনা কেনার আগ্রহে ভাটা পড়েছে।
তবে সোনার গয়নার চাহিদা না থাকলেও বাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে রুপোর রকমারি ডিজাইনের গহনা। কানের দুল থেকে বালা, চুড়িতে রয়েছে নজরকাড়া নানা ডিজাইন। ক্রেতারা জানাচ্ছেন, শাড়ি হোক বা সালোয়ার, সবের সঙ্গেই সেগুলি মানানসই। এ ছাড়া বিভিন্ন ধাতুর গয়না, নানা রঙিন পাথর, বিটসের গয়না তো রয়েছেই। বিভিন্ন শপিংমলে এমন সব গয়নার পসরা সাজিয়ে বসেছে স্টল। পুজোর আগে গয়নার সম্ভার গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত ষোলো থেকে ষাট, সকলেই। তাঁদের কথায়, ‘‘সোনার দাম চড়া বলে পুজোর সাজে তো খামতি রাখা যায় না!’’