স্বামীকে খুন করে আত্মসমর্পণ থানায়

রবিবার রাত পৌনে ১২টা নাগাদ বর্ধমান ১ ব্লকের বেচারহাট-কুণ্ডুপাড়ার বাসিন্দা নমিতা দে-র ওই কথা শুনে অবাক হন পুলিশকর্মী। পরে নমিতাদেবীদের বাড়ি থেকে বধূটির স্বামী শ্যামলকুমার দে (৩৫)-র রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৭ ১২:৩০
Share:

থানার সামনে এসে সাইকেল থামল। সাইকেল থেকে নেমে এক মহিলা সোজা এলেন সদর দরজায় দাঁড়ানো কনস্টেবলের কাছে। বলে উঠলেন, ‘‘বর পা দিয়ে পিষে মারছিল। হাতের কাছে হাতুড়ি পেয়ে ছুড়ে দিয়েছি। মাথায় লেগে মরে গিয়েছে লোকটা!’’

Advertisement

রবিবার রাত পৌনে ১২টা নাগাদ বর্ধমান ১ ব্লকের বেচারহাট-কুণ্ডুপাড়ার বাসিন্দা নমিতা দে-র ওই কথা শুনে অবাক হন পুলিশকর্মী। পরে নমিতাদেবীদের বাড়ি থেকে বধূটির স্বামী শ্যামলকুমার দে (৩৫)-র রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল এ বিষয়ে বলেন, ‘‘স্বামীকে খুন করার পরে ওই মহিলা থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন। খুনের মামলা শুরু করা হয়েছে। কী কারণে এই খুন তা জানতে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে ওই মহিলাকে।’’ শ্যামলবাবুর দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

বছর বারো আগে বিয়ে হয়েছিল নমিতাদেবী আর শ্যামল বাবুর। বাড়ি থেকে কয়েক পা দূরেই নমিতাদেবীর বাপেরবাড়ি। বিয়ের পরে আড়াই বছর সেখানেই থাকতেন ওই দম্পতি। পরে ভাড়াবাড়িতে উঠে যান। বছর ছ’য়েক আগে নিজের বাড়ি তৈরি করেন পেশায় রাজমিস্ত্রি শ্যামল। তাঁদের একটি ছেলে রয়েছে। বয়স এগারো। বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে ছেলেটি।

পুলিশ জানাচ্ছে, রবিবার রাতে যখন ঘটনাটি ঘটে ছেলেটি মামাবাড়িতে ছিল। নমিতাদেবীর বাবা নৃপেন পাল বলেন, “প্রায় প্রতি রাতেই মেয়ে-জামাইয়ের মধ্যে অশান্তি, হাতাহাতি হতো। তাই নাতি মাঝেমধ্যেই আমার কাছে থাকত।’’

পুলিশের দাবি, জেরায় বছর আঠাশের নমিতা তাদের কাছে দাবি করেছেন, বিবাহবর্হিভূত সম্পর্ক ছিল শ্যামলের। তা নিয়ে কিছু বললেই জুটত মার। নমিতাদেবীর মা আলো পালের অভিযোগ, “গত কয়েক মাস সংসারে একটা টাকাও দেয়নি শ্যামল। উল্টে, ঘরের সোনাদানা, কাঁসা-পিতলের বাসন যা ছিল, সমস্তই প্রায় বিক্রি করে দিচ্ছিল। মেয়ে ঠোঙা তৈরি করে কোনও মতে সংসার চালাত। আর আমাদের কাছে খেত। তার পরেও মেয়েকে প্রত্যেক দিন রাতে মদ-গাঁজা খেয়ে ওকে মারত জামাই।”

নমিতা জেরায় পুলিশকে জানিয়েছেন, রবিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁকে মাটিতে ফেলে মারতে শুরু করেন শ্যামল। গলায় পা দিয়ে চেপে ধরেন। পায়ের চাপে শ্বাস বন্ধ হতে বসেছিল তাঁর। হাতড়ে হাতড়ে হাতে পান হাতুড়ি। সেটা ছুড়ে মারতে ঘুরে পড়ে যান শ্যামল। আর ওঠেননি। স্বামী মারা গিয়েছেন বুঝে ধাতস্থ হতে কিছুটা সময় নেন নমিতা। তার পরে রওনা দেন প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে থানার উদ্দেশে।

এক পুলিশ-কর্তার কথায়, ‘‘ভদ্রমহিলা আমাদের বলেছেন, ‘বিয়ের পর থেকেই অত্যাচার সহ্য করছি। আর পারলাম না’! উনি সত্যি বলছেন কি না, দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন