পদে থেকেও দফতরে নেই, থমকে কাজ

খাতায়-কলমে তাঁরা এখনও পঞ্চায়েতের পদাধিকারী। তাঁদের সইসাবুদের উপরে কাজকর্ম নির্ভর করছে। তবু কেউ দলের মুখ চেয়ে, কেউ বা অশান্তির আশঙ্কায় আসছেন না পঞ্চায়েতে। থমকে গিয়েছে পঞ্চায়েতের কাজকর্ম। এঁরা হলেন বিদায়ী পঞ্চায়েতের প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বা অন্য পদাধিকারী।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৮ ০২:১৭
Share:

খাতায়-কলমে তাঁরা এখনও পঞ্চায়েতের পদাধিকারী। তাঁদের সইসাবুদের উপরে কাজকর্ম নির্ভর করছে। তবু কেউ দলের মুখ চেয়ে, কেউ বা অশান্তির আশঙ্কায় আসছেন না পঞ্চায়েতে। থমকে গিয়েছে পঞ্চায়েতের কাজকর্ম। এঁরা হলেন বিদায়ী পঞ্চায়েতের প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বা অন্য পদাধিকারী।

Advertisement

সদ্য শেষ হওয়া পঞ্চায়েত ভোটে এঁদের মধ্যে কেউ টিকিট পাননি, কেউ হেরে গিয়েছেন। আবার কেউ-কেউ নির্দল প্রতীকে দাঁড়িয়ে ভোটে লড়েছেন। কিন্তু যে বোর্ডের মেয়াদ অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত, সেই বোর্ডে ওঁরা কতটা সক্রিয় থাকবেন তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জেলা প্রশাসনের অন্দরে। সে কারণে গত সপ্তাহে জেলার উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠকে বিডিওদের বাড়তি উদ্যোগী হওয়ার জন্য বলেছেন জেলা প্রশাসন।

আউশগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভানেত্রী আয়েশা খাতুন এ বার তৃণমূলের হয়ে টিকিট পাননি। ভোটের পর থেকে পঞ্চায়েত সমিতিতে তিনি পা রাখেননি বললেই চলে। তাঁর কথায়, “প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করছি। কী করব বুঝতে পারছি না।” ওই ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির প্রতিটি আসন ‘বিরোধীশূন্য’ ছিল। বেশির ভাগ পঞ্চায়েত প্রধানকে তৃণমূল টিকিট দেয়নি। ওই সব প্রধানেরাই পঞ্চায়েত যাওয়া কার্যত ছেড়ে দিয়েছে। মেমারির বাগিলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান বন্দনা সিংহ তৃণমূলের প্রার্থী হতে না পেরে নির্দল প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “ওই পঞ্চায়েতে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত কাজ করার পরিবেশ নেই। সে জন্য যাচ্ছি না।” ভাতারের আমারুণ ১ পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান বিনয় রায় বলেন, “আমি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত কাজ করতে চাই। পঞ্চায়েত দফতরেও যাচ্ছি। নবনির্বাচিতরা বাধা দিলে পঞ্চায়েতে যাব না।” বিনয়বাবু ২০১৩ সাল থেকে ওই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ছিলেন। পরে প্রধান হন। কিন্তু দল তাঁকে এ বার প্রার্থী করেনি। মেমারির নিমো ২, দুর্গাপুর, দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত সিপিএমের দখলে ছিল। সেখানকার প্রধানরা পঞ্চায়েতে গেলেও কোনও ঝুঁকি নিচ্ছেন না। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দফতরে যেতে পারলেও কাজের ঝুঁকি নেওয়া যাবে না বলে দল থেকে জানানো হয়েছে। যে কোনও সময় অপবাদ দিয়ে ফাঁসানোর শঙ্কা আছে।”

Advertisement

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ভোটের জন্য পঞ্চায়েতের বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ আটকে রয়েছে। ১০০ দিনের কাজ থেকে মুরগির ছানা বিলিও সুষ্ঠু ভাবে করা যাচ্ছে না। প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর সূত্রে জানা যায়, জুলাই মাসের মধ্যে সাড়ে ৭ হাজার উপভোক্তাকে ১৮ হাজার মুরগির ছানা বিলি করার কথা। কিন্তু তা হবে কি না, সে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। দফতরের কর্তাদের কথায়, “উপভোক্তাদের নাম পঞ্চায়েত পাঠায়। কিন্তু এখন নাম পাঠাতেই বিদায়ী প্রধানেরা গড়িমসি করছেন।’’ জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, এ মাসেই নতুন বাজেট বরাদ্দের প্রথম কিস্তির টাকার আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনিতেই নির্বাচনের জন্য এপ্রিলের গোড়া থেকে মে মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত কোনও টাকা খরচ করা যায়নি। তারপরে যদি বিদায়ী পদাধিকারীদের অসহযোগিতায় কাজ পিছিয়ে যায় তা হলে আগামী কিস্তির টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। তা ছাড়া, নতুন যাঁরা নির্বাচিত হলেন, তাঁরা পড়ে থাকা টাকা বিদায়ী বোর্ডকে খরচ করতে দিতে না-ও পারেন।

বিদায়ী জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু যদিও বলেন, “উন্নয়ন কাজ আটকে থাকবে না। দল সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছে। সভাধিপতি হিসেবে আমিও প্রধানদেরকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন