মায়ের অসুখ সারাতেই ডাক্তার হতে চায় ঋত্বিক

ছোট থেকে মাকে অসুখে ভুগতে দেখেছে সে। তখন থেকেই সে বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়, বের করতে চায় মাকে সারিয়ে তোলার উপায়। সেই স্বপ্নপূরণের পথে একটা ধাপ পার হল— মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর পরে মনে করছে আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র ঋত্বিক মণ্ডল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৬ ০১:২০
Share:

ফল জানার পরে মায়ের সঙ্গে মাধ্যমিকে দশম আসানসোলের ঋত্বিক মণ্ডল। ছবি: শৈলেন সরকার।

ছোট থেকে মাকে অসুখে ভুগতে দেখেছে সে। তখন থেকেই সে বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়, বের করতে চায় মাকে সারিয়ে তোলার উপায়। সেই স্বপ্নপূরণের পথে একটা ধাপ পার হল— মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর পরে মনে করছে আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র ঋত্বিক মণ্ডল। ৬৭৪ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় দশম স্থানে রয়েছে তার নাম। চিকিৎসক হওয়াকে পাখির চোখ করেছে ৬৭১ নম্বর পেয়ে দুর্গাপুর মহকুমায় সম্ভাব্য প্রথম ইন্দ্রনীল পালও।

Advertisement

ঋত্বিকের বাবা সন্দীপ মণ্ডল ইসিএলের কোয়ারডি কোলিয়ারিতে কাজ করেন। তাঁদের বাড়ি রানিগঞ্জের চেলোদে। এ দিন সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পড়শিরা ভিড় জমিয়েছেন। টিভি দেখেই প্রথমে খবরটা পান সকলে। ঋত্বিক বলে, ‘‘ভাল ফল হবে, সেটা আশা করেছিলাম। তবে এতটা ভাল হবে বুঝতে পারিনি।’’ সে জানায়, সকাল থেকেই বাড়িতে টিভি চালিয়ে রাখা হয়েছিল। সে দিকে চোখ রাখার ফাঁকেই স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। হঠাৎ নিজের নাম দেখতে পেয়ে চমকে ওঠে। ঘোর কাটতে সময় লেগেছে বেশ খানিকক্ষণ। কিন্তু তার মধ্যেই সহপাঠীদের ফোন আসতে শুরু করে। ঋত্বিক বলে, ‘‘অনেক ক্ষণ বিশ্বাসই হচ্ছিল না, আমার নাম মেধাতালিকায়!’’

তাড়াতাড়ি কর্মস্থল থেকে ফিরে আসেন সন্দীপবাবু। ছেলের ফলে তিনি খুশি। ঋত্বিকের মা প্রতিভাদেবী অবশ্য বলেন, ‘‘আর একটু ভাল হবে ভেবেছিলাম।’’ এর মধ্যেই ছেলেকে কাছে টেনে মিষ্টি খাইয়ে দেন তিনি। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ভক্ত ঋত্বিক গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলে। সে জানায়, দিনে ঘণ্টা পাঁচেক পড়াশোনা করত। তার দাদু মানিক মণ্ডল চেলোদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ঋত্বিক বলে, ‘‘দাদু সব ব্যাপারে বন্ধুর মতো সাহায্য করে।” মানিকবাবু বলেন, “মাধ্যমিকের সাফল্য যাতে বজায় থাকে সেই চেষ্টা করে যেতে বলব ওকে।”

Advertisement

দুর্গাপুরের এমএএমসি টাউনশিপ হাইস্কুলে ফল দেখতে ব্যস্ত পড়ুয়ারা।
(ডানি দিকে) লাউদোহার ইন্দ্রনীল পাল। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

পরিবারের লোকজন জানান, আপাতত আসানসোলের কোনও স্কুলেই উচ্চ মাধ্যমিক পড়বে ঋত্বিক। তার পরে ডাক্তার হতে চায়। তার মা বলেন, ‘‘আমাকে ছোট থেকে স্নায়ুর রোগে ভুগতে দেখছে ও। তাই ডাক্তার হতে চায়। আমরাও চাই, ওর ইচ্ছে সফল হোক।” ভাল ফলের জন্য শিক্ষকদের কৃতিত্ব দিতে চায় ঋত্বিক। এ দিন স্কুলে তাকে কাঁধে তুলে আনন্দে মেতে ওঠে সহপাঠীরা। ঋত্বিককে অভিনন্দন জানিয়েছেন আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের সেক্রেটারি স্বামী সোমাত্মানন্দ। তিনি জানান, এ বার ঋত্বিক ছাড়াও তাঁদের স্কুলের অভিনন্দন দাস (৬৭২) ও অভিজিৎ মুর্মু (৬৬৬) ভাল ফল করেছে। অভিনন্দন মেমারি ও অভিজিৎ আসানসোলের বাসিন্দা।

লাউদোহার ইন্দ্রনীল পাল দুর্গাপুর মহকুমায় সম্ভাব্য প্রথম। বাবা শান্তনু পাল লাউদোহার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট। স্ত্রী সোমাদেবী ও একমাত্র সন্তান ইন্দ্রনীলকে সঙ্গে নিয়ে থাকেন হাসপাতালের আবাসনে। লাউদোহার কালীতারা বিজয় ইনস্টিটিউটের ছাত্র ইন্দ্রনীল। পছন্দের বিষয় অঙ্ক হলেও চিকিৎসক হতে চায় সে। ইন্দ্রনীল জানায়, সে গোয়েন্দা গল্প পড়তে ভালোবাসে। খেলাধুলো করার সময় পায় না। তবে সুযোগ পেলে টিভিতে ক্রিকেট দেখতে বসে যায় আইপিএলে কেকেআরের এই ভক্ত। আর ভালবাসে হিন্দি সিনেমার গান শুনতে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত বসু, ‘‘ইন্দ্রনীল পঞ্চম শ্রেণি থেকে এই স্কুলে পড়ছে। প্রথম থেকেই মেধাবী। ওর সাফল্যে আমরা গর্বিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন