নির্দেশিকায় ধন্দ, নোটের ফেরে বিয়েবাড়ি

হাতে বিয়ের কার্ড। মাঝে সময় মাত্র আর এক দিন। ক্যাটারিং, ফুল বিক্রেতা—সকলেই আগ্রিম টাকার জন্য তাড়া দিচ্ছেন। দিন কয়েক ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা উড়ো খবর ঘুরতে দেখে খানিক স্বস্তি মিলেছিল।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৬ ০২:২৬
Share:

ব্যাঙ্কের সামনে বিয়ের কার্ড হাতে। দুর্গাপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

হাতে বিয়ের কার্ড। মাঝে সময় মাত্র আর এক দিন। ক্যাটারিং, ফুল বিক্রেতা—সকলেই আগ্রিম টাকার জন্য তাড়া দিচ্ছেন। দিন কয়েক ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা উড়ো খবর ঘুরতে দেখে খানিক স্বস্তি মিলেছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, তা গুজব। বৃহস্পতিবারই কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে, বিয়ের জন্য আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত তোলা যাবে। কিন্তু তারপরেও টাকা মিলছে না। অগত্যা ব্যাঙ্কের সামনে হাহুতাশ করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকছে না বলে জানান দুর্গাপুরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানবাড়ির সদস্যরা।

Advertisement

বিধাননগরের বাসিন্দা সমীর বসু। দুর্গাপুরের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যগী সংগঠনের অন্যতম কর্মকর্তা। সামনেই মেয়ের বিয়ে। শুক্রবার সকালে বিয়ের কার্ড হাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সিটি সেন্টার শাখায় লাইন দাঁড়িয়েছিলেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে ব্যাঙ্কের কাউন্টারের কাছে পৌঁছতেই অবশ্য ব্যাঙ্ককর্মীরা জানিয়ে দিলেন, ‘কোনও লিখিত নির্দেশিকা আসেনি। টাকা দেওয়া যাবে না।’

অথচ বৃহস্পতিবারই কেন্দ্রীয় অর্থসচিব শক্তিকান্ত দাস ঘোষণা করেন, বিয়ের জন্য আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত টাকা তোলা যাবে। তবে তার জন্য গ্রাহককে প্রমাণপত্র হিসেবে বিয়ের কার্ড, প্যান কার্ড, কেওয়াইসি-র কাগজপত্র ব্যাঙ্কে দেখাতে হবে। সে সব থাকা সত্ত্বেও টাকা না পেয়ে হতাশ সমীরবাবুর আক্ষেপ, ‘‘সামনে মেয়ের বিয়ে। নিজের গচ্ছিত টাকা তুলতে পারছি না। ভীষণ অসহায় লাগছে।’’

Advertisement

তবে কেন্দ্রীয় অর্থসচিবের ঘোষণাটি নিয়ে শুক্রবার দিনভর ধোঁয়াশা তৈরি হয় দুর্গাপুরে। কারণ? এক গ্রাহক জানান, সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া মারফত একটি খবর আসে, নোট-বাতিলের চক্করে কারও বিয়ে আটকে গেলে তিনি যেন জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপরে জেলাশাসকের নির্দেশ মিললেই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলা যাবে। কিন্তু শুক্রবার ব্যাঙ্কে গিয়েও পাত্র-পাত্রীর পরিবারের লোকজন বুঝতে পারেন, ওই খবরটি আসলে গুজব। শুক্রবারও দিনভর ব্যাঙ্কে ব্যাঙ্কে ঘুরে শুনতে হয়েছে, কেন্দ্রীয় অর্থ সচিবের কোনও নির্দেশ আসেনি। এরপরেই শুরু হয় চাপানউতোর। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘গুজবে কান দেবেন না। অর্থ সচিব বাস্তবেই বিয়েবাড়ি সংক্রান্ত নির্দেশ দিয়েছেন।’’ তবে সেই নির্দেশিকা কবে ব্যাঙ্কে পৌঁছবে, তা অবশ্য বলতে পারেননি ব্যাঙ্ক কর্তারা।

এ দিন টাকা পাননি সগড়ভাঙার গোপাল ঘোষও। সোমবার তাঁর ছেলের বিয়ে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা শুনে খানিক স্বস্তি মেলে। শুক্রবার সকালেই যাবতীয় প্রমাণ হাতে নিয়ে তিনি পৌঁছে যান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের দুর্গাপুর স্টেশন লাগোয়া এলাকার একটি শাখায়। কিন্তু সেখানে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানান, এখনও লিখিত নির্দেশ আসেনি। গোপালবাবুকে ব্যাঙ্কের প্রধান শাখায় যোগাযোগ করতে বলা হয়। সোজা সেখানে দৌড়ন তিনি। কিন্তু সেখানেও তাঁকে জানানো হয়, ‘‘লিখিত নির্দেশিকা পৌঁছলেই টাকা দিয়ে দেওয়া হবে।’’ দিনভর গলদঘর্ম হয়ে গোপালবাবু বলেন, ‘‘আর কবে টাকা পাব! সোমবার তো বিয়ে। কী যে আতান্তরে পড়েছি।’’

এই পরিস্থিতিতে শহরবাসীর সকলেরই চিন্তা, ‘টাকার ফেরে বিয়েটা সুষ্ঠু ভাবে হবে তো।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন