দিনভর সংঘর্ষ জামুড়িয়ায়, ভাঙচুরে অশান্ত রানিগঞ্জও

সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ বুথের সামনে জড়ো হয়েছেন তৃণমূলের বেশ কিছু লোকজন। খবর পেয়েই লাঠিসোটা নিয়ে চড়াও হলেন সিপিএম কর্মীরা। তখন পালিয়ে গেলেও খানিক পরে দলে হয়ে ভারী হয়ে ফিরল তৃণমূলের লোকেরা। বেধে গেল সংঘর্ষ। মাথা ফাটল তৃণমূল প্রার্থীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৪৮
Share:

জামুড়িয়ার নিঘায় একটি বুথের সামনে তোলা নিজস্ব চিত্র।

সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ বুথের সামনে জড়ো হয়েছেন তৃণমূলের বেশ কিছু লোকজন। খবর পেয়েই লাঠিসোটা নিয়ে চড়াও হলেন সিপিএম কর্মীরা। তখন পালিয়ে গেলেও খানিক পরে দলে হয়ে ভারী হয়ে ফিরল তৃণমূলের লোকেরা। বেধে গেল সংঘর্ষ। মাথা ফাটল তৃণমূল প্রার্থীর।

Advertisement

শনিবার সকালে জামুড়িয়ার মণ্ডলপুরে এই ঘটনা দিয়ে শুরু হওয়ার পরে গোলমাল চলল দিনভর। বুথ দখল বা ভোট দিতে যেতে বাধা দেওয়ার খবর পেলেই প্রতিরোধের রাস্তা নিলেন সিপিএম কর্মীরা। শুধু জামুড়িয়া নয়, অশান্তি বাধল রানিগঞ্জেও। ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর, মারধরে উত্তপ্ত হল এলাকা।

এ দিন সকালে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে দামোদরপুরে এক বুথে বেশ কিছু ভোটার ভোট দিতে গেলে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তাঁরা রাস্তা অবরোধ করেন। তৃণমূল প্রার্থী রাখি কর্মকার ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে তাঁকে আটকান ওই বাসিন্দারা। প্রার্থী তাঁদের বুথে যেতে বলে রেহাই পান। এরই মধ্যে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বহিরাগতদের নিয়ে বুথ দখলের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের লোকজন ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে। তৃণমূল প্রার্থী রামচন্দ্র নুনিয়ার আঙুল ভেঙে যায়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

Advertisement

সকালে ১ নম্বর ওয়ার্ডের শিরিষডাঙায় এক দল বাসিন্দা ভোট দিতে যাওয়ার সময়ে রাস্তায় তৃণমূলের লোকজন বোমাবাজি করে আটকানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় পৌঁছে যায় সিপিএমের কয়েক জন। মারধরে জখম হন তৃণমূলের কাজল মাঝি, নিলু চক্রবর্তী-সহ কয়েক জন। কাজলবাবুকে আসানসোল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

বেলার দিকে ১১ নম্বর ওয়ার্ডে শ্রীপুরে বুথ দখলের চেষ্টায় বোমাবাজি হয় বলে অভিযোগ। সেখানেও সিপিএম ‘প্রতিরোধ’ করে। মারপিট বেধে গেলে পুলিশ পৌঁছয়। ইট-পাটকেলে পুলিশের গাড়ির কাচ ভাঙে। সেক্টর অফিসারের সমীরণ সান্নিগ্রাহি বলেন, ‘‘গণ্ডগোল শুনে ওখানে গিয়েছিলাম। আমাকে লক্ষ করেই ইট-পাটকেল ছোড়া হয়।’’

জামুড়িয়ায় গণ্ডগোল থামাতে গিয়ে ইটে ভাঙল পুলিশের গাড়ির কাচ। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের নিঘায় দাঁড়িয়েছিলেন তৃণমূলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে দফায়-দফায় গোলমাল হয়। তৃণমূল ছাপ্পা দিচ্ছে, এই অভিযোগকে কেন্দ্র করেই গোলমালের শুরু। লাঠিসোটা নিয়ে হাজির হয় সিপিএমের লোকজন। শিবদাসনকেও ধাক্কাধাক্কি করা হয়। পুলিশ দেরি করে পৌঁছয় বলে অভিযোগ। পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। পাল্টা লাঠি চালিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ।

৯ নম্বরে ওয়ার্ডে জবা এলাকায় ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগে এক তৃণমূল কর্মীকে মারধর, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বেনালিতে তৃণমূলের তিন জনকে মারধরের মতো ঘটনা ঘটেছে দিনভর। আকলপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি বেনালির রূপম রুইদাসের অভিযোগ, ‘‘সিপিএম এবং বিজেপির লোকজন মিলে মারধর করেছে।’’

সিপিএমের অভিযোগ, এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ বাঁকুড়া থেকে রানিগঞ্জে একটি বাস আসে। বন্ধ বার্নস কারখানার রানিগঞ্জ ইউনিটের জিএম বাংলোয় ঢুকে যায় সেটি। অস্ত্র নিয়ে তৃণমূল আশ্রিত বহিরাগতেরা সেই বাসে করে এসেছে, এই অভিযোগে এলাকায় জড়ো হয় সিপিএমের লোকজন। কাছাকাছি একটি তৃণমূলের ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়। গোটা কয়েক বোমাও ফাটে। পাল্টা সিপিএমের ক্যাম্প অফিসও ভাঙচুর হয়। সিহারসোলের সিপিএম প্রার্থী নারায়ণ বাউরির দাবি, ‘‘আমরা প্রতিরোধ করায় ওর বুথ দখল করতে এসেও পিছু হঠেছে। আমরা ব্যারিকেড করেছিলাম।’’

আসানসোলের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘রানিগঞ্জের একটি হোটেলে শুক্রবার রাতে বৈঠক করে তৃণমূলের নেতারা। সেখানে ঠিক হয়, জামুড়িয়া ও রানিগঞ্জে ওরা দখল করবে। সে জন্য মঙ্গলকোট, বীরভূম, বাঁকুড়া থেকে লোক আনবে। তবে আমরা যেখানে যেখানে প্রতিরোধ করতে পেরেছি, সেখানেই সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। বাকি সব জায়গায় বুথ দখল, সন্ত্রাস, ছাপ্পা ভোট করেছে তৃণমূল।’’ তাঁর দাবি, রানিগঞ্জে তাঁদের মোট ৩৫ জন পোলিং এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের আসানসোলে জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘বরাবরের মতো এ বারও জামুড়িয়ায় সন্ত্রাস করেছে সিপিএম। ভোট যাতে বাতিল হয় সেই উদ্দেশ্যে সংঘর্ষে জড়াতে আমাদের কর্মীদের প্ররোচিত করছিল ওরা। কিন্তু আমরা সেই ফাঁদে পা দিইনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন