Teachers

Teachers: খুদেদের পড়ায় ফেরাতে ক্লাবে ক্লাস শিক্ষকদের

শুধু পড়ানো নয়, পড়ুয়াদের হাতে খাবারও তুলে দিচ্ছেন শিক্ষকেরা। কখনও ডিম-পাঁউরুটি, কখনও চিঁড়ে— এ ধরনের খাবার কিনে দিচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:২৬
Share:

বংপুরে চলছে পড়াশোনা। ছবি: উদিত সিংহ।

বছর দেড়েক স্কুলের ধার ঘেঁষার সুযোগ হয়নি ওদের। বই-খাতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল অনেকে। বর্ধমান শহরে এমন খুদেদের পড়ায় ফিরিয়ে আনার বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন তিন স্কুল শিক্ষক। শহরের দুই জায়গায় সপ্তাহে দু’দিন করে ‘পিছিয়ে পড়া’ পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাস শুরু করেছেন তাঁরা। শুধু পড়ানো নয়, পড়ুয়াদের হাতে খাবারও তাঁরা তুলে দিচ্ছেন।

Advertisement

বর্ধমানের তেজগঞ্জ হাইস্কুলের শিক্ষক প্রতনু রক্ষিত বলেন, ‘‘হাইস্কুলের পড়ুয়াদের অনেকেরই অনলাইনের মাধ্যমে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। গৃহশিক্ষকদের কাছে যাচ্ছে। কিন্তু প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা সে সব সুযোগ পাচ্ছে না। পিছিয়ে পড়া শ্রেণির পড়ুয়াদের অনেকেই বইয়ের মুখ না দেখে, মাঠেঘাটে খেলে বেড়াচ্ছে। ওই সব পড়ুয়াদের বইমুখী করাই উদ্দেশ্য।’’ জুলাই থেকে বর্ধমান শহরের কাছে বংপুর চাষিমানা ও নতুনগঞ্জের দিঘিরপুলের কাছে দু’টি ক্লাবে পড়ানোর কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন তাঁরা। ক্লাস নেওয়া হচ্ছে করোনা-বিধি মেনে।

শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, বংপুরে ছ’জন পড়ুয়াকে নিয়ে ক্লাস শুরু করা হয়েছিল। এখন সেখানে ২৫ জন পড়ুয়া রয়েছে। তার মধ্যে ১৫ জন ছাত্রী। নতুনগঞ্জের কেন্দ্রে পড়াশোনা করছে ১৫ জন। শিক্ষকদের দাবি, দু’টি এলাকায় পিছিয়ে পড়া অংশের পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি। তাই এই দু’টি জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছে। ক্লাব কর্তৃপক্ষও তাঁদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। নবাবহাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অশোককুমার সরকার বলেন, ‘‘নতুনগঞ্জের কেন্দ্রে আমরা ‘অডিয়ো-ভিস্যুয়াল’ পদ্ধতিতে ক্লাস করাতে পারছি। বংপুরে খেলাচ্ছলে পড়ানো হয়।’’

Advertisement

বংপুরের কেন্দ্রে বংপুর শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, তেজগঞ্জ প্রাথমিক স্কুল, সদরঘাট কালীমাতা প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ার সোমবার ও বৃহস্পতিবার পড়তে আসে। নতুনগঞ্জের কেন্দ্রটি চলে মঙ্গল ও শনিবার। সেখানে নতুনগঞ্জ, পাসিখানা, ধোকড়াশহিদ থেকে পড়ুয়ারা আসে। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পড়াশোনা চলে। বংপুরের ক্লাবের কর্তা সমীর চৌধুরী, সমর চৌধুরীদের দাবি, ‘‘ক্লাস চলার সময়ে কেউ যাতে বিরক্ত না করে, সে জন্য ক্লাবের সদস্যেরা পাহারায় থাকেন।’’ অভিভাবক উত্তম চৌধুরী, দীপেশ সাউদের দাবি, ‘‘আমর আর্থিক ভাবে দুর্বল। কেউ বাসকর্মী, কেউ নির্মাণশ্রমিক, কেউ দিনমজুরের কাজ করেন। সরকারি ব্যবস্থার বাইরে পড়ানোর ক্ষমতা নেই। স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা বন্ধই করে দিয়েছিল। এই শিক্ষকেরা পড়াতে চাইছেন শুনে ছেলেমেয়েদের নিয়ে এসেছি।’’ পঞ্চম শ্রেণির ঋত্বিকা চৌধুরী, চতুর্থ শ্রেণির দীপ পোড়েল, দীপক সাউরা বলেন, “বাড়িতে পড়তে ভাল লাগত না। এখানে এসে ভাল লাগছে।’’

শুধু পড়ানো নয়, পড়ুয়াদের হাতে খাবারও তুলে দিচ্ছেন শিক্ষকেরা। কখনও ডিম-পাঁউরুটি, কখনও চিঁড়ে— এ ধরনের খাবার কিনে দিচ্ছেন তাঁরা। তেজগঞ্জের ওই স্কুলেরই শিক্ষক মহম্মদ মহিনুদ্দিন মণ্ডলের কথায়, ‘‘পড়ার সঙ্গে ছেলেমেয়েদের পুষ্টিও জরুরি। সে ভাবনা থেকেই খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাতে পড়ুয়ারা কেন্দ্রে আসতেও উৎসাহী হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন