ভোগান্তির ধর্মঘটে অশান্তি

ধর্মঘটের সমর্থনে রানিগঞ্জে ষাট নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে মিছিল করছিলেন সিপিএম নেতা-কর্মীরা। আচমকা দেখা গেল, কয়েক জন রড, লাঠি হাতে চড়াও হলেন মিছিলের উপর।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:০৫
Share:

ধর্মঘটে গোলমাল। শুক্রবার রানিগঞ্জে ওমপ্রকাশ সিংহের তোলা ছবি।

ধর্মঘটের সমর্থনে রানিগঞ্জে ষাট নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে মিছিল করছিলেন সিপিএম নেতা-কর্মীরা। আচমকা দেখা গেল, কয়েক জন রড, লাঠি হাতে চড়াও হলেন মিছিলের উপর।

Advertisement

চিত্র দুই: দুর্গাপুরে ভোর বেলা স্কুলের জামা-কাপড় পরে স্কুল বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল খুদের দল। কিন্তু স্কুল বাস বা পুলকার আসেনি। অগত্যা ফিরে যেতে হল বাড়ি।

চিত্র তিন: আসানসোল। রাস্তায় পর্যাপ্ত বাস থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর সংখ্যা কমতে শুরু করল। —শুক্রবার দেশব্যপী ধর্মঘটের দিন এমনই টুকরো টুকরো ছবি দেখা গেল শিল্পাঞ্চলে। বাসিন্দাদের দাবি, ধর্মঘটের জেরে দিনভর জনজীবনে মিশ্র প্রভাব পড়েছে। দু’-একটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত গোলমালের খবরও মিলেছে।

Advertisement

এ দিন বেলা সাড়ে ৮টা নাগাদ রানিগঞ্জের রাজবাড়ির কাছে তৃণমূল সিপিএমের মিছিলে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সিপিএম নেতা সঞ্জয় প্রামাণিকের দাবি, ‘‘তৃণমূল কর্মীরা লাঠি, রড হাতে আমাদের উপরে চড়াও হয়। হাতে চোট লেগেছে। আট জন কর্মী মার খেয়েছেন।।’’ রানিগঞ্জের সিপিএম বিধায়ক রুনু দত্তের দাবি, তৃণমূল জোর করে বাজার খোলা রাখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। যদিও তৃণমূলের রানিগঞ্জ শহর সভাপতি অলোক বসুর দাবি, ‘‘সিপিএম জোর করে দোকান বন্ধ করছিল। এখন অপপ্রচার করছে।’’

গোলমালের খবর মিলেছে জামুড়িয়ার নিমডাঙা প্রজেক্ট এলাকাতেও। সেখানে সিটু অনুমোদিত সিএমএসআই কার্যালয়ে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা চাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ। শিবপুর এলাকাতেও কার্যালয় দখলের চেষ্টা হয় বলে সিপিএমের অভিযোগ। তবে সেখানে দলের কর্মীরা প্রতিরোধ করেন বলে দাবি সিপিএম কাউন্সিলর তাপস কবির। যদিও ‘কার্যালয় দখলে’র কোনও চেষ্টা হয়নি বলে দাবি তৃণমূল নেতা সাধন রায়ের।

আসানসোলে ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল করতে চেয়ে সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বচসা বাধে পুলিশ আধিকারিকেরা।

যদিও আসানসোল-রানিগঞ্জের বেশ কিছু জায়গায় ধর্মঘটের বিরুদ্ধে পথে নামতে দেখা যায় শাসক দলের নেতা-কর্মীদের। যেমন, আসানসোল বাসস্ট্যান্ডে ভোর থেকেই মিনিবাস চলাচলের তদারকি করতে দেখা যায় তৃণমূলের পরিবহণ কর্মী সংগঠনের নেতা রাজু অহলুওয়ালিয়াকে। বেশ কয়েকটি জায়গায় মিছিলও করে তৃণমূল। তবে দুর্গাপুরে সে ভাবে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের পথে নামতে দেখা যায়নি।

শাসক দলের তদারকিতে আসানসোলে রাস্তায় বাস নামলেও দূরপাল্লার বাস কম চলেছে বলে খবর। যাত্রী সংখ্যাও ছিল বেশ কম। ধর্মঘটের কারণে আসানসোল, বার্নপুর বাজারেও বেশ কিছু দোকানপাট বন্ধ থাকতে দেখা যায়। তবে বরাকর বাজার, বারাবনি, সালানপুর, রূপনারায়ণপুর, অন্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর প্রভৃতি এলাকায় ধর্মঘটের তেমন প্রভাব দেখা যায়নি বলে দাবি বাসিন্দাদের। তবে ব্যবসায়ীদের মতে, ক্রেতার সংখ্যা কম ছিল দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারে।

তবে আসানসোলের মহকুমাশাসকের দফতর, দুর্গাপুরের বিভিন্ন সরকারি অফিসে কর্মী, আধিকারিকদের উপস্থিতি একেবারেই স্বাভাবিক ছিল বলে খবর। তবে আসানসোলে ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল। মূল ডাকঘরেও গ্রাহকের সংখ্যা ছিল বেশ কম। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার ডাকঘরে কর্মীর অভাবে কাজ হয়নি। দুর্গাপুর আদালতে চত্বরে শুধু আইনজীবীদেরই দেখা গিয়েছে।

এ দিন চূড়ান্ত ভোগান্তির মুখে পড়ে পড়ুয়ারা। দুর্গাপুরের প্রায় কোনও বেসরকারি স্কুলেরই পুলকার পথে নামেনি। বাধ্য হয়ে পড়ুয়ারা বাড়ি ফিরে গিয়েছে অথবা অভিভাবকেরা মোটরবাইক, গাড়িতে করে তাদের স্কুলে পৌঁছে দিয়েছেন। পর্যাপ্ত সংখ্যায় পড়ুয়ারা না আসায় প্রায় কোনও ক্লাসই পুরোপুরি হয়নি বলে খবর। একই ছবি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতেও। তবে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের উপস্থিতির হার ছিল স্বাভাবিক। একই ছবি দেখা গিয়েছে আসানসোলের বিভিন্ন স্কুল, কলেজেও।

ধর্মঘটের জেরে দুর্গাপুরের স্টেশন চত্বর প্রায় জনশূন্য ছিল। যাত্রী না মেলায় দুর্গাপুরে দুপুরের পরে বন্ধ হয়ে যায় মিনিবাস। সরকারি বাসগুলি প্রায় যাত্রী ছাড়াই চলেছে। অটোর সংখ্যাও ছিল কম। দুর্গাপুর স্টেশন থেকে ডিভিসি মোড় হয়ে সিটি সেন্টার ঢোকার মূল রাস্তাতেও অন্য দিনের পরিচিত ভিড়ের ছবিটা দেখা যায়নি। একই ছবি নজরে এসেছে ২ নম্বর জাতীয় সড়কেও। আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় জানান, আসানসোল মহকুমায় সাড়ে তিনশো মিনিবাস পথে নামলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ১২০টি বাস তুলে নেওয়া হয়।

ধর্মঘট সফল না ব্যর্থ, তা নিয়ে অবশ্য দিনভরই কাজিয়া দেখা গিয়েছে শাসক-বিরোধীতে। আইএনটিটিইউসি নেতা প্রভাত চট্টোপাধ্যায় থেকে তৃণমূল নেতা ভি শিবদাসনদের দিনভর বলতে শোনা গিয়েছে, ‘ধর্মঘট ব্যর্থ’, ‘বিরোধীরা শক্তিহীন’ ইত্যাদি। যদিও সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরীর দাবি, ‘‘হুমকি, আক্রমণ উপেক্ষা করে মানুষ ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন