Kalna

‘অনেক দিন পরে শান্তিতে ঘুমোব’

২০১৯ সালের ৩০মে-র সন্ধ্যা এখনও টাটকা তাঁর কাছে। সোমবার আদালতে বসেই অস্ফুট স্বরে জানান, ২০১৪ সালে স্বামী মারা যায়। অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে মানুষ করছিলেন মেয়েদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২০ ০২:২৪
Share:

নির্যাতিতার মা। নিজস্ব চিত্র

সকাল ১০টা বাজতেই আদালতে পৌঁছে গিয়েছিলেন মাঝবয়েসী মহিলা। কালনা অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা বিচারকের কক্ষে ঢোকার মুখে একটি টেবিলে ঠায় বসেছিলেন একাই। মুখ ‘মাস্ক’-এ ঢাকা থাকলেও মেয়ের খুনির চরম সাজা শুনে বাঁধ ভাঙে চোখ। কালনা ২ ব্লকের সিঙেরকোনের নির্যাতিতা কিশোরীর মা বলেন, ‘‘ওর ফাঁসি চেয়েছিলাম। তা-ই হয়েছে। অনেক দিন পরে একটু শান্তিতে ঘুমোতে পারব।’’

Advertisement

২০১৯ সালের ৩০মে-র সন্ধ্যা এখনও টাটকা তাঁর কাছে। সোমবার আদালতে বসেই অস্ফুট স্বরে জানান, ২০১৪ সালে স্বামী মারা যায়। অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে মানুষ করছিলেন মেয়েদের। বড় মেয়ের বিয়ের পরে, দশম শ্রেণির ছাত্রী, ছোট মেয়েকে নিয়েই থাকতেন। ওই দিনও মেয়েকে রান্না করে দিয়ে কাজে গিয়েছিলেন মা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ ফিরে দেখেন, বাড়ি অন্ধকার। ডাকাডাকি করেও মেয়ের সাড়া মেলেনি। ঘরে ঢুকে আলো জ্বালতেই দেখেন, বিছানায় অচেতন, অর্ধনগ্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে মেয়ে। মাথায় একাধিক চোটের চিহ্ন ছিল। তবে তখনও নিঃশ্বাস পড়ছে।

প্রতিবেশীদের সাহায্যে সঙ্গে সঙ্গেই কালনা মহকুমা হাসপাতাল, পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ওই নাবালিকাকে। ‘ভেন্টিলেশন’-এ থাকাকালীন অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। বারো দিন পরে লড়াই শেষ হয় তার।

Advertisement

কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসে মায়ের। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটা কোনও অপরাধ করেনি। অথচ, নিষ্ঠুর ভাবে খুন হল! ভাবলেই আর ঘুমোতে পারতাম না।’’ তিনি বলে চলেন, ‘‘বার বার ভাবি ওর (কামরুজ্জামান) তো দুটো মেয়ে আছে। তাদের মুখটা মনে পড়ল না! কী ভাবে করল এমনটা!’’

ওই ঘটনার পর থেকে বাড়িতে একা থাকতে পারেন না তিনি। কিছু দিন বড় মেয়ের কাছে থাকার পরে, বর্তমানে বাপেরবাড়িতে থাকেন। সিঙেরকোনের বাড়ি সিল করে রেখেছে পুলিশ। এ দিন বাড়ির ‘সিল’ খুলে দেওয়ার জন্য আদালতকে জানান সরকারি আইনজীবী। বিচারক আলাদা করে কথাও বলেন ওই মহিলার সঙ্গে। তবে পুলিশ বাড়ি খুলে দিলেও একা থাকতে পারবেন কি না, নিশ্চিত নন তিনি। এখনও বাড়ির দরজার কাছে গেলেই রক্তে ভাসা মেয়ের দেহটা মনে পড়ে যায় তাঁর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement