রেষারেষিতেই বিপদ, নালিশ মেমারিতে

দোকানে ঢুকল বাস, মৃত দু’জন

রাস্তার বাঁক পেরোতেই বিকট আওয়াজ। তার পরেই এক পথচারীকে ধাক্কা মেরে রাস্তার ধারে থাকা দোকানে ঢুকে পড়ল একটি বাস। বৃহস্পতিবার বিকেলে মেমারির বিশকোপায় এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল ওই পথচারী-সহ দু’জনের। আহত হয়েছে অন্তত ৪৮ জন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেমারি শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৮ ০০:৫৪
Share:

বিশকোপায় দুর্ঘটনার পরে। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

রাস্তার বাঁক পেরোতেই বিকট আওয়াজ। তার পরেই এক পথচারীকে ধাক্কা মেরে রাস্তার ধারে থাকা দোকানে ঢুকে পড়ল একটি বাস। বৃহস্পতিবার বিকেলে মেমারির বিশকোপায় এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল ওই পথচারী-সহ দু’জনের। আহত হয়েছে অন্তত ৪৮ জন। তাঁদের মধ্যে ৩০ জনকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে, ১০জনকে স্থানীয় পাহাড়হাটি ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে দু’জনকে কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। আট জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান থেকে কৃষ্ণনগরে যাচ্ছিল ওই বাসটি। আগে-পিছনে কালনার দিকে যাওয়া দু’টি বাস ছিল। ঘটনাস্থলে থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে সাতগেছিয়া বাসস্টপ। সেখানে কে আগে পৌঁছবে, সে নিয়ে বাসের মধ্যে রেষারেষি চলছিল বলে অভিযোগ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশকোপা কালভার্টের কাছে ওই বাসটির সামনের ডান দিকের চাকা ফেটে যায়। তার পরে নিয়ন্ত্রণ হারানো অবস্থায় বেশ খানিকটা গিয়ে ওই দোকানে ঢুকে পড়ে বাসটি। তার আগে প্রবাসী সিংহ (৪৫) নামে এক পথচারীকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলের কাছে থাকা পলাশ মণ্ডল বলেন, “নাতনিকে নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন প্রবাসীদেবী। তাঁদের ধাক্কা দিয়ে বাসটি ওই দোকানে ঢুকে যায়।’’ প্রবাসীদেবীর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। তাঁর নাতনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। পুলিশ জানায়, ওই বাসের কন্ডাক্টর অরুণ কুমারেরও (৪৭) মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশের অনুমান, বাসের টায়ার ছিল বেশ পুরনো। দ্রুত গতিতে যাওয়ার ফলে কোনও কারণে তা ফেটে যায়। ফলে, চালক বাসের নিয়ন্ত্রণ হারান। ইটের গাঁথনি ভেঙে দোকানে ঢুকে পড়ে বাসটি। বাসের ছাদে চেপে বসে দোকানের ছাদটি। মেমারি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অমল বাগ দাবি করেন, “মেমারি, কাটোয়া-সহ চারটি রাস্তার মোড় সাতগেছিয়া। ওই বাসস্টপ থেকে যাত্রী নেওয়ার জন্য রেষারেষি করতে গিয়েই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।” ঘটনাস্থলের কাছে থাকা জয়দেব সিংহ, মনসা সিংহদের দাবি, রাস্তা থেকে ৬০ ফুট দুরত্বের দোকানে বাসটি ঢুকে পড়ায় ছাদে থাকা যাত্রীরা নীচে এসে পড়েন।

Advertisement

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ওই বাসের যাত্রী, ধাত্রীগ্রামের পিয়ার আলি বলেন, “বাসটি খুব জোরে যাচ্ছিল। হঠাৎ প্রচণ্ড আওয়াজ কানে আসে। কিছু বোঝার আগেই হুড়মুড় করে পড়ে যায়।” বাসের সামনেই বসে ছিলেন বোহারের নিজাম শেখ, ধাত্রীগ্রামের ধনঞ্জয় দাসেরা। তাঁরা বলেন, “চাকা ফাটার পরেই বাসটি দুলতে-দুলতে এক জনকে ধাক্কা দিয়ে দোকানে ঢুকে পড়ে। তার পরে আর কিছু মনে নেই।”

অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নিখিল নির্মল বলেন, “আমরা প্রায়ই রাস্তায় নেমে বাসের নানা অনিয়ম ধরি। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে, তার রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। তা পাওয়ার পরে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মেমারি থানা জানায়, মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন