অভাব টপকে সফল চম্পারা

মানকর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী নিবেদিতা পাল এ বার উচ্চমাধ্যমিকে ৪৪৯ নম্বর পেয়েছে। নিবেদিতার বাবা বিশ্বজিৎবাবু পেশায় দর্জি। ঘরের বড় মেয়ে পম্পা টিউশন করেন, সংসারে কিছু টাকা দিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর ও বুদবুদ শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৭ ০০:০৩
Share:

নিবেদিতা পাল ও চম্পা মণ্ডল।

কেউ দিনমজুরি করেন। কেউ বা আবার নাগাড়ে সেলাই মেশিন চালিয়ে মেয়েকে পড়িয়েছেন। অভাবের সেই সংসারগুলিতে উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল করে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাল ছেলেমেয়েরা। এ বার তাদের চোখ উচ্চশিক্ষায়। কিন্তু অভিভাবকদের একটাই চিন্তা, অভাব ছেলেমেয়ের পড়াশোনায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তো।

Advertisement

মানকর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী নিবেদিতা পাল এ বার উচ্চমাধ্যমিকে ৪৪৯ নম্বর পেয়েছে। নিবেদিতার বাবা বিশ্বজিৎবাবু পেশায় দর্জি। ঘরের বড় মেয়ে পম্পা টিউশন করেন, সংসারে কিছু টাকা দিতে। নিবেদিতার এ বার লক্ষ্য, অঙ্ক বা রসায়ন নিয়ে উচ্চশিক্ষা করা। তবে পড়াশোনার পাশাপাশি দ্রুত কোনও চাকরির চেষ্টা করতে হবে, মার্কশিট হাতে নিয়েই এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে চলে সে। তবে এই স্বপ্নে বাধাও যে রয়েছে, তা জানেন পাল পরিবারের সদস্যরা। নিবেদিতার দিদি পম্পা বলেন, ‘‘উচ্চ শিক্ষায় খরচ বাড়বে। ভবিষ্যতে সব দিক সামলানোটা সত্যিই কঠিন।’’ সারা বছর নিয়ম করে পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে নিবেদিতা ডুব দিয়েছে গল্পের বইয়েও। প্রিয় লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।

কসবা রাধারানি বিদ্যামন্দিরের কলা বিভাগের ছাত্রী চম্পা মণ্ডল। উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছে ৪১০। তার বাবা-মা দু’জনেই দিনমজুর। চম্পা-সহ মোট তিন সন্তানকে নিয়ে অভাবের সংসার রাজেন্দ্রনাথবাবু ও তাঁর স্ত্রী নীলিমাদেবীর। দু’জনেই বলেন, ‘‘মেয়ের পড়াশোনায় খুব মন। আরও পড়াতে হবে মেয়েকে।’’ ইংরেজি নিয়ে উচ্চ শিক্ষা করার ইচ্ছে থাকলেও নার্সিং ট্রেনিং নেওয়াই আপাতত লক্ষ্য চম্পার। তার কথায়, ‘‘বাবা-মা অনেক কষ্ট করেছেন। আমি দ্রুত বাবা-মা’র পাশে দাঁড়াতে চাই।’’ অবসরে বাংলা-হিন্দি গান শোনা চম্পার অনেক দিনের অভ্যাস।

Advertisement

বাড়ির অবস্থা ভাল নয় দুর্গাপুরের শোভাপুরের বাসিন্দা শিবশঙ্কর দত্তেরও। দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের বিজড়া হাইস্কুল থেকে শিবশঙ্কর এ বারের মাধ্যমিকে ৪৮৭ নম্বর পেয়েছে সে। তার বাবা দেবাশিসবাবু কাঠের মিস্ত্রি। কাজ করেন করাত কলে। কলা বিভাগে পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চায় শিবশঙ্কর। দেবাশিসবাবুর আশঙ্কা, ‘‘জানি না শেষ পর্যন্ত কত দূর পড়াতে পারব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন