কালনায় তৃণমূলের সভায় সোহমের সঙ্গে মন্ত্রী, সাংসদ । নিজস্ব চিত্র।
বিজেপির কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এলে দলের মহিলা এবং বঙ্গজননীর মেয়েরা তাঁদের ‘ঝাঁটাপেটা’ করবে, নিদান দিলেন বারাসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। বুধবার কালনা নতুন বাসস্ট্যান্ডে দলীয় সভায় তাঁর এই মন্তব্যে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিজেপির দাবি, ভয় পেয়ে শালীনতার মাত্রা ছাড়াচ্ছেন তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা।
এ দিন নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকেও কটাক্ষ করেন কাকলিদেবী। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এখানে এসে এক জন মিথ্যাচার করে গিয়েছেন, ‘সাংসদ বাবা আমার কাজ করতে পারেননি। সাংসদ ভাই কাজ করতে পারেননি’। কেন? আসলে ১৭টি হোটেল, ৭০টি ট্রলার নামে-বেনামে বিভিন্ন রকমের ব্যবসা, সেগুলো দেখতে সময় গিয়েছে বলেই তৃণমূলে কাজ করতে পারেনি।’’ দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘তিনি যদি আবার আসেন বলবেন, দাদা ৩৫টা দফতর আপনাকে দেখতে দেওয়া হয়েছিল। একটাও দেখতে পারেননি। ওখানে আপনাকে পিছনের সারিতেই রেখে দেবে।’’ মুকুল রায়কেও আক্রমণ করেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে রেলমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় জনতা পার্টিতে তিনি লাট খাচ্ছেন। নেতাদের চেয়ার পরিষ্কার করছেন।’’
দু’দিন আগে এই এলাকাতেই সভা করেছিল বিজেপি। তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, ফাঁকা মাঠে সভা করতে হচ্ছে বিজেপিকে। এ দিন তাঁদের সভায় তিরিশ হাজার লোক এসেছিলেন বলে দাবি করেন রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র দেবু টুডু। যদিও পুলিশের দাবি, ১৫ হাজার মতো লোক এসেছিলেন সভায়। কেন্দ্রীয় কৃষি আইনের প্রতিবাদে সভায় ছিলেন প্রদেশ যুব তৃণমূল সহ-সভাপতি সোহম চক্রবর্তী, মন্ত্রী তথা দলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ, জেলা যুব সভাপতি রাসবিহারী হালদার, কালনা শহর সভাপতি দেবপ্রসাদ বাগ, কালনা ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায়েরাও। বিজেপির তফসিলি মোর্চার সহ সভাপতি ধনঞ্জয় হালদারের দাবি, ‘‘বাসস্ট্যান্ডের ছোট্ট জায়গায় সভা করেছে তৃণমূল। যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের নানা কাজ, সুবিধা দেওয়ার টোপ দিয়ে আনা হয়েছে। সবার ভোট তৃণমূল পাবে না।’’
বিজেপির সভায় শুভেন্দুবাবু চাল কেনা নিয়ে চালকল মালিকদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের আঁতাঁতের অভিযোগ করেছিলেন। এ দিন কাকলিদেবী বলেন, ‘‘বর্ধমান জেলা চাল উৎপাদনের বড় জায়গা। ফুড কপোর্রেশন অফ ইন্ডিয়া উত্তরপ্রদেশ থেকে ৭৩ লক্ষ টন চাল কেনে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেনে মাত্র ৭৬ হাজার টন। বর্ধমানের চাষিদের যাতে অসুবিধা না হয়, তার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহায়ক মূল্যে চাল কিনে বিনামূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করেছেন।’’
সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুকে কড়া আক্রমণ করেন কালনা ২ ব্লক সভাপতি প্রণববাবু। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের ভোটে উনি বিধায়ক হয়েছেন। অথচ, কম্বল, ত্রিপল বিজেপির হাত দিয়ে দেওয়াচ্ছেন। উনি বলেছেন ‘কংগ্রেস ছেড়ে যাঁরা তৃণমূলে এসেছেন, তাঁরা গদ্দার’। ওঁকে বলতে চাই, আমরা গাঁধীবাদের দল থেকে গাঁধীবাদের দলেই এসেছি। নাথুরাম গডসের দলে যাইনি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ওঁকে বিশ্বাস করবেন না, টিকিট পাওয়ার লোভে শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপিতে গিয়েছেন। উনি বিধায়ক হতে পারবেন না। তবে মানুষ যদি ভুলক্রমে ভোট দিয়ে বিধায়ক করে দেন, জনগণ কিছু পাবে না।’’ ‘টেট’ পরীক্ষায় বিধায়ক আত্মীয়দের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
যদিও বিধায়কের দাবি, ‘‘আগের সভাতেই তৃণমূল থেকে কোন নেতা-নেত্রী চাকরি পেয়েছেন জানিয়েছিলাম। এ বার তালিকা হাতে নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে দেখাব।’’ ‘‘প্রণববাবুরা হেরে যাওয়ার ভয়ে ভুল বকছেন’’ , বলে পাল্টা দাবি করেন তিনিও। তবে শহরে সভা হলেও শহর সভাপতিকে বক্তব্য রাখতে না দেওয়ায় ক্ষোভ দেখা যায় অনুগামীদের মধ্যে। দেবপ্রসাদবাবু অবশ্য কিছু বলতে চাননি।