শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি ধানে, অস্বাভাবিক মৃত্যু ভাগচাষির

অস্বাভাবিক মৃত্যু হল এক চাষির। সাহেব হেমব্রম (৩০) নামে ওই চাষির বাড়ি বর্ধমানের খেতিয়া ১ পঞ্চায়েতের টুবগ্রামে। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, প্রথমে আলুতে ক্ষতি, পরে শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধানে লোকসান হওয়ায় দেনা শোধ করতে না পেরে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। ফসলে ক্ষতির কথা মেনে নিলেও প্রশাসনের দাবি, পারিবারিক কারণেই আত্মহত্যা করেছেন ওই চাষি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৪৮
Share:

শোকার্ত পরিবারের লোকজন। নিজস্ব চিত্র।

অস্বাভাবিক মৃত্যু হল এক চাষির। সাহেব হেমব্রম (৩০) নামে ওই চাষির বাড়ি বর্ধমানের খেতিয়া ১ পঞ্চায়েতের টুবগ্রামে। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, প্রথমে আলুতে ক্ষতি, পরে শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধানে লোকসান হওয়ায় দেনা শোধ করতে না পেরে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। ফসলে ক্ষতির কথা মেনে নিলেও প্রশাসনের দাবি, পারিবারিক কারণেই আত্মহত্যা করেছেন ওই চাষি।

Advertisement

ওই চাষির দাদা সুনীল হেমব্রম বলেন, ‘‘সোম-মঙ্গলবার আমাদের গ্রামে সন্ধ্যার দিকে প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। ভাই চার বিঘে জমিতে বোরো চাষ করেছিল। কিন্তু শিলা পড়ে সমস্ত ধানের চারাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেই হতাশাতেই বুধবার বিকেলের দিকে বাড়িতে কীটনাশক পান করে ভাই।’’ পরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয় তাঁকে। সন্ধ্যায় সেখানেই মারা যান তিনি। বৃহস্পতিবার ময়না-তদন্তও করিয়েছে পুলিশ।

সাহেববাবুর পরিবারের দাবি, আলুর মরসুমে ছ’বিঘা জমি লিজ নিয়ে আলু চাষ করেছিলেন তিনি। ফলন ভাল হলেও বাজারে আলুর দাম ভাল না থাকায় লাভের মুখ দেখতে পাননি। বন্ড না পাওয়ায় হিমঘরেও আলু রাখতে পারেননি তিনি। এরপরে বোরো চাষ করে সমস্যার কিছুটা সুরাহা হবে ভেবেছিলেন সাহেববাবু। কিন্তু গত দু’দিনের শিলাবৃষ্টিতে সমস্ত ধানের চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মহাজনের থেকে নেওয়া প্রায় ৪৫ হাজার টাকা ঋণ শোধ করা নিয়ে অশান্তি বাড়ে। মৃত চাষির দাদা সুনীলবাবুর দাবি, ধার শোধ করা নিয়ে চাপও দিচ্ছিল মহাজন। সেই হতাশা থেকেই এ কাজ করেন তিনি। স্থানীয় চাষি শ্রীদাম হালদার ও সুনীল পালেরাও জানান, সাহেব আলুতে মার খাওয়ার পরে ভেবেছিল বোরো ধান চাষ করে বাজারের ঋণ শোধ করবে। কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে এলাকা জুড়ে বহু ধান নষ্ট হয়ে যায়।

Advertisement

জেলা মুখ্য দফতর সূত্রেও জানানো হয়েছে, সোম ও মঙ্গলবারের ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে জেলার বুকে প্রায় ২৭৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান, ৫০০ হেক্টরে সবজি ও ৮০০ হেক্টর জমিতে তিল চাষে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্টে তাদের দাবি, ভাতার, মঙ্গলকোট, আউশগ্রাম ১, বর্ধমান সদর, কালনা ইত্যাদি ব্লকে বোরো ধানের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুও বলেন, ‘‘শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে কত, সে হিসেব করছে কৃষি দফতর।’’ তাঁর দাবি, ৬ এপ্রিল পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী বর্ধমানে ২২ হাজার ৮৪৬ হেক্টর জমিতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলে, “ওই চাষির আত্মহত্যার খবর মেলার সঙ্গে সঙ্গে বর্ধমান ১ ব্লকের বিডিও দেবদুলাল বিশ্বাসকে তাঁর বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। বিডিও-র কাছে আত্মঘাতীর পরিবারের লোকেরাই জানিয়েছেন, তিনি পারিবারিক কারণে মারা গিয়েছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন