Durgapur Steel Plant

ডিএসপিতে দুর্ঘটনা, নিরাপত্তা চেয়ে ক্ষোভ

ডিএসপিতে ২৯ ফেব্রুয়ারি সকালে স্টিল মেল্টিং শপের বেসিক অক্সিজেন ফার্নেস বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটে। কনভার্টার-২ থেকে আচমকা বিপুল পরিমাণে জল ‘লিক’ হতে শুরু করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৪ ০৮:৪১
Share:

ডিএসপিতে মিছিল। নিজস্ব চিত্র।

দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা দুর্গাপুর স্টিল প্লান্ট (ডিএসপি) ও অ্যালয় স্টিল প্লান্ট (এএসপি)-এ দুর্ঘটনা লেগেই আছে। গত দু’সপ্তাহে দু’টি কারখানায় মোট তিনটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। হাসপাতালে ভর্তি আরও তিন জন। নিরাপত্তা-সহ নানা দাবিতে শ্রমিক সংগঠনগুলি একযোগে বুধবার ডিরেক্টর ইন-চার্জের দফতরে বিক্ষোভ দেখায়। তাদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষকে সুরক্ষার অভাবের কথা বার বার বলা হলেও, কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যদিও কর্তৃপক্ষ গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

Advertisement

ডিএসপিতে ২৯ ফেব্রুয়ারি সকালে স্টিল মেল্টিং শপের বেসিক অক্সিজেন ফার্নেস বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটে। কনভার্টার-২ থেকে আচমকা বিপুল পরিমাণে জল ‘লিক’ হতে শুরু করে। জল গলিত ধাতুর সংস্পর্শে আসা মাত্র বিস্ফোরণ হয়। তাতে জখম হন সিনিয়র ম্যানেজার, সিনিয়র টেকনিশিয়ান, ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস-সহ পাঁচ জন। তাঁদের ভর্তি করা হয় বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সুস্থ হয়ে ওঠেন ঠিকা শ্রমিক। কিন্তু ৬ ও ১১ মার্চ যথাক্রমে ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস সর্বশিৎ ধাঙর এবং বিনয়কুমার হরিজনের মৃত্যু হয়। বাকি দু’জনের অবস্থা এখনও গুরুতর বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।

এই ঘটনার তদন্তে ডিএসপি কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি গঠন করেন। দুই আধিকারিককে ‘সাসপেন্ড’ করা হয়। তবে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি। শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, দুর্ঘটনার কয়েক দিন আগে থেকেই অল্পস্বল্প জল ‘লিক’ করছিল। তা বন্ধ করতে উদ্যোগী হননি কর্তৃপক্ষ। পর্যাপ্ত শ্রমিক না থাকায় বেআইনি ভাবে ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিসদের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় কাজে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলাবর সন্ধ্যায় শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে দাবি করেন, মৃত দু’জনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের এক জনকে স্থায়ী চাকরি দিতে হবে। ডিএসপি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তবে ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিসের পরিবারের কাউকে স্থায়ী চাকরি দেওয়ার নিয়ম নেই। ওই দাবি বিষয়টি সেলের কর্পোরেট অফিসে জানানো হয়েছে। এ দিন রাতেই ফের দুর্ঘটনায় আরও এক জন ঠিকা শ্রমিক জখম হন। তিনি ইএসআই হাসপাতালে ভর্তি।

Advertisement

বুধবার দুপুরে মঞ্চের তরফে সাতটি শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করে যান ডেরেক্টর ইন-চার্জের দফতরে। মৃত দুই ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিসের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, পরিবারের এক জনকে চাকরি, দুর্ঘটনা রোধে উপযুক্ত সুরক্ষাবিধি বলবৎ করা প্রভৃতি দাবি জানান তাঁরা। সিটুর বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়, আইএনটিইউসি-র রজত দীক্ষিত, এইচএমএসের সুকান্ত রক্ষিত, এআইটিইউসি-র শম্ভুচরণ প্রামাণিক, বিএমএসের মানস চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিশ্বরূপ বলেন, “ডিএসপি, এএসপিতে ধারাবাহিক ভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে। শ্রমিকেরা আতঙ্কে রয়েছেন।” শ্রমিক সংগঠনের তরফে বৈঠকে বার বার কর্তৃপক্ষকে সুরক্ষার বিষয়ে জোর দেওয়ার কথা বলা হলেও কর্তৃপক্ষ উদাসীন বলে অভিযোগ বিশ্বরূপের। রজতের দাবি, “দুর্ঘটনার সম্ভাবনার কথা বিভিন্ন সময়ে কর্তৃপক্ষকে বলার পরেও, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। প্রতিবাদ করলে শ্রমিক নেতাদের শাস্তির হুমকি দেওয়া হয়। চার্জশিট ধরানো হয়।”

ডিএসপি-র মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বেদবন্ধু রায়ের দাবি, “নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনও রকম আপস করা হয় না। সতর্ক রয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলি।” তিনি জানান, তদন্ত কমিটি শুধু কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা খুঁজে বার করে না। ফের যাতে এমন দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য কী পদক্ষেপ করা উচিত, তা-ও জানিয়ে থাকে। সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে বলে জানান বেদবন্ধু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন