মধুপুর স্টেশন লাগোয়া দুই ভবন। নিজস্ব চিত্র
রেল স্টেশন লাগোয়া এলাকা পরিদর্শন করছিলেন রেলকর্তা। আচমকা, ঝোপ-জঙ্গলে ঢাকা এলাকায় দেখা যায়, দু’টি পুরনো ভবন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় দেড়শো বছর আগে ওই দুই স্থাপত্য তৈরি হয়েছিল। সেই স্থাপত্য কোনও কাজে দেয় না বলে সেগুলি ভেঙে ফেলারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রেল। কিন্তু রেলকর্তার হস্তক্ষেপে ভাঙা নয়, বরং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মধুপুর স্টেশন লাগোয়া ওই ভবন দু’টি রেলের ‘হেরিটেজ’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
ডিআরএম (আসানসোল) প্রশান্তকুমার মিশ্রের নজরে পড়ে ভবন দু’টি। তাঁর কথায়, ‘‘সহকর্মী ও ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে ঘুরে দেখি ওই দুই স্থাপত্য। ইংরেজ আমলে ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলের বানানো ওই দু’টি ভবনের স্থাপত্যশৈলী বিস্ময়কর। সামান্য পরিমার্জন করে এগুলি আমরা রেলের ‘হেরিটেজ’ হিসেবে ব্যবহার করব।’’ ওই রেলকর্তা জানান, মধুপুরের রেলকর্মীরা অনেক দিন ধরে কমিউনিটি সেন্টারের দাবি করছেন। তাই ভবন দু’টির একটি কমিউনিটি সেন্টার ও আন্যটি রেলের ‘হলিডে হোম’ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ভবন দু’টিকে কেন্দ্র করে রেলের সংগ্রহশালাও তৈরি হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন ঘটবে বলেই প্রশান্তবাবু জানান।
আসানসোল থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে মধুপুর। এলাকার প্রাকৃতিক শোভার জন্য কলকাতা-সহ রাজ্য ও দেশের নানা প্রান্ত থেকে অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মধুপুরে ভিড় জমান পর্যটকেরা। এখনও অনেকের বাংলোবাড়ি রয়েছে। যেহেতু মধুপুর একটি পর্যটনস্থল, তাই শীতেও বহু লোকজন আসেন মধুপুরে। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ার পরে সামগ্রিক ভাবে তাই রেলই উপকৃত হবে বলে মনে করছেন প্রশান্তবাবু। পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের কর্তারা জানান, এই ডিভিশনের পুরনো স্থাপত্যগুলিকে ‘হেরিটেজে’র মর্যাদা দিতে রেলবোর্ড ও রেলমন্ত্রক বিশেষ ভাবে পরামর্শ দিয়েছে। সেই পরামর্শ মতোই কাজ হবে।
সেই সঙ্গে মধুপুরকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পকে আরও জমজমাট করতে বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন রেলকর্তারা। যেমন, রেলস্টেশনে একটি চলমান সিঁড়ি তৈরি করা হবে। যাত্রীদের জন্য তৈরি হবে একটি অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতীক্ষালয়। পুরনো প্রতীক্ষালয়টিতেও আধুনিক নানা ব্যবস্থা রাখা হবে। স্টেশন চত্বরে গাড়ির জন্য ‘পার্কিং জোন’ তৈরি করা, স্টেশনের প্রবেশপথ ও লাগোয়া এলাকার সৌন্দর্যায়নেরও পরিকল্পনা রয়েছে। ডিসেম্বর থেকেই এমন আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রশান্তবাবু।