ফের কবে গড়াবে চাকা। নিজস্ব চিত্র
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে দিন সন্ধ্যায় ‘জনতা কার্ফু’র ঘোষণা করলেন, সে দিনই পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেছিলাম। তবে সত্যি বলছি, পরিস্থিতি এতটা জটিল হবে এবং এত তাড়াতাড়ি সেটা হবে, বুঝতে পারিনি।
আমি থাকি দুর্গাপুরের রাতুড়িয়া হাউজ়িং কলোনিতে। বাড়িতে রয়েছেন মা প্রতিমাদেবী। তাঁর বয়স ৭৫ বছর পেরিয়েছে। রয়েছেন স্ত্রী মিতালি ও ছেলে প্রদীপ্ত। ছেলে এখন দুর্গাপুর সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া। আমি আদতে একটি বেসরকারি কারখানার ঠিকা শ্রমিক। শুধু কারখানার ঠিকা শ্রমিকের মজুরিতে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়। তাই কয়েকবছর আগে একটি অটো কিনি। অবসর সময়ে তা চালাই। কারখানার বেতন ও অটো থেকে আয়, দুই মিলে মোটের উপরে সংসার ঠিকঠাক চলছিল। হঠাৎ করোনার প্রকোপে সব হিসাব গোলমাল হয়ে গেল। কী যে হবে, বুঝতে পারছি না কিছুই!
‘জনতা কার্ফু’র দিন বাড়ি থেকে বেরোইনি। সে দিনই অনেকে বলাবলি করছিলেন, দেশে ‘লকডাউন’ হবে। ‘লকডাউন’ শব্দটা সে ভাবে আগে শুনিনি। কারখানার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ। ‘লকআউট’ শব্দটা চেনা। যাই হোক, ‘লকডাউন’ হলে কী-কী হতে পারে, তা নিয়ে এক-এক জন এক-এক রকমের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। আমি তখন ভেবেছি, কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে অটো চলবে ঠিক। কারণ, জরুরি দরকারে মানুষকে বেরোতেই হবে। জরুরি পরিষেবা চালু থাকবে যখন তখন পরিষেবা যাঁরা দেবেন, তাঁদের তো অফিসে বা কর্মস্থলে যেতে হবে!
রাজ্যে ২২ মার্চ বিকেল থেকে ‘লকডাউন’ চালু হয়ে গেল। সে দিন তেমন কিছু বুঝিনি। পরদিন সকাল থেকে হঠাৎ যেন সব থেমে গেল! কারখানায় যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। অটো নিয়ে বেরোতেই পুলিশ বলে দিল, অটো চলাচলও বন্ধ। বাড়ি ফিরে এলাম। তার পর থেকে আর বেরোইনি। মা, স্ত্রী, ছেলেকে নিয়ে তার পর থেকেই ঘরবন্দি। মাঝে এক দিন বাজারে গিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে এসেছি। বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ বলতে ওইটুকুই।
আপাতত রোজগার শেষ। কতদিন এই পরিস্থিতি থাকবে জানি না। আপাতত এপ্রিলের মাঝামাঝি। তার পরে পরিস্থিতি বিচার করে তা বাড়তেও পারে বলে মনে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কত দিন রোজগারহীন হয়ে থাকতে হবে জানি না। কী ভাবে সংসার চলবে ভেবে কূল পাচ্ছি না। এ দিকে, বাড়ছে মৃত্যু-ভয়। করোনার থাবা যে ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে নিশ্চিন্ত বোধ করতে পারছি না। সব মিলিয়ে বড় অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে।