West Bengal Lockdown

লাগাতার প্রচারেও ফিরছে না সচেতনতা, আক্ষেপ

পাকড়াও করা মোটরবাইক চালকদের কেউই কেন পথে নেমেছেন, তার সদুত্তর দিতে পারেননি, দাবি পুলিশের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল ও জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২০ ০১:১৩
Share:

নিয়ম না মেনে এ ভাবেই চলছে বাজার-হাট। কুলটিতে বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

র‌্যাফ নামিয়ে পুলিশের ‘নাকা চেকিং’ চলছিল আসানসোলের ভগৎ সিংহ চৌমাথা মোড়ে জিটি রোডে। পাকড়াও করা মোটরবাইক চালকদের কেউই কেন পথে নেমেছেন, তার সদুত্তর দিতে পারেননি, দাবি পুলিশের। শেষমেশ তাঁদের সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

দৃশ্য দুই: ‘গন্ডিবদ্ধ’ এলাকা নুরুদ্দিন রোডেও দেখা যায় মানুষের জটলা। শেষমেশ আইনি পদক্ষেপ করার কথা বলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। — এমন এক-দু’টো দৃশ্য নয়। জেলার নানা প্রান্তে ‘লকডাউন’ না মানার এমন ছবি আকছার দেখা যাচ্ছে, অভিজ্ঞতা পুলিশকর্মী থেকে প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের।

পুলিশ ও আসানসোল পুরসভার কর্তাদের একাংশের আক্ষেপ, করোনা-সতর্কতাবিধি বারবার নানা ভাবে প্রচার করা হচ্ছে। প্রচার চালাচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও। কিন্তু জনসাধারণের একাংশের হুঁশ ফেরানো যাচ্ছে না। এমনকি, নির্দেশ মানার কথা বলতে গেলে বচসা তৈরি হচ্ছে। যেমন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় কুলটির চিনাকুড়ি, রাধানগর রোডে কার্যত গায়ে-গায়ে দাঁড়িয়ে বাজার করতে দেখা যায় ‘মাস্ক’হীন এলাকাবাসীর একাংশকে। পুলিশ নিয়ম মানতে বললে বচসা হয়।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সামাজিক-দূরত্বও অনেক ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। বিশেষ করে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সামনে ‘জনধন প্রকল্প’-এর টাকা তোলার ভিড় জমছে। পাশাপাশি, বাজারে ‘গন্ডি’ আঁকা থাকলেও, ক্রেতাদের বড় অংশই সেখানে দাঁড়াচ্ছেন না বলে অভিযোগ। এই ছবি দেখা গিয়েছে আসানসোলের ইস্টার্ন রেলওয়ে বাজার, কোর্টবাজার, নিয়ামতপুর বাজার, হরিপুর বাজার, জামুড়িয়া হাট প্রভৃতি এলাকায়। হরিপুর হাটের বিক্রেতা জগন্নাথ কুণ্ডু, শঙ্কর সাউদের আক্ষেপ, ‘‘বিক্রেতারা বিধি মেনেই ‘মাস্ক’ পরছেন। কিন্তু ক্রেতাদের নিয়ম মানানোটা সম্ভব নয়।’’ হরিপুর পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান গোপীনাথ নাগের আক্ষেপ, ‘‘রাস্তার দু’পাশে হাট স্থানান্তর করা হয়েছে। ক্রেতাদের দাঁড়ানোর জন্য ‘সার্কল’ কাটা হয়েছে। এ সবের ফলে কিছুটা সচেতনতা বেড়েছে। কিন্তু অনেকেই তা মানছেন না।’’ বিডিও (পাণ্ডবেশ্বর) কৌশিক সমাদ্দার জানান, হাট ফাঁকা জায়গায় সরানোর প্রস্তুতি শুরু করেছেন।

জামুড়িয়া বাজারের আনাজ বিক্রেতা নাসিম রাইন, মৌসাহেন সাউয়েরা বলেন, ‘‘আমরা অসহায়। নিয়ম মানানোর ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।’’ জামুড়িয়ার বাসিন্দা তথা আসানসোল পুরসভার ১ নম্বর বরো চেয়ারম্যান শেখ সানদার বলেন, ‘‘জামুড়িয়া থানায় হওয়া বৈঠকে দোকানদারদের নন্ডি রোডের রেল লাইনের ধারে, জামুড়িয়া-হরিপুর রাস্তায় ব্যাঙ্কের পাশে, জামুড়িয়া-দোমহানি রাস্তার জোড়া পুকুর পাড়ে এবং জামুড়িয়া-রানিগঞ্জ রাস্তার আখলপুর সেতুর কাছে ভাগ করে বসার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’’ প্রস্তাব খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন বিডিও (জামুড়িয়া) কৃশাণু রায়।

তবে জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘অযথা জটলা করা যাবে না। সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে।’’ তিনি জানান, আজ, শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে জেলার নানা জনবহুল এলাকায় জীবাণুনাশক ছড়ানো হবে। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার নিয়ম না মানা জনতাকে ‘সতর্ক’ করে বলেন, ‘‘বাইরে বেরোলে ‘মাস্ক’ পরতেই হবে। না হলে পুলিশ পদক্ষেপ করবে।’’ জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ব্যাঙ্কের সামনের ভিড় নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিভিন্ন এলাকায় ‘মাইকে’ ঘোষণা করা হবে, যাতে ভাগ-ভাগ করে জনতা টাকা তুলতে আসে।

যদিও এ সমস্ত পদক্ষেপের পরে জনতার হুঁশ আদৌ ফেরে কি না, তা সময়ই বলবে, মনে করছেন বাসিন্দাদেরই একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন