যন্ত্রে দেদার বালি কাটায় সঙ্কটে প্রকল্প

পাড়ের বালি ইচ্ছেমতো কেটে নেওয়া হচ্ছে যন্ত্র দিয়ে। সেই বালি বোঝাই করে বেপরোয়া ভাবে গ্রামের রাস্তা দিয়ে ছুটছে ট্রাক, ডাম্পার।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৭ ০০:১৯
Share:

ইচ্ছেমতো: অজয়ের চর থেকে বালি কাটা হচ্ছে পাণ্ডবেশ্বরে। —নিজস্ব চিত্র

পাড়ের বালি ইচ্ছেমতো কেটে নেওয়া হচ্ছে যন্ত্র দিয়ে। সেই বালি বোঝাই করে বেপরোয়া ভাবে গ্রামের রাস্তা দিয়ে ছুটছে ট্রাক, ডাম্পার। অজয়-দামোদরে এ ভাবে বালি চুরির জেরে যেমন ক্ষতি হচ্ছে জলপ্রকল্পের, তেমনই দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে উঠছে এলাকার রাস্তাগুলিও। সম্প্রতি গলসিতে দামোদরে বালির গর্তে তলিয়ে দুই পড়ুয়ার মৃত্যুর পরে শিল্পাঞ্চলের নানা এলাকাতেও যথেচ্ছ পাড় কেটে বালি চুরি নিয়ে সরব হয়েছেন বাসিন্দারা।

Advertisement

জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা যায়, দামোদরে কালাঝরিয়া থেকে সূর্যনগর পর্যন্ত অংশে বালি কেটে নেওয়ার জেরে জলপ্রকল্পগুলির ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এক আধিকারিক জানান, বালি কমে যাওয়ায় ডিপি কলোনি জলপ্রকল্প বছরখানে আগে সঙ্কটের মুখে পড়েছিল। বাধ্য হয়ে দামোদরে বাঁকুড়ার দিকে দু’শো মিটার দূরে পাইপ বসাতে হয়। বালি তুলে নেওয়ায় রানিগঞ্জের তিরাট, দামালিয়া, জামুড়িয়ার দরবারডাঙা ও পাণ্ডবেশ্বর জলপ্রকল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গরমে জলের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।

আসানসোল পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কালাঝরিয়ায় ১৯৮৮ সালে জলপ্রকল্প চালুর সময়ে বালির গভীরতা ছিল ৪২ ফুট। যা এখন ১৮-২০ ফুটে এসে দাঁডি়য়েছে। প্রকল্প বাঁচাতে ৫৫টি স্টেনার পাইপের মধ্যে ২৫টি বাঁকুড়ার অভিমুখে সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। মাঝে-মাঝে বালির গভীরতা কমে যাওয়ায় স্টেনারের পাইপ বিকল হয়ে পড়ে। সাবমার্সিবল পাম্পের সাহায্যে জল তুলতে হয়। কিছু জায়গায় বালি পুরো তুলে নেওয়ার ফলে পাথর বেরিয়ে গিয়েছে। এ ভাবে বালির গভীরতা কমতে থাকলে প্রকল্প অন্যত্র সরাতে হবে, আশঙ্কা ইঞ্জিনিয়ারদের।

Advertisement

এলাকাবাসীর অভিযোগ, খনিতে বালি সরবরাহের নামে অবাধে লুঠ করা হচ্ছে। সেই বালি নিয়ে ট্রাক-ডাম্পারগুলির যাতায়াতের ফলে এডিডিএ-এর দু’বছর আগে তৈরি করা কোয়ারডি থেকে চাঁদা এবং দামালিয়া থেকে তিরাট যাওয়ার রাস্তা ভেঙেচুরে গিয়েছে। সম্প্রতি পান্ডবেশ্বরের বিডিও-র কাছে কেন্দ্রার বাসিন্দারা স্মারকলিপি দেন। কেন্দ্রা পঞ্চায়েতের প্রধান আল্পনা সূত্রধর অভিযোগ করেন, ইসিএলের বালি নিয়ে যাওয়ার নাম করে চোররা বালি পাচার করছে। বেপরোয়া বালির গাড়িতে গ্রামে একটি নর্দমা ভেঙে গিয়েছে। বছর দুয়েক আগে উখড়ায় বেপরোয়া বালির গাড়ির ধাক্কায় দুই পড়ুয়ার মৃত্যু হয়।

ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাণ্ডবেশ্বরে দু’টি ঘাট ইসিএলের, একটি রাজ্য সরকারের। সেগুলি ছাড়াও শ্মশান, গোবিন্দপুর এলাকায় বালি খাদান চলছে বলে অভিযোগ। ভোরে অবৈধ ভাবে বালি তুলে পাচার করা হচ্ছে। প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা যখনই অভিযানে যাচ্ছি, দুষ্কতীরা পালিয়ে যাচ্ছে।’’ রানিগঞ্জে ইসিএলের খনিতে বালি সরবরাহের বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার তারকেশ্বর রায় অভিযোগ করেন, হাড়াভাঙা ও তিরাটে একটি করে ঘাট ইসিএলের লিজ নেওয়া। কিন্তু আরও তিনটি ঘাট থেকে বেআইনি ভাবে বালি তুলে পাচার করা হচ্ছে। জামুড়িয়ার ছাতাধাওড়া, বাগডিহা, ভুরি, দরবারডাঙা, চুরুলিয়ার নানা ঘাট থেকেও অজয়ের বালি চুরি যাচ্ছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।

এলাকার সিপিএম নেতা মনোজ দত্তের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ এই কারবারে মদত দিচ্ছে। নির্দেশ অমান্য করে সমস্ত বালিঘাট থেকেই যন্ত্রের সাহায্যে বালি তোলা হচ্ছে। বারবার অভিযানের কথা শোনা যায়, কিন্তু কোনও ঘাট থেকে যন্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয় না!” প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চাননি। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) প্রলয় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘বালি চুরিতে কালাঝরিয়া প্রকল্পে সমস্যা নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) শঙ্খ সাঁতরার বক্তব্য, ‘‘পাণ্ডবেশ্বরে বালি চুরির অভিযোগ পেয়েই পুলিশ ও ব্লক ভূমি দফতরকে অভিযান চালাতে বলা হয়েছিল। তারা তা করেছে। নিয়মিত নজর রাখতে বলা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement