সভায়: কাছাকাছি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও অমর রাম। নিজস্ব চিত্র
বিজেপি-র বিরুদ্ধে ‘কালা দিবস’ কর্মসূচি উপলক্ষে তৃণমূলের সভা কাটোয়ায়। তাতেই যোগ দিয়েছিলেন, দলের অন্দরে যুযুধান বলে পরিচিত বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও অমর রাম। কিন্তু তাঁদের দেখে তৃণমূল কর্মীদের একাংশের দাবি, দুই নেতা এক মঞ্চে থাকলেও তাঁরা যেন কাছে থেকেও ছিলেন দূরে।
এ দিন কাটোয়া স্টেশন বাজার চত্বরে বিধায়কের অফিসের অদূরে সভাটির আয়োজন করে কাটোয়া শহর তৃণমূল। ঘটনাচক্রে শহর তৃণমূলের সভাপতি অমর রাম। সেখানে যোগ দেন, রবীন্দ্রনাথবাবু, অমরবাবু, রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ, সাংসদ সুনীল মণ্ডল, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মণ্ডল আজিজুল। কিন্তু তৃণমূল কর্মীদের একাংশের দাবি, এ দিনের সভার মূল আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিলেন বিধায়ক এবং প্রাক্তন পুরপ্রধান অমরবাবুই।
কেন? কারণ, তৃণমূলের অন্দরে কাটোয়ার এই দুই নেতা পরস্পরের বিরোধী বলেই পরিচিত। কিছু দিন আগে, রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামী বলে পরিচিত ১০ জন কংগ্রেস কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে সেই সংঘাত চরমে ওঠে। পরে পুরপ্রধানের পদও যায় অমরবাবুর। পুরপ্রধান হন রবীন্দ্রনাথবাবুই। শহরবাসীর দাবি, এই ঘটনার পরে থেকে দুই নেতাকে এক মঞ্চে দেখা যায়নি।
তা হলে ফের কী এমন ঘটল, যাতে দুই নেতাই এক মঞ্চে এলেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের অন্দরে রাজ্যের এক শীর্ষ নেতা বার্তা দেন, কাটোয়ায় দলের রাশ আসলে ধরবেন রবীন্দ্রনাথবাবুই। পুরপ্রধান বদলের পরে কাটোয়া মহকুমা এলাকায় বিধায়কের ডাকে একাধিক জনসভা হয়। কিন্তু, খোদ কাটোয়া শহরে কোনও জনসভা নজরে পড়েনি বলেই জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যে কাটোয়ায় এসে সভা করে যান বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। একের পর এক এমন নানা ঘটনায় শহরের অন্দরে জনসভা তাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল নেতাদের একাংশের দাবি, আগামী পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের গোষ্ঠী কোন্দল মেটানোর বার্তা দেওয়াটাও দরকার ছিল। এ দিনের সভা থেকে মন্ত্রী স্বপনবাবুকেও বলতে শোনা যায়, ‘‘মঞ্চের দৃশ্য দেখছেন তো? দেখে নিন। রবি দা, অমর, আমরা সবাই এক সঙ্গে রয়েছি। সবাই এক সঙ্গে হাঁটলে দেখবেন কী হয়। বিরোধীদের অস্তিত্ব থাকবে না।’’ তা ছাড়া কিছু দিন পরে একটি সভায় যোগ দেওয়ার কথা দলের তরফে জেলা পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের। এর আগেও ‘এক সঙ্গে’ থাকার বার্তা দেওয়াটাও দরকার ছিল বলে মনে করছেন তৃণমূল কর্মীদের একাংশ।
তবে দুই নেতা এক মঞ্চে এলেও কিছু ‘চোনা’ থেকে গিয়েছে বলেই মনে করছেন তৃণমূল কর্মীরা। কারণ, আপাত দৃষ্টিতে দুই নেতা পাশাপাশি দাঁড়ালেও দু’জনকে কথাবার্তা বলতে দেখা যায়নি। এমনকী, দু’জনের মধ্যে সৌজন্য বিনিময়ও হয়নি বলে দাবি। শুধু তাই নয়, তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, অমরবাবু ও তাঁর অনুগামী বলে পরিচিত কাউন্সিলরদের ওয়ার্ড ৪, ৯, ১৫ ও ১৯ নম্বর থেকে সভায় কোনও কর্মী যোগ দেননি। যদিও অমরবাবুর এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা কর্মী এনেছি।’’ তবে দু’জনের মধ্যে সৌজন্য বিনিময়টুকুও না হওয়ার দাবি প্রসঙ্গে অমরবাবু বলেন, ‘‘দেখলেন তো, একই মঞ্চে সভা করলাম।’’
সম্প্রতি কার্তিক লড়াইয়ের সময়ে গোলমালের ঘটনায় বিধায়ক তথা পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে উস্কানির অভিযোগ করেন বিজেপি নেতা দিলীপবাবু। এ দিন সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘ওই দিন ঘটনাস্থলে গোলমাল থামাতে একমাত্র আমিই ছিলাম।’’