চোখে জল দিন, ‘অনুরোধ’ পুলিশের

গায়ক কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য হোক বা পিটের ট্যাঙ্কার উল্টে একই পরিবারের সাত জনের মৃত্যুর ঘটনা, সব ক্ষেত্রেই তদন্তকারীদের দাবি ছিল, চালকদের ‘রাত ঘুমে’র জন্যই ঘটেছে দুর্ঘটনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২২
Share:

প্রতীকী ছবি।

কোথাও চা-জল খাইয়ে ঘুম কাটানো। কোথাও বা ‘জল দিন’ বলে অনুরোধ। — রাজ্য জুড়ে নানা জেলায় চালকদের ‘ঘুম’ কাটাতে একাধিক এমন নানা দাওয়াই দিতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। এ বার চালকদের চোখের পাতা যাতে না জড়িয়ে যায় সে জন্য গভীর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ জলের বালতি বা বোতল হাতে দাঁড়িয়ে থাকছে।

Advertisement

গায়ক কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য হোক বা পিটের ট্যাঙ্কার উল্টে একই পরিবারের সাত জনের মৃত্যুর ঘটনা, সব ক্ষেত্রেই তদন্তকারীদের দাবি ছিল, চালকদের ‘রাত ঘুমে’র জন্যই ঘটেছে দুর্ঘটনা। শীতের রাতে চালকদের মধ্যে ঘুমের প্রবণতা বেশি থাকে। তাই রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ করপুরকায়স্থের নির্দেশেই দুর্ঘটনা কমাতে এই পথ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় জেলা পুলিশ। তা ছাড়া, দীর্ঘ দিন ধরে রাস্তার নানা মোড়ে দায়িত্ব সামলানো একাধিক পুলিশকর্মীর অভিজ্ঞতা, রাতভর জাতীয় সড়ক-রাজ্য সড়ক ধরে পাথর-বালিবোঝাই অসংখ্য ট্রাক, ডাম্পার-সহ নানা গাড়ি চলে। শীতের সময়ে রাস্তায় ভ্রমণ বা পিকনিকের গাড়িরও চাপ বাড়ে। কিন্তু, রাতভর গাড়ি চালানোর ধকল সহ্য করতে পারেন না অনেক চালকই। তাই অনেক সময়েই দেখা যায়, ভোরের দিকে ঘুম চোখে গাড়ি চালান অথবা খালাসির হাতে স্টিয়ারিং সঁপে দেন চালক।

কী রকম ভাবে চলছে এই উদ্যোগ? দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যাওয়া এক চালক তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানালেন। তিনি গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আচমকা ব্যারিকেড দেখে গাড়ি থামালেন। কর্তব্যরত পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারেরা গম্ভীর গলায় ‘অনুরোধ’ করেন, ‘চোখেমুখে ভাল করে জল দিন, একটু হেঁটে নিন। ঘুম ভাব কাটিয়ে স্টিয়ারিংয়ে হাত দিন।’ একই রকম অভিজ্ঞতা ঘটছে এসটিকেকে রোড ও বর্ধমান-আরামবাগ রোডের গাড়ি চালকদেরও। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “তল্লাশির সময় জামালপুরের আঝাপুর, শক্তিগড়-সহ নানা এলাকায় দেখা গিয়েছে, চালক ঘুমাচ্ছেন। আর নাবালক খালাসি পাথর বা লোহার পাত নিয়ে জাতীয় সড়ক দিয়ে যাচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।”

Advertisement

নবাবহাট-তেজগঞ্জের মত জায়গায় ভোর রাতে বারেবারে দুর্ঘটনাও ঘটে। জেলা পুলিশ জানায়, কুয়াশার জন্যও অনেক সময় দৃশ্যমানতা কমে যায়। তাতেও দুর্ঘটনা বাড়ে। সে জন্য জেলা পুলিশকে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ডিজি। শুক্রবারই এক্সপ্রেসওয়ের উপরে দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে দু’জনের। এ ক্ষেত্রেও চালক দায়ী করেছেন, কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়াকেই।

এর আগে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে চালকদের গরম চা দিতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। চোখে জল দেওয়ার নিদান দিয়েছে বীরভূম পুলিশও। এ বার সেই তালিকায় যোগ হল পূর্ব বর্ধমানের নামও। পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের পালশিট টোলপ্লাজায়, বর্ধমান-আরামবাগ রোডের বাঁকুড়া মোড়ে ওই কাজ করা হচ্ছে। এসটিকেকে রোডের উপরে সব থানা নির্দিষ্ট দিন মেনে চালকদের চোখে-মুখে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন