দশরথ বাগদি। নিজস্ব চিত্র
নদীর পাড় থেকে কচি গলায় ভেসে আসছে ‘বাঁচাও, বাঁচাও’। সাইকেল নিয়ে ওই পাড় ঝরেই বাড়ি ফিরছিলেন মৎস্যচাষি দশরথ বাগদি। চিৎকার কানে যেতেই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন, চার জন ছেলে-মেয়ে জলে হাবুডুবু খাচ্ছে। মুহূর্তে জলে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। বাঁচিয়েও ফেলেন তিন কিশোরকে।
তবে তিন জনকে বাঁচালেও আক্ষেপ যাচ্ছে না দশরথবাবুর। রবিবার দুপুরে গলসির দামোদরের বালিখাদে ওই ঘটনার ঘটে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেও গোহগ্রামের বাড়ির দাওয়ায় তিনি বলে যাচ্ছেন, ‘‘ইস্, আর একটু সময় পেলে মেয়েটিকেও বাঁচানো যেত। চোখের সামনে তলিয়ে গেল ফুটফুটে মেয়েটা।”
এ দিন দুপুরে দামোদরে স্নান করতে নেমে তলিয়ে যায় পাঁচ কিশোর-কিশোরী। সৌভিক মণ্ডল নামে স্থানীয় অষ্টম শ্রেণির এক পড়ুয়া ও অপর্ণা ঘোষ নামে আর এক জনকে প্রাণে বাঁচানো যায়নি। অপর্ণা পরিবারের সঙ্গে গোবডালে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। তবে বেঁচে গিয়েছে তার দাদা মানব ঘোষ, রানা মণ্ডল ও রাজ ঘোষ।
গোহগ্রাম থেকে কিছুটা দূরে দামোদরে ধারে গোবডাল গ্রাম। ওই নদীর ধারে বালিখাদ রয়েছে। বেআইনিভাবে বালি তোলারও অভিযোগ রয়েছে। দশরথবাবু কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ওই মেয়েটির মত আমারও একটি মেয়ে আছে। সে জন্য বুকটা যেন ফেটে যাচ্ছে।” দশরথবাবুর বাড়িতে আছেন স্ত্রী প্রতিমাদেবী ও তাঁর ছেলে-মেয়ে। দশরথবাবুর কথায়, “সাইকেলে করে আমি ও বিশু বাগদি বাড়ি ফিরছিলাম। এমন সময় বাঁচাও, বাঁচাও চিৎকার শুনে দেখি চারজন হাবুডুবু খাচ্ছে। সবাই আমার ছেলে-মেয়ের বয়সের। সে জন্য কোনও চিন্তা না করে ঝাঁপিয়ে পড়ি।”
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাইকেল ফেলে রেখে বেশ কিছুটা বালির উপর দিয়ে ছুটে গিয়ে জলে ঝাঁপ দেন দরশথ। তারপর সাঁতার কেটে হাত ও চুলের মুঠি ধরে এক এক করে ওই তিন জনকে উদ্ধার করেন। গলসি থানা ও স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁর এই সাহসী কাজের জন্য প্রশংসা করছেন।
দশরথবাবুর স্ত্রী প্রতিমাদেবী বলেন, “ও নিজের কথা না ভেবে যে ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তাতে গর্বে বুক ভরে উঠছে। আরেকজনকে বাঁচাতে পারলে ভাল লাগত, কিন্তু কী আর করা যাবে।”