সাপে কাটলে ডাক্তার দেখান, মেলায় পরামর্শ ওঝাদের

রায়নার গোপালপুরে মনসা পুজো উপলক্ষে প্রায় সত্তর বছর ধরে বসছে এই মেলা। দুই বর্ধমান ছাড়াও বাঁকুড়া, বীরভূম থেকে ওঝারা সাপ নিয়ে খেলা দেখাতে আসেন সেখানে।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

রায়না শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৭ ০২:০৮
Share:

রায়নার গোপালপুরে ঝাপান মেলায়। —নিজস্ব চিত্র।

সাপে কাটলে ওঝা নয়, যান ডাক্তারের কাছে— সাপের খেলা দেখতে মেলায় আসা লোকজনকে এমনই বোঝাচ্ছেন মেলার উদ্যোক্তারা। উদ্যোগে সামিল হয়েছেন কয়েকজন ওঝাও। পূর্ব বর্ধমানের রায়নার ঝাপান মেলায় দেওয়া হচ্ছে সচেতনতার এই বার্তা।

Advertisement

রায়নার গোপালপুরে মনসা পুজো উপলক্ষে প্রায় সত্তর বছর ধরে বসছে এই মেলা। দুই বর্ধমান ছাড়াও বাঁকুড়া, বীরভূম থেকে ওঝারা সাপ নিয়ে খেলা দেখাতে আসেন সেখানে। তাঁরা জানান, কয়েক বছর ধরেই মেলার উদ্যোক্তারা তাঁদের বুঝিয়েছেন, হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেলে সাপের বিষের প্রতিষেধক। তবু বছর-বছর সাপের ছোবলে মৃত্যু হয় অনেকের। ডাক্তারদের বক্তব্য, সংস্কারের বশে লোকে আক্রান্তকে নিয়ে আগে ওঝার কাছে যায়। পরে ওঝা কিছু করে উঠতে না পারলে হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছোটে। এই ছবি পাল্টাতেই তাঁরা চেষ্টা করছেন।

কিছু দিন আগে রায়নার গোতানে এক সাপে কাটা শিশুকে শ্যামলী ওঝার কাছে নিয়ে যান বাড়ির লোকজন। তিনি পত্রপাঠ হাসপাতালে পাঠান। বেঁচে যায় শিশুটি। শ্যামলী বলেন, ‘‘মন্ত্র পড়ে আমার আয় হতে পারে। রোগীর জীবন বাঁচবে সাপের ওষুধ পড়লে।’’ সায় দেন রতন। বলেন, ‘‘আমরা সাপের খেলা দেখিয়েও রোজগার করতে পারি। কিন্তু সাপে কাটা রোগীর জীবন বাঁচে ঠিক চিকিৎসায়।’’

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, দুই বর্ধমান জেলায় চলতি বছরেই সাপের ছোবলে প্রায় সাড়ে ন’শো জনের মৃত্যু হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই ওঝার কাছে ঘুরে পরিজনেরা শেষ মূহুর্তে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছেন সর্পদষ্টকে। তখন চিকিৎসার সুযোগ মেলেনি।

রায়নার এই মেলার অন্যতম উদ্যোক্তা অশোক সাঁতরা জানান, মেলায় সাপের খেলা দেখতে আসা লোকের ভিড় দেখে তাঁদের মাথায় কুসংস্কার রোখার কথা আসে। তিনি বলেন, “আমরা প্রথমে ওঝা-সাপুড়েদের বোঝাচ্ছি, মানুষের জীবন নিয়ে ঝুঁকি না নিতে। গ্রামবাসীদেরও কুসংস্কার থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছি।’’ পাশাপাশি, মেলাতে চলছে সাপ নিয়ে সচেতনতা-প্রচারও। সাপ দেখলেই মেরে না ফেলার বার্তাও দেওয়া হচ্ছে। সাপ যে বাস্তুতন্ত্রে ভারসাম্য বজায় রাখায় গুরুত্বপূর্ণ, বোঝানো হচ্ছে সে কথা।

পূর্ব বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, “এই উদ্যোগকে স্বাগত। প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই সাপে কাটা রোগীর জন্য ওষুধ থাকে। ঠিক সময়ের মধ্যে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাণে বাঁচানো সম্ভব।’’

(সহ-প্রতিবেদন: সুপ্রকাশ চৌধুরী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন