বাড়ির গায়ে বিদ্যুৎ-লাইন, মৃত্যু ছাত্রের

সিটি সেন্টারের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের নবম শ্রেণির পড়ুয়া দেবজ্যোতি সেই সন্ধ্যায় গুরুদ্বার রোডে একটি কোচিং সেন্টারে টিউশন নিতে গিয়েছিল। একটি বাড়ির তিন তলায় ঘর ভাড়া নিয়ে কোচিং সেন্টারটি চলে। লাগোয়া বারান্দার পাশ দিয়ে গিয়েছে বিদ্যুতের লাইন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৭ ০১:৫২
Share:

এই বারান্দায় দাঁড়িয়েই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় দেবজ্যোতি। নিজস্ব চিত্র

কোচিং সেন্টারে পড়া শেষে বাবার জন্য অপেক্ষা করছিল নবম শ্রেণির ছাত্র। তিন তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে সামনে দিয়ে যাওয়া উচ্চ পরিবাহী বিদ্যুতের তার কোনও ভাবে ছুঁয়ে মৃত্যু হল তার। বুধবার রাতে দুর্গাপুরে বেনাচিতির গুরুদ্বার এলাকায় এই ঘটনার পরে জনবহুল অঞ্চলে বাড়ির গা ঘেঁষে বিদু্তের তার রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, দেবজ্যোতি ঘোষ (১৫) নামে ওই ছাত্রের বাড়ি কিলোমিটার খানেক দূরে জলখাবার গলি এলাকায়। সিটি সেন্টারের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের নবম শ্রেণির পড়ুয়া দেবজ্যোতি সেই সন্ধ্যায় গুরুদ্বার রোডে একটি কোচিং সেন্টারে টিউশন নিতে গিয়েছিল। একটি বাড়ির তিন তলায় ঘর ভাড়া নিয়ে কোচিং সেন্টারটি চলে। লাগোয়া বারান্দার পাশ দিয়ে গিয়েছে বিদ্যুতের লাইন। বাড়ির মালিক গুরুবক্স সিংহ জানান, তিনি প্রার্থনায় বসেছিলেন। হঠাৎ বিদ্যুতের লাইনে ‘স্পার্কিং’ দেখতে পান। বিদ্যুৎ চলে যায়। তিনি ছুটে গিয়ে দেখেন, বারান্দায় দেবজ্যোতি পড়ে রয়েছে।

কোচিং সেন্টারের শিক্ষিকা আলো সেন জানান, দেবজ্যোতিদের ক্লাস শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরের ক্লাস চলছিল। সহপাঠীরা চলে গেলেও বাবার অপেক্ষায় ছিল দেবজ্যোতি। তিনি জানান, দেবজ্যোতিকে ভিতরে বসতে বললেও সে বারান্দায় অপেক্ষা করবে বলে জানায়। আলোদেবী ব্যক্তিগত কাজে নীচে নামেন। বাড়ির মালিক তাঁকে ফোন করে ঘটনার কথা জানালে দৌড়ে যান। সেই সময়েই সেখানে পৌঁছন দেবজ্যোতির বাবা শুভাশিসবাবুও। তাঁরা তড়ঘ়়ড়ি একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে দেবজ্যোতিকে মৃত বলে জানান চিকিৎসকেরা।

Advertisement

বারান্দাটি থেকে ফুট দুয়েক দূর দিয়ে গিয়েছে উচ্চ পরিবাহী বিদ্যুতের লাইনটি। পুলিশের অনুমান, বারান্দার রেলিংয়ে উঠে হাত বাড়িয়ে কোনও ভাবে তারটি ছুঁয়ে ফেলে দেবজ্যোতি। তার পরেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বারান্দায় পড়ে যায় সে। দেহ ময়না-তদন্তে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

একমাত্র সন্তানের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন শুভাশিসবাবু। তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলে আর ফিরব না। কিন্তু আর যাতে কারও বিপদ না হয়, বিদ্যুৎ দফতর তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ করুক। এমন বিপজ্জনক ভাবে বাড়ির গা ঘেঁষে বিদ্যুতের লাইন থাকা অনুচিত।’’ দুর্গাপুর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক হরপ্রসাদ ঘোষাল বলেন, ‘‘বেনাচিতি জনবহুল এলাকা। তাই বিপদও বেশি। বিদ্যুতের লাইন ভূগর্ভস্থ হলে বিপদ কমবে।’’

পড়ে থাকা খোলা বিদ্যুতের তারে হাত না দেওয়ার জন্য রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার তরফে এসএমএস পাঠিয়ে সতর্ক করা হয়। কিন্তু বাড়ির গা ঘেঁষে যাওয়া এমন লাইনের বিপদ থেকে রেহাই মিলবে কী ভাবে? দফতরের এক আধিকারিক জানান, বাড়ি থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব ও উচ্চতা মেনেই লাইন নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পরে বাড়ি উঁচু ও সম্প্রসারণ করায় সমস্যা তৈরি হয়। তিনি বলেন, ‘‘ঘিঞ্জি এলাকায় মাটির নীচে লাইন নিয়ে যাওয়ার অসুবিধা রয়েছে। নতুন লাইন টানার সময়ে এখন খোলা তারের বদলে ‘ইনসুলেটেড কেব্‌ল’ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিপদ এড়াতে এবং বিদ্যুৎ চুরিতে লাগাম টানতে তা কার্যকরি।’’ পুরনো লাইনও ধাপে-ধাপে বদলে ফেলার প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে, জানান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন