মণ্ডপে দেখতে না পেয়ে বাড়ি ফিরে ন’বছরের ছেলে দেখেছিল, মায়ের রক্তাক্ত দেহ পড়ে। ভাতারের মান্দারবাটি গ্রামের বধূ ঝুমারানি খাঁ খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পড়শি যুবক সঞ্জয় খাঁ-কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নিহত বধূর পরিজনদের প্রথম থেকেই দাবি ছিল, বিবাহিত সঞ্জয়ের দেওয়া প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বিধবা ঝুমারানি। সে জন্যই কালীপুজোর রাতে বাড়িতে একা পেয়ে তাঁকে আক্রোশবশত খুন করেছেন ওই যুবক। ঘটনার পরে মৃতার পরিজনদের এই দাবির সঙ্গে একমত হতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু, খুনের তিন দিন পর সেই সঞ্জয়কেই ভাতার থানার পুলিশ গ্রেফতার করল। পুলিশের দাবি, দু’দিন ধরে টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর তদন্তকারী অফিসারদের সামনে দোষ কবুল করেন ওই যুবক। তার পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার ধৃতকে বর্ধমান আদালতে পাঠালে বিচারক পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ আদালতে জানিয়েছে, ধৃত ধারালো কাটারি দিয়ে ওই বধূকে খুন করেছে। বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, “প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরে প্রত্যাঘাত করতেই সুযোগ বুঝে ওই বধূকে খুন করেছে সঞ্জয়।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পাড়ার ১৪টি পরিবার নিয়ে কালীপু্জোর আয়োজন করা হয় মান্দারবনির গ্রামে। গত শনিবার রাতে কালীপুজো দেখতে মন্দিরে গিয়েছিলেন বছর তিরিশের ঝুমারানির শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বাড়িতে একাই ছিলেন ঝুমারানি। মৃতার শ্বশুর ধনহরি খাঁ পুলিশকে জানিয়েছিলেন, বড় ছেলের দুই নাতি-নাতনিকে নিয়ে তিনি কালী মন্দিরেই ছিলেন। পুজো চলাকালীন গভীর রাতে মন্দিরে মাকে দেখতে না পেয়ে নাতি কান্নাকাটি করতে থাকলে তিনি তাকে নিয়ে বাড়ি চলে আসেন। বাড়িতে ঢুকেই সামনের দিকে ঘরের ভেজানো দরজা খুলেই মৃতার ছেলে সূর্য দেখে, ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় মায়ের দেহ পড়ে রয়েছে। তার চিৎকার শুনে ধনহরিবাবু ঘরে গিয়ে দেখেন, পুত্রবধূর সারা শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর দাগ। ঝুমারানির ডান হাতের বুড়ো আঙুলটি সম্পূর্ণ ভাবে কেটে গিয়েছিল।
গ্রামবাসীদের চাপে পরের দিন পুলিশ কুকুর নিয়ে গিয়ে তদন্ত করে ভাতার থানার পুলিশ। পুলিশের কাছে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের নামে অভিযোগ করেছিলেন নিহতের শ্বশুর। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, স্বামীর মৃত্যুর পরে ঝুমারানি বর্ধমানের আলমগঞ্জে একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন। তাঁর দুই ছেলে-মেয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকত। মাসে দু’বার তিনি শ্বশুরবাড়িতে আসতেন। ধৃত বিবাহিত যুবক সঞ্জয় বেশ কয়েক বছর ধরে নানা ভাবে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন ঝুমারানির সঙ্গে। কিন্তু ওই বধূ বারবার সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। এমনকী আলমগঞ্জে গিয়েও সঞ্জয় তাঁকে উক্ত্যক্ত করতেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের সময় নিহতের মেয়ে ঝুমা সঞ্জয়ের সম্পর্কে প্রথম তথ্য দেয়। সে-ই পুলিশকে জানায়, সঞ্জয় মাকে খুব জ্বালাতেন। মাসিকে সে কথা মা জানিয়েছিলেন। ঝুমার মাসি রুমা মাঝিও পুলিশকে সঞ্জয়ের সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। এর পরেই পুলিশ সঞ্জয়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
খুনের ঘটনাটি ঘটে শনিবার রাত পৌনে একটা নাগাদ। তদন্তকারীদের দাবি, জেরার মুখে সঞ্জয় তাঁদের জানিয়েছেন, বাড়ির সবাই চলে যাওয়ার পরে তিনি ভিতরে ঢুকে লুকিয়েছিলেন। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে দেখতে পান, ঝুমারানি ভিতরে কাজ করছেন। তখনই সঞ্জয় কাটারি দিয়ে হামলা চালান। প্রথমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও মাথায় আঘাত লাগার পরে ঝুমারানি নেতিয়ে পড়েন। তখন সঞ্জয় এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকেন তাঁর শরীরে।