Pradhan Mantri Awas Yojana

বাড়ির টাকা ফেরানোর আর্জি নেতার স্ত্রীর

দেবব্রত গুসকরা শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাশাপল্লির বাসিন্দা। পাঁচ বছর ধরে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মুখার্জি পাড়ায় দু’কামরার ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে থাকেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুসকরা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৩ ০৭:২৬
Share:

টাকা ফেরানোর আর্জি তৃণমূল নেতার স্ত্রীর। প্রতীকী চিত্র।

‘সকলের জন্য বাড়ি’ প্রকল্পের টাকা পেয়েও তা ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন গুসকরার তৃণমূল শহর সভাপতি দেবব্রত শ্যামের স্ত্রী শুচিতা শ্যাম। গুসকরা পুরসভার অস্থায়ী কর্মী দেবব্রতের বক্তব্য, ‘নৈতিক কারণেই’ এই সিদ্ধান্ত। তাঁর কথায়, ‘‘আমার দাদা তৃণমূল কাউন্সিলর। আমি দলের শহর সভাপতি। শহরে এখনও এমন অনেক গরিব মানুষ রয়েছেন, যাঁদের মাথায় আচ্ছাদন নেই। বাড়ি প্রকল্পের তালিকায় তাঁদের নাম নেই। নৈতিক কারণেই তাঁদের আগে আমি সরকারি বাড়ি নিতে পারি না। স্ত্রীকে বাড়ি না নেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। তিনি তা রেখেছেন।’’

Advertisement

দেবব্রত গুসকরা শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাশাপল্লির বাসিন্দা। পাঁচ বছর ধরে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মুখার্জি পাড়ায় দু’কামরার ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে থাকেন তিনি। দেবব্রত পুরসভার জল বিভাগের অস্থায়ী কর্মী। বেতন মাসে সাত হাজার টাকা। গত বছরের অক্টোবরে তাঁকে দলের গুসকরা শহর সভাপতি করে তৃণমূল। তাঁর দাদা সুব্রত পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২০-এ পুরসভার সমীক্ষা অনুযায়ী ‘সকলের জন্য বাড়ি’ প্রকল্পের উপভোক্তাদের তালিকায় নাম ওঠে শুচিতার। তিনি বলেন, “আমরা মাসে তিন হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া দিই। একটি বাড়ি খুব প্রয়োজন। আমি অসুস্থ। স্বামী দলীয় পদ পাওয়ার আগেই, বাড়ির জন্য পুরসভায় আবেদন করেছিলাম। গত জানুয়ারিতে আমার অ্যাকাউন্টে বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তির ৪৫ হাজার টাকা ঢোকে। তার পরে, স্বামীর অনুরোধেই তা ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিই।”

Advertisement

আবাস প্রকল্পে দুর্নীতির ভুরিভুরি অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে। কোথাও অযোগ্যদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা, কোথাও আবার অর্থের বিনিময়ে বাড়ি পাইয়ে দেওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে শাসক দলের অনেক নেতার নামে। ব্যতিক্রম নয় পূর্ব বর্ধমানও। এই প্রেক্ষিতে দেবব্রত ও তাঁর স্ত্রীর পদক্ষেপ জেলায় তৃণমূলের ভাবমূর্তি উদ্ধারে সহায়ক হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিষয়টিকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে তৃণমূল। দলের জেলা মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে দেবব্রত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, মানুষের প্রতি কতটা দায়বদ্ধ হলে এই কাজ করা যায়। প্রয়োজন থাকলেও তিনি বাড়ি নেননি। এতে বোঝা যায়, তৃণমূলের সৈনিকেরা মানুষের কথা চিন্তা করেন। মানুষের জন্য কাজ করেন।” সুব্রত বলেন, “ভাইয়ের এই সিদ্ধান্তের ফলে ভবিষ্যতে কেউ আমাদের দিকে আঙুল তুলতে পারবেন না।” গুসকরার পুরপ্রধান, তৃণমূলের কুশল মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাড়ি না নেওয়ার আবেদন করেছেন শুচিতা। টাকা ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।”

দেবব্রতের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেও আবাস প্রকল্প নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধতে ছাড়েনি বিজেপি। দলের গুসকরা নগর মণ্ডল কমিটির সভাপতি পতিতপাবন হালদার বলেন, ‘‘পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও অনেক তৃণমূল নেতার তালিকায় নাম ছিল। সরকারি বাড়িও নিয়েছেন। এটা আসলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা। মানুষ সবই জানেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন