বয়স ভাঁড়িয়ে শিক্ষকতা করার অভিযোগে মেমারির বিদ্যাসাগর মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশনের (ইউনিট ১) এক শিক্ষককে অতিরিক্ত বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিল পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। অভিযোগ মেনেও নিয়েছেন ওই শিক্ষক।
মঙ্গলবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রশাসক কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় স্কুল কর্তৃপক্ষ, জেলা স্কুল পরিদর্শকের প্রতিনিধি ও অভিযুক্ত শিক্ষক শ্যামাপদ গায়েনের বক্তব্য শোনার পরে ওই নির্দেশ দেন। বুধবার জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) খগেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “মেমারির ওই শিক্ষককে যে ক’দিন বেশি শিক্ষকতা করছেন, সেই মতো সমস্ত বেতন ফেরত দিতে হবে। এ ছাড়াও অতিরিক্ত পিএফের টাকা সুদ সমেত ফেরত দিতে হবে।” আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সমস্ত টাকা ফেরত না দিলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ আইন মোতাবেক চরম ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে বলেও জানান মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রশাসক কল্যাণবাবু।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২১ জুন মেমারির বিদ্যাসাগর মেমোরিয়াল ইনস্টিটিশনে (ইউনিট ১) শারীরশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন শ্যামাপদবাবু। পরে স্নাতকোত্তর পাশ করে ১৯৯৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে ওই স্কুলেরই ভাষা-বিষয়ক শিক্ষক পদে যোগ দেন তিনি। ‘সার্ভিস বুক’ অনুযায়ী শ্যামাপদবাবুর জন্ম ১৯৫৭ সালের ২১ মার্চ। সেই হিসেব অনুযায়ী তাঁর অবসর নেওয়ার কথা ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ। কিন্তু মধ্যশিক্ষা পর্ষদের শংসাপত্র অনুযায়ী শ্যামাপদবাবুর জন্ম ১৯৫৩ সালের ২১ মার্চ। সেই হিসেবে তাঁর অবসর নেওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ। অথচ ‘সার্ভিস বুকে’ বয়স বাড়ানো থাকায় তিনি দিব্যি স্কুলে আসছিলেন। তাতে বাধ সাধেন ওই স্কুলে বছর পাঁচেক আগে যোগ দেওয়া প্রধান শিক্ষক কেশবকুমার ঘোষাল।
কী ভাবে? কেশববাবুর কথায়, “আমি স্কুলে যোগ দেওয়ার পরেই প্রবীণ শিক্ষকদের সার্ভিস বুক ঠিক করে রাখছিলাম। সেই মতো শ্যামাপদবাবুরও সার্ভিস বুক দেখে আসল নথিগুলি দেখাতে বলি তাঁকে। আসল নথি না দেখে সার্ভিস বুকে সই করব না বলে জানিয়ে দিই। তখনই ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়ে।” এরপরেই ওই প্রধান শিক্ষক ২০১৫ সালের ৭ অক্টোবর স্কুল পরিচালন সমিতির বৈঠক ডেকে পুরো বিষয়টি জানান। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়। ১৭ অক্টোবর শ্যামাপদবাবু জবাবে জানান, সার্ভিস বুক অনুযায়ী তাঁর জন্ম ১৯৫৭ সালের ওই দিনেই। তবে সার্ভিস বুক স্কুলের কাছেই থাকে। ফলে ওই তথ্যই ঠিক। এর আগে ওই বছরেরই ৩ অক্টোবর প্রধান শিক্ষকের একটি চিঠির জবাবে শ্যামাপদবাবু জানিয়েছিলেন, ‘বাড়ি বদলানোর সময় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অ্যাডমিট কার্ড তিনি হারিয়ে ফেলেছেন।’ এই চিঠি চালাচালির মধ্যেই গত বছরের ১৪ নভেম্বর থেকে প্রায় সাড়ে চার মাস স্কুলে আসেননি শ্যামাপদবাবু। তবে সপ্তাহ খানেক আগে কয়েকদিনের জন্য তিনি আসেন। সে সময় মেমারির ওই স্কুলের ভাষা-বিষয়ক শিক্ষক শ্যামাপদবাবু দাবি করেন, “বয়স ভাঁড়ানোর ব্যাপারটি কী করে সম্ভব হল বুঝতে পারছি না!’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ ‘সার্ভিস বুকে’ বয়স কমিয়ে রেখেছিল। কিন্তু সে আর প্রমাণ করা সম্ভব নয়।’’
তবে শ্যামাপদবাবুর বয়সের কিনারা করার জন্য অবশ্য ফেলুদা বা বোমক্যেশের কাছে যেতে হয়নি প্রধান শিক্ষককে। সরকারি নিয়ম মেনে কলানবগ্রামের এসআই হিমাদ্রিশেখর মাজিকে তদন্তকারী অফিসার হিসাবে নিয়োগ করেন তিনি। তদন্তে উঠে আসে ওই শিক্ষক বয়স ভাঁড়িয়েছেন। তদন্তের রিপোর্ট মোতাবেক, শ্যামাপদবাবু বয়স কমানোর কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন। এরপরে প্রধান শিক্ষক চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি ওই শিক্ষকের উপযুক্ত শাস্তি চেয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রশাসক কল্যাণবাবুকে চিঠি লেখেন। বুধবার শুনানির দিন ঠিক করেন কল্যাণবাবু। সেখানেও সমস্ত প্রতিনিধির সামনে দোষ স্বীকার করে নেন শ্যামাপদবাবু। এরপরেই ওই নির্দেশ দেোয়া হয় তাঁকে। শ্যামাপদবাবু বলেন, “১৫ দিনের মধ্যে ওই টাকা ফেরত দিয়ে দেব।” বর্ধমান জেলা শিক্ষকদের তৃণমূল সংগঠনের সভাপতি রথীন মল্লিক বলেন, “শিক্ষা দফতর কঠোর হাতে বিষয়টি দেখায় আমরা খুশি। আমরাও চাই, শিক্ষকেরা অন্যায় করেও যেন পার না পান। তাহলে তাঁরা পড়ুয়াদের শেখাবে কী?”