ভাঙনের শব্দে ঘুম উড়েছে গ্রামে

যে কোনও মুহূর্তে বাড়ি তলিয়ে যেতে পারে ভাগীরথীতে। নদী ভাঙনে আগেই তলিয়ে গিয়েছে অধিকাংশ খেত। গ্রাম ছেড়েছে বহু পরিবার। এ বার ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে দু’খানা গ্রামই আস্ত তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা পূর্বস্থলী ২ ব্লকের মেড়তলা পঞ্চায়েতের কুঠুরিয়া এবং দেবনগরের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৬ ০২:০৭
Share:

পাড় ধসেছে কুঠুরিয়ায়। নিজস্ব চিত্র।

দিন হোক বা রাত— অষ্টপ্রহর আতঙ্কই সঙ্গী তাঁদের।

Advertisement

যে কোনও মুহূর্তে বাড়ি তলিয়ে যেতে পারে ভাগীরথীতে। নদী ভাঙনে আগেই তলিয়ে গিয়েছে অধিকাংশ খেত। গ্রাম ছেড়েছে বহু পরিবার। এ বার ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে দু’খানা গ্রামই আস্ত তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা পূর্বস্থলী ২ ব্লকের মেড়তলা পঞ্চায়েতের কুঠুরিয়া এবং দেবনগরের। প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

ভাগীরথীর পাশের কুঠুরিয়া গ্রামে বছর দশেক আগেও ২৭০টি পরিবার থাকত। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বছর ছয়েক আগে ভাঙন তীব্র আকার নিলে সেচ দফতরের তরফে ২৫০ মিটার এলাকায় ভাঙন মেরামতির কাজ হয়। কিন্তু প্রায় ১৫০ মিটার এলাকায় মেরামতির কাজ হয়নি। পরে সেই অংশ দিয়েই ভাঙন ছড়াতে থাকে। তাঁদের দাবি, ইতিমধ্যেই তলিয়ে গিয়েছে গ্রামের প্রায় ৩০০ বিঘা খেত। বহু মানুষ বাড়িছাড়া হয়েছেন। এখনও প্রায় ১৫টি বাড়ি রয়েছে নদীর খুব কাছে। নদীর পাড়ে রয়েছে গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক স্কুলটিও। শিক্ষক থেকে বাসিন্দাদের আশঙ্কা, যে কোনও দিন মাটি ধসে তলিয়ে যেতে হতে পারে জলে।

Advertisement

বাসিন্দাদের দাবি, গ্রামে এমন অনেক বাসিন্দা রয়েছেন, যাঁদের বাড়ি পাঁচ-ছ’বার নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। ভয়ে অধিকাংশ পরিবারই গ্রাম ছেড়েছে। কুঠুরিয়াতে এখন আর মাত্র ৭০টি পরিবার বাস করে বলে জানান তাঁরা। চাষের জমি না থাকায় অধিকাংশ বাসিন্দা এখন খেতমজুরের কাজ করেন। স্থানীয় বাসিন্দা প্রশান্ত সর্দার জানান, বাড়ির খুব কাছে এসে পড়েছে নদী। প্রতি রাতই বিপদের আশঙ্কায় কাটছে তাঁদের।

আবার শেফালী মণ্ডল, কাজল সর্দার, দীপঙ্কর ঘোষেদের দাবি, নদীপথে জাহাজ চলার কারণেই মূলত ভাঙন বাড়ছে। কয়লাবাহী জাহাজ যখন নদী দিয়ে যাতায়াত করে, তীব্র ঢেউ আছড়ে পড়ছে পাড়ে। তাতেই মাটি আলগা হয়ে ধস নামছে বলে তাঁদের অভিযোগ। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে কিছু দিনের মধ্যেই গ্রামের আর কোন অস্তিত্বই থাকবে না বলে আশঙ্কা কুঠুরিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের।

একই হাল দেবনগর গ্রামেরও। ভাঙনের ফলে গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের খুব কাছে চলে এসেছে নদী। খাঁচা ফেলে সাময়িক ভাবে ভাঙন আটকানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ভয় বাগ মানছে না। বাসিন্দারা জানান, স্কুল লাগোয়া এলাকায় ভাঙন কিছুটা কম হলেও গ্রামের অন্য অংশের বহু জমি তলিয়ে যাচ্ছে নদীতে।

এলাকার দু’টি গ্রামের ভাঙন পরিস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন মেড়তলা পঞ্চায়েতের প্রধান ধর্মেন্দ্র ঘারামি। তিনি জানান, যদি দ্রুত ভাঙন রুখতে পাকাপাকি কাজ না হয় তাহলে গ্রাম দুটি যে তলিয়ে যাবে, তা ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েছেন তিনি। পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় জানান, কয়লাবাহী জাহাজ চলাচলের জেরে এলাকায় ভাঙন বাড়ছে। বেশ কিছু জায়গায় বাঁধানো পাড়ও এর জেরে নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। নদীর পাড় ঘেঁসে নয় না গিয়ে জাহাজগুলি যাতে মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে যায়, সে ব্যাপারে প্রশাসনিক দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বিধায়কের দাবি, গ্রাম দু’টি কী ভাবে রক্ষা করা যায় সে ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন