বোর্ড হাতে, তবু ক্ষোভ তৃণমূলে

বোর্ড গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও সম্মানের লড়াইয়ে জিততে পারল না তৃণমূল। প্রচার পর্ব জুড়ে যেখানে ১৬-০ ফলেরই দাবি করছিলেন তৃণমূলের প্রার্থীরা, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব-দুনীর্তির নানা অভিযোগ সত্ত্বেও যেখানে বারবার উন্নয়নের ধ্বজা উঁচিয়ে মানুষ তাঁদেরই ভোট দেবেন বলে দাবি করা হয়েছিল, সেখানে আগের বারের নিরিখে আসন তো কমলই, ফাঁকতালে বহু দিন পরে এক সময়ের ঘরের মাঠে ২টি হলেও আসন পেল সিপিএম।

Advertisement

রানা সেনগুপ্ত

মেমারি শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০১:২৮
Share:

মেমারিতে উল্লাস তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের। —নিজস্ব চিত্র।

বোর্ড গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও সম্মানের লড়াইয়ে জিততে পারল না তৃণমূল।

Advertisement

প্রচার পর্ব জুড়ে যেখানে ১৬-০ ফলেরই দাবি করছিলেন তৃণমূলের প্রার্থীরা, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব-দুনীর্তির নানা অভিযোগ সত্ত্বেও যেখানে বারবার উন্নয়নের ধ্বজা উঁচিয়ে মানুষ তাঁদেরই ভোট দেবেন বলে দাবি করা হয়েছিল, সেখানে আগের বারের নিরিখে আসন তো কমলই, ফাঁকতালে বহু দিন পরে এক সময়ের ঘরের মাঠে ২টি হলেও আসন পেল সিপিএম।

২০১০ সালে এই পুরসভায় ১৬টি আসনই জিতেছিল তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। তার মধ্যে তৃণমূলের প্রাপ্তি ছিল ১২টি, কংগ্রেসের ৪টি। ভোটের কিছুদিন পরে অবশ্য ওই চার কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। ফল হয় ১৬-০। এ বার সেখানে জোট ছাড়া লড়ে তৃণমূল পেয়েছে ১১টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছে ১টি। গত পুরভোটে শিকে না ছিঁড়লেও এ বার সিপিএম পেয়েছে ২টি আসন। ২টি আসন গিয়েছে অন্যান্যদের দখলেও। আর ফল ঘোষণার পরেই কিছুটা বদলে গিয়েছে তৃণমূলের সুর। ১৬-০ আসনে জেতার প্রচার বদলে হয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকারের ঘোষণা। তৃণমূলের বিদায়ী পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ী যেমন জয়োল্লাসে মাতার ফাঁকেই বলেন, ‘‘বিরোধীরা আসন পাওয়া মানে মেমারিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট হয়েছে। মানুষ যাঁকে চেয়েছেন, তিনিই জিতেছেন। তাই সিপিএম, কংগ্রেস এমনকী নির্দলেরাও জিতেছেন।”

Advertisement


মেমারিতে তৃণমূল জেতার পর গত বোর্ডের পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ীর উচ্ছ্বাস। ছবি: উদিত সিংহ।

গত বার মেমারি পুরসভা ৩, ১০, ১৩ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস জিতেছিল। এর মধ্যে একমাত্র ৩ নম্বর ওয়ার্ডেই কিছুটা লড়াই দিতে পেরেছে কংগ্রেস। এই ওয়ার্ডের প্রার্থী আবু হোসেন মহম্মদ পেয়েছেন ৫৯২টি ভোট। তবে ৬১২টি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন সিপিএম প্রার্থী নিয়াজুদ্দিন শেখ। আর তৃতীয় স্থানে থাকা তৃণমূলের প্রতিমা বসাকের প্রাপ্তি ৩০৯টি ভোট। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের গত বারের কংগ্রেস প্রার্থী সুপ্রিয় সামন্ত এ বার তৃণমূলের হয়ে ভোটে দাঁড়ান। ওই ওয়ার্ডে ১১২২ ভোট পেয়ে জিতেছেন তিনি। কংগ্রেসের মহসিন শেখ পেয়েছেন ১৫১টি ভোট। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডটিও কংগ্রেসের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। ওই ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী অভিজিত কোঙার পেয়েছেন ৩৬০টি ভোট। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডেও তৃণমূল প্রার্থী আশাদউদ্দিন মহম্মদ জিতেছেন ৭৭২ ভোট পেয়ে। মেমারিতে কংগ্রেসের একমাত্র জয়ী প্রার্থী শ্যামল সরকার। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলার স্বপনকুমার ঘোষালকে হারিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের বিদায়ী উপপুরপ্রধান হোসেনারা খাতুনও হেরে গিয়েছেন। জিতেছেন নির্দল প্রার্থী আলেয়া বেগম। আবার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডেও তৃণমূলকে হারিয়ে জিতেছেন কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল প্রার্থী রঞ্জিত বাগ। তিনি পেয়েছেন ৯৪০টি ভোট।

তৃণমূল কর্মীরা জয়োল্লাসে মেতেছেন ঠিকই, কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কাঁটার খচখচানি যাচ্ছে না অনেকেরই। নির্দল হিসেবে যে দু’জন জয়ী হয়েছেন সেই আলেয়া বেগম ও রঞ্জিত বাগের নাম তৃণমূলের প্রথম তালিকায় ছিল। পরে বাদ পড়ে তাঁরা নির্দল হিসেবে প্রতীক নেন। পরাজিত প্রার্থীদের দাবি, দলের একাংশের মদত ছিল বলেই ওই নির্দলেরা জিতেছেন। পরাজিত হোসেনারা খাতুন তো ভোটের দিন প্রকাশ্যেই দলের অসহযোগিতার কারণে প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করে নিতে চেয়েছিলেন। পরাজিত প্রার্থী, যিনি বিদায়ী পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছিলেন সেই স্বপন ঘোষলাও এ দিন বলেন, ‘‘আমার হারার পিছনে দলের একাংশের ষড়যন্ত্র রয়েছে। গত বার ওই ৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল ৭৮৮ আর কংগ্রেস মাত্র ৫২টি ভোট পেয়েছিল। কিন্তু এ বার আমাদের দলের একাংশের মদতেই কংগ্রেস ওই ওয়ার্ডে ৮২৮ ভোট পেয়েছে।”

যদিও এ নিয়ে বিদায়ী পুরপ্রধান তথা জয়ী প্রার্থী স্বপন বিষয়ীর বক্তব্য, ‘‘মানুষ ওঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। ওঁর হারের দায় আমরা নেব না।” আর গোঁজ প্রার্থীদের জয় নিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘মেমারিতে আমাদের কোনও গোঁজ প্রার্থী ছিল না। তবে হোসেনারার হারের কারণ কী, তা দলের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন