কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা করা হবে, আশ্বাস মন্ত্রীর

পঞ্চাশোর্ধ্ব কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর এবং দরকার পড়লে কর্মীদের অন্যত্র বদলি! রুগ্‌ণ রাজ্য সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা ‘দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের (ডিপিএলে) হাল ফেরাতে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের এমন প্রস্তাবে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সংস্থার কর্মী মহলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদাদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৭:৩০
Share:

শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।

ডিপিএলের কর্মীদের স্বার্থ সবরকমভাবে রক্ষা করা হবে বলে আশ্বাস দিলেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ডিপিএল থাকবে। এত দিনের পুরনো সংস্থা অস্তিত্বহীন হবে না। বরং, ডিপিএলের উৎপাদন আরও বাড়ানো হবে। সংবহন ব্যবস্থার উন্নতি হবে। কর্মীদের স্বার্থ সরকার সবদিক থেকে রক্ষা করবে।’’

Advertisement

পঞ্চাশোর্ধ্ব কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর এবং দরকার পড়লে কর্মীদের অন্যত্র বদলি! রুগ্‌ণ রাজ্য সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা ‘দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের (ডিপিএলে) হাল ফেরাতে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের এমন প্রস্তাবে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সংস্থার কর্মী মহলে। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ২০০৩ সালের নতুন বিদ্যুৎ আইন অনুযায়ী, ডিপিএলের পুনর্গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ দফতরের প্রস্তাব অনুযায়ী, রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের অধীনস্ত সংস্থা হিসেবে পরিণত হবে ছয় দশকের পুরনো সংস্থা ডিপিএল। ডিপিএলের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা রাজ্য সরকারি সংস্থা রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ও বিদ্যুৎ সংবহন সংস্থার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে। সংস্থার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পঞ্চাশোর্ধ্ব কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে সামিল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিদ্যুৎ দফতর। বাকি কর্মীদের দরকার অনুযায়ী বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে বদলি করার সিদ্ধান্তের কথাও জানানো হয়েছে।

দুর্গাপুর ও সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন শিল্পসংস্থা ও গৃহস্থালির বিদ্যুতের জোগান দিতে ১৯৬০ সালে ডিপিএল গড়ে তোলে রাজ্য সরকার। এখন দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৬৫০ মেগাওয়াট। গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৬৩ হাজার। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ তুলনামূলক বেশি। এক সময়ে লাভজনক কোকআভেন প্ল্যান্টও বন্ধ হয়ে পড়ে আছে বছর দু’য়েক ধরে। বছরে গড়ে দু’শো কোটি টাকা হারে লোকশান করে চলেছে বলে দাবি ডিপিএলের। এ ছাড়া সুদ-আসল মিলিয়ে ঋণ বাকি আছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার। এমন এক সংস্থার পুনর্গঠনে কর্মী সংখ্যা কমাতে স্বেচ্ছাবসর বা বদলির মতো কিছু কড়া সিদ্ধান্ত নিতেই হবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের মত।

Advertisement

সোমবার বিদ্যুৎ দফতরের স্বেচ্ছাবসর ও বদলি সংক্রান্ত নির্দেশিকা হাতে পাওয়ার পরেই অনিশ্চয়তায় ভুগতে শুরু করেছেন ডিপিএলের কর্মীরা। স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ২৭২৯ জন। অধিকাংশই পঞ্চাশোর্ধ্ব। তাঁদের কারও ছেলের পড়াশোনা শেষ হয়নি। কারও মেয়ের বিয়ে হয়নি। অনেকের নিজস্ব বাড়ি নেই। ডিপিএলের আবাসনে থাকেন। চাকরি চলে গেলে আবাসনও ছাড়তে হবে। আবার বদলি করে দিলেও আবাসন ছেড়ে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে নতুন জায়গায় ছুটতে হবে। মন্ত্রী বলেন, ‘‘স্বেচ্ছাবসর যাঁরা নেবেন, তাঁদের স্বার্থ সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করবে রাজ্য সরকার। কেউ বদলি হলে নতুন জায়গাতেও তাঁকে আবাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। তা ছাড়া, বদলির ক্ষেত্রে দুর্গাপুর সংলগ্ন এলাকাতেই পাঠানোর চেষ্টা করা হবে। বহু দূরে নয়।’’ প্রায় দেড় হাজার ঠিকা শ্রমিক কাজ করেন ডিপিএলে। মন্ত্রী বলেন, ‘‘ঠিকা শ্রমিকদের আরও বেশি করে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে।’’

নতুন ব্যবস্থায় ডিপিএলের ওয়াটার ওয়ার্কস, হাসপাতালের মতো বিভাগগুলির দায়িত্ব কে নেবে? আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাস বলেন, ‘‘এই সব দফতরের ভবিষ্যৎ কী তা জানতে চিঠি দিয়েছি বিদ্যুৎ মন্ত্রীকে।’’ বিদ্যুৎমন্ত্রী জানান, এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিছু হয়নি। তবে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন