ছাইয়ে ঢাকা গ্রাম, দূষণে ক্ষুব্ধ ইকড়া

নদীতে স্নান করা যায় না। সব গাছের রঙ কালো। বছরভর শ্বাসকষ্ট, সর্দিতে ভুগছে শিশু থেকে বয়স্করা। জামুড়িয়ার ইকড়া ও বিজয়নগর শিল্পতালুক লাগোয়া এলাকায় দূষণের জেরে এমন পরিস্থিতির অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে চিঠি পাঠালেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৭ ০১:৪৩
Share:

ধোঁয়াটে: কারখানার ধোঁয়া ইকড়ায়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

নদীতে স্নান করা যায় না। সব গাছের রঙ কালো। বছরভর শ্বাসকষ্ট, সর্দিতে ভুগছে শিশু থেকে বয়স্করা। জামুড়িয়ার ইকড়া ও বিজয়নগর শিল্পতালুক লাগোয়া এলাকায় দূষণের জেরে এমন পরিস্থিতির অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে চিঠি পাঠালেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

২০০৩ সালে ইকড়া গ্রামের অদূরে প্রথ স্পঞ্জ আয়রন কারখানা চালু হয়। তার পরে একে-একে ইকড়ায় ১২টি ও পাশের বিজয়নগরে দু’টি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা তৈরি হয়। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা সুশীল চট্টোপাধ্যায় জানান, দূষণ থেকে নিস্তার পেতে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। তাতে দাবি করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে যে ‘দূষণ প্রতিরোধ কমিটি’ গড়া হয়েছিল, তা আবার নতুন করে দূষণ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হোক। সেখানে ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিধানসভার স্থায়ী কমিটি ২০১১-র নভেম্বরে আসানসোল মহকুমার দূষণ-কবলিত এলাকা ঘুরে গিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে রিপোর্ট জমা দেয়। তাতে ইকড়া, বিজয়নগরে দূষণের কথা স্বীকার করা হয়েছে। ওই স্থায়ী কমিটির সদস্যেরা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিক ও আসানসোলের মহকুমাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করে কিছু পরামর্শ দেন। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতির কোনও বদল হয়নি বলে অভিযোগ। উল্টে, দিন-দিন দূষণ আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

দু’টি গ্রামের মানুষজন জানান, বাড়ির মেঝে কালো হয়ে থাকছে। খাবার ঢেকে না রাখলে কালো হয়ে যায়। সিঙ্গারন নদীর জলে আর স্নান করা যায় না। আগে এই নদীর পাড়ে সারা শীতকাল জুড়ে বনভোজনের আসর বসত। নদীর জল ব্যবহার করা যায় না বলে বছর ছয়েক সে সব বন্ধ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, চাষের জমিতে ফলন কমে গিয়েছে। কারণ, মাটি কালো ছাইয়ে ঢেকে যায়। যত বারই সেই ছাই তুলে ফেলা হোক, কোনও লাভ হয় না। উল্টে, খরচ বাড়ে। ধান থেকে পাওয়া খড় গবাদি পশুরা খেতে পারে না। দূষণে রোগজ্বালাও বাড়ছে। এলাকার মাছচাষিরা জানান, পুকুরগুলিতে মাছের ফলন কমে গিয়েছে।

বাসিন্দাদের দাবি, গরমের সময়ে ঝড় উঠলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বন্ধ করে কালো ছাই ছেড়ে দেয় কমবেশি সব কারখানাই। তখন জানলা-দরজা খোলা রাখা দায়। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কয়েক বছর অন্তর দু’একটি কারখানা কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করে। তাতে কোনও প্রতিকার হয় না দাবি করে গ্রামবাসীরা মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো চিঠিতে পর্ষদের কর্মী-আধিকারিকদের ভূমিকা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

আসানসোল দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারা গোটা বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এক আধিকারিক শুধু বলেন, ‘‘দূষণ রোধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।’’ জামুড়িয়ার বিডিও অনুপম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কারখানা কর্তৃপক্ষগুলিকে দূষণ নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকেও বিষয়টি নজরে রাখার জন্য জানানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন