একটি শাবল, একটি টাঙ্গি, ন’টি লাঠি ও গোটা কয়েক রড। ঘটনাস্থল থেকে এই সবই উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছিল পুলিশ। রবিন কাজি খুনে ব্যবহৃত সেই সব অস্ত্রগুলি মঙ্গলবার আদালতে পেশ করা হল।
আসানসোল আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক (২) সুনির্মল দত্তের এজলাসে এই মামলার শুনানিতে এর আগে দু’জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। এ দিন তৃতীয় সাক্ষী পূর্ণচন্দ্র মণ্ডলকে পেশ করেন সরকারি আইনজীবী বিনয়ানন্দ চট্টোপাধ্যায়। জামুড়িয়ার এক সময়ের ডিওয়াইএফ নেতা পূর্ণচন্দ্রবাবু এখন তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ঘটনা নিয়ে তিনি যে বয়ান এ দিন আদালতে দেন, তার সঙ্গে আগের সাক্ষীদের বয়ানের মিল রয়েছে। ঘটনার বিবরণ দেওয়ার সময়ে জনা পাঁচেক অভিযুক্তের নাম উল্লেখ করেন তিনি। বিচারক জানতে চান, ওই অভিযুক্তদের তিনি আদালত কক্ষে দেখতে পাচ্ছেন কি না। পূর্ণবাবু প্রত্যেককে আঙুল তুলে চিনিয়ে দেন। তিনি আরও দাবি করেন, ঘটনার দিন সিপিএম নেতা মনোজ দত্তকে ঘটনাস্থলে না দেখলেও এর পিছনে তাঁর হাত ছিল বলে মনে করেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালীন সাক্ষীকে করা সরকারি আইনজীবীর কয়েকটি প্রশ্ন নিয়ে আপত্তি জানান অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী শেখর কুণ্ডু। পরে সাক্ষীকে জেরা শুরু করেন তিনি। শেখরবাবু পূর্ণচন্দ্রবাবুর কাছে জানতে চান, তাঁর পেশা কী। পূর্ণচন্দ্রবাবু জানান, তিনি এক জন হাতুড়ে। গ্রামে তাঁর একটি চেম্বারও রয়েছে বলে জেরায় স্বীকার করেন তিনি। এর পরেই শেখরবাবু জানতে চান, রবিন কাজিকে তিনি আহত অবস্থায় দেখেছিলেন কি না। শরীরের জখম অংশ দেখেছিলেন কি না। সাক্ষী দাবি করেন, তিনি তা দেখেননি। শেখরবাবু আরও জানতে চান, রবিন কাজিকে কী দিয়ে মারা হয়েছিল। সাক্ষী জানান, লাঠি, রড ও শাবল।
৯ মার্চ শুনানি চলাকালীন বিচারক সরকারি আইনজীবীকে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলি আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ দিন সাক্ষীকে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী জেরা করার সময়ে অস্ত্রগুলি বিচারকের সামনে পেশ করা হয়। সাক্ষীকে দিয়ে সেগুলি শনাক্তও করানো হয়। শেখরবাবু সাক্ষীর কাছে অস্ত্রগুলিতে তাঁর সই করা লেবেল সাঁটা আছে কি না জানতে চান। যদিও বেশ কিছুক্ষণ খুঁজেও সে রকম কোনও লেবেল পাওয়া যায়নি। গোটা সতেরো প্রশ্নের পরে শেখরবাবু সাক্ষীকে উদ্দেশ্য করে দাবি করেন, যেহেতু তিনি এখন বিরোধী রাজনীতির লোক, তাই এই মামলা মিথ্যে সাজানো হয়েছে। যদিও তা ঠিক নয় বলেই দাবি করেন সাক্ষী।
এ দিন কোর্টে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলি দেখে রীতিমতো শিউরে ওঠেন রবিন কাজির স্ত্রী লতিফা কাজি। তিনি পরিচিতদের কাছে বারবার জানতে চান, এই অস্ত্র দিয়েই তাঁর স্বামীকে খুন করা হয়েছিল কি না। গত বিধানসভা ভোটের আগে দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে জামুড়িয়ার বাড়ুল গ্রামে প্রচারে গিয়ে খুন হন তৃণমূল নেতা রবিন কাজি। এ দিন নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে কোর্টে আসেন জামুড়িয়ার এ বারের তৃণমূল প্রার্থী ভি শিবদাসন।