মাঠে-ঘাটে নয়, নির্মল করছে দুই কন্যা

লড়াইটা শুরু হয়েছিল ঘরে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে গাঁয়েও। এখনও সকাল হলেই দুই বান্ধবী বেরিয়ে পড়েন। বাঁশ ঝাড়, পুকুর পাড়ে রীতিমতো অভিযান চালিয়ে ওঁরা মা-বোনেদের বুঝিয়ে দেন— ‘এখানে না।

Advertisement

সুচন্দ্রা দে

মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:০৩
Share:

বাড়ি বাড়ি প্রচারে ব্যস্ত চন্দনা, কেতকী। নিজস্ব চিত্র।

লড়াইটা শুরু হয়েছিল ঘরে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে গাঁয়েও। এখনও সকাল হলেই দুই বান্ধবী বেরিয়ে পড়েন। বাঁশ ঝাড়, পুকুর পাড়ে রীতিমতো অভিযান চালিয়ে ওঁরা মা-বোনেদের বুঝিয়ে দেন— ‘এখানে না। বাড়িতে শৌচাগার তৈরি করুন।’ ওই দু’জন মঙ্গলকোটের সাঁওতা গ্রামের চন্দনা হাজরা আর কেতকী চৌধুরী। সচেতনতা প্রচারের পাশাপাশি শৌচাগার নির্মাণের টাকা সংগ্রহ করে তা পঞ্চায়েতে জমা দেওয়ার ব্যবস্থাও করছেন তাঁরা। মঙ্গলবার প্রশাসনের তরফেও তাঁদের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলকোটের নিগন পঞ্চায়েতের এই গ্রামটিতে বিদ্যুৎ, মোবাইল, টেলিভিশন— খামতি নেই কিছুরই। কিন্তু বহু বাড়িতেই নেই শৌচাগার। শৌচাগার ছিল না গ্রামের মেয়ে, চন্দ্রপুর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী চন্দনা হাজরার বাড়িতেও। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বাড়িতে শৌচাগার না থাকাটা মেনে নিতে পারেননি চন্দনা। স্বাস্থ্য সচেতনতার গুরুত্ব বুঝতে পেরে মূলত তাঁরই উদ্যোগে বাড়িতে তৈরি হল শৌচাগার। কিন্তু এখানেই থেমে থাকেননি তিনি।

বেরিয়ে পড়লেন গ্রামকে ‘নির্মল’ করার কাজে। গত সেপ্টেম্বরে ‘মিশন নির্মল বাংলা’র একটি প্রচারসভা সেই লক্ষ্যে ইন্ধন জোগায়। আর এই কাজে চন্দনা পাশে পেয়ে যান সদ্য কলেজ শেষ করা বান্ধবী কেতকী চৌধুরীকেও। দু’জনে মিলে শুরু করেন অভিযান। আর তার ফলে তিন মাসের মধ্যে গ্রামের ৬০টি পরিবারকে শৌচাগার তৈরির জন্য ন’শো টাকা পঞ্চায়েতে জমা দিয়েছেন। ‘মিশন নির্মল বাংলা’ প্রকল্পের জন্য পঞ্চায়েতের সংসদে ১১ জনের কমিটিতেও রাখা হয়েছে চন্দনা ও কেতকীকে।

Advertisement

বিডিও সায়ন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ওই দু’জন আমাদের কাজকে সহজ করে দিয়েছেন। সাড়াও মিলছে ভাল।’’ ওই দুই তরুণীর উপরেই শৌচাগার তৈরির জন্য ইচ্ছুক পরিবারগুলির তালিকা তৈরি করে অর্থ সংগ্রহের ভার দিয়েছে প্রশাসন। চন্দনা ও কেতকী জানান, এখন তাঁদের লক্ষ্য গ্রামের বাকি ৪৫টি পরিবারেও শৌচাগার তৈরির ব্যবস্থা করা।

কিন্তু এই কাজে কোনও বাধা আসেনি? গ্রামের আল পথে হাঁটতে হাঁটতে দুই বন্ধু বলেন, ‘‘ভোরবেলায় মাঠে চলে যাওয়ায় বন্ধুরা অনেক সময়ে ঠাট্টা-তামাশা করেছে। তবে এখন অনেকেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমাদের কাজকে সমর্থন করছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন