তৃণমূলের দ্বন্দ্বে সংশয় জল প্রকল্পের কাজে

জলের সঙ্কটে ভুগতে হয় বছর-বছর। কেন্দ্রের একটি বড় প্রকল্প অনুমোদন পাওয়ার পরেও পুরসভা সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ফিরে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন জলপ্রকল্পের উদ্যোগে সামান্য হলেও স্বস্তি পেয়েছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে সেই প্রকল্পের কাজ শুরু করা নিয়েই সংশয় তৈরি হল কুলটির বড়িরা এলাকায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কুলটি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৬ ০২:১৫
Share:

কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনা করে দিলেন বাসিন্দারাই। নিজস্ব চিত্র।

জলের সঙ্কটে ভুগতে হয় বছর-বছর। কেন্দ্রের একটি বড় প্রকল্প অনুমোদন পাওয়ার পরেও পুরসভা সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ফিরে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন জলপ্রকল্পের উদ্যোগে সামান্য হলেও স্বস্তি পেয়েছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে সেই প্রকল্পের কাজ শুরু করা নিয়েই সংশয় তৈরি হল কুলটির বড়িরা এলাকায়। মঙ্গলবার শেষমেশ গ্রামবাসীরাই সেই প্রকল্পের সূচনা করেন। তবে শাসক দলের কোন্দলে জরুরি এই প্রকল্পের কাজ ফের বাধা পাবে কি না, সে নিয়ে আতঙ্কে তাঁরা।

Advertisement

আসানসোলের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে কুলটির বড়িরা গ্রামে এই নতুন জল প্রকল্প তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভা সুত্রে জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা বিসিসিএলের আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পটি তৈরি করা হবে। বড়িরা গ্রাম লাগোয়া বামনা খনি এলাকায় বহু পুরনো একটি জলভর্তি পরিত্যক্ত খোলামুখ খনি আছে। সেখান থেকে জল সাবমার্সিবল পাম্পের সাহায্যে তুলে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পুরসভার আধিকারিকেরা জানান, পাম্প, পাইপ-সহ যাবতীয় সরঞ্জাম মিলবে বিসিসিএলের সামাজিক দায়িত্ব পালন কর্মসূচির তহবিল থেকে। পাইপলাইন বিছিয়ে এলাকায় জল সরবরাহের কাজটি করে দেবে পুরসভা। মঙ্গলবার সকালে তারই আনুষ্ঠানিক সূচনার কথা ছিল। সেই মতো সমস্ত আয়োজন পাকা করে রেখেছিলেন গ্রামবাসীরা।

এ দিনের অনুষ্ঠানে থাকার কথা ছিল পুরসভার জল দফতরের মেয়র পারিষদ পূর্ণশশী রায়ের। ঠিক ছিল, তিনিই এই প্রকল্পের কাজের সূচনা করবেন। কিন্তু গোল বাধল অনুষ্ঠান শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে। গ্রামের কয়েক জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক অভিযোগ করেন, দলেরই কিছু লোকজন হঠাৎ স্থানীয় বিধায়ককে কেন এই অনুষ্ঠানে ডাকা হয়নি, প্রশ্ন তুলে প্রকাশ্যে চেঁচামেচি শুরু করে। বিধায়ককে না ডাকায় এ দিনের কর্মসূচি বাতিল করতে হবে বলেও দাবি করে তারা। এ নিয়ে তৃণমূলের অন্য একটি গোষ্ঠী বিধায়ক-অনুগামীদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ে। এলাকায় অশান্তি তৈরি হয়।

Advertisement

কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি কেন? ওই এলাকার তৃণমূল নেতা বাবন মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘বিধায়ককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু যেহেতু এই প্রকল্পটি রূপায়ণের ক্ষেত্রে বিধায়কের কোনও পরামর্শ নেওয়া হয়নি, তাই অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগে প্রকল্পটি ভণ্ডুল করে দিতেই এই চক্রান্ত করা হচ্ছে।’’ তৃণমূলের কুলটি ব্লক সভাপতি মহেশ্বর মুখোপাধ্যায় আবার বলেন, ‘‘বিধায়ককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু তাঁর কিছু কাজ থাকায় এ দিন উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে আগাম জানিয়েছিলেন। এ দিন কী কারণে বিবাদ বাধল, বলতে পারব না।’’

এই গোলমালের পরে পুরসভার তরফে কেউ জলপ্রকল্পের কাজের সূচনায় হাজির হননি। তবে সে জন্য গ্রামবাসীরা থেমে থাকেননি। তাঁরা কাঁসর-ঘণ্টা নিয়ে অনুষ্ঠান সেরে ফেলেন। বাসিন্দারা দাবি করেন, পাইপলাইন বিছিয়ে জল সরবরাহের কাজটি করার জন্য যে টাকা খরচ করার কথা তা পুরসভার তরফে না দেওয়া হলে তাঁরাই চাঁদা তুলে কাজ করবেন। স্থানীয় বাসিন্দা দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, কালোসোনা পালেরা বলেন, ‘‘আমরা চরম জলসঙ্কটে ভুগছি। প্রতি বছর গরমে জল জোগাড় করতে নাভিশ্বাস উঠে যায়। বিসিসিএল সহযোগিতা করবে। বাকি কাজ পুরসভা না করলে আমরা নিজেরাই ব্যবস্থা করে নেব।’’ এলাকাবাসী জানান, প্রকল্পটি হলে উপকৃত হবেন প্রায় পাঁচ হাজার বাসিন্দা। কিন্তু তৃণমূলের কোন্দলে কাজ ফের বাধা পাবে কি না, সেই আশঙ্কাতেই রয়েছেন তাঁরা।

বিধায়ক উজ্জ্বলবাবুর সঙ্গে ফোনে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। কেন এ দিন তিনি ওই অনুষ্ঠানে গেলেন না, সে ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি পুরসভার জল দফতরের মেয়র পারিষদ পূর্ণশশীবাবু। তবে মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘‘ত্রুটি একটা হয়েছে বুঝেছি। কোথায় ত্রুটি তা খুঁজে বের করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন