কাটোয়া ঘুরে তেরঙ্গা কুড়োল ছাত্রছাত্রীরা

রোজ ভোরে এ পথ দিয়েই ফুটবল খেলতে যান ওই যুবক। মঙ্গলবারও হাতে ফুটবল নিয়ে কাছাড়ি রোড দিয়ে হাঁটছিেলন কলেজ পড়ুয়া জিৎ সরকার। আচমকা চোখ যায় রাস্তার ধারে শহিদ বেদিতে।

Advertisement

সুচন্দ্রা দে

কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৬ ০১:২২
Share:

কুড়িয়ে পাওয়া পতাকা বেঁধে রাখছে জিৎ, চিত্রলেখারা। নিজস্ব চিত্র।

রোজ ভোরে এ পথ দিয়েই ফুটবল খেলতে যান ওই যুবক। মঙ্গলবারও হাতে ফুটবল নিয়ে কাছাড়ি রোড দিয়ে হাঁটছিেলন কলেজ পড়ুয়া জিৎ সরকার। আচমকা চোখ যায় রাস্তার ধারে শহিদ বেদিতে। জিৎ দেখেন, সোমবার ফুল-মালা, অনুষ্ঠানে যে পতাকা তোলা হয়েছিল সেটাই কাদা মেখে, দলা পাকিয়ে পড়ে রয়েছে। মন খারাপের সঙ্গে মাথায় খেলে যায় অন্য ভাবনা।

Advertisement

আট বন্ধুকে ফোন করে ডেকে টোটো ভাড়া করেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া ওই ছাত্রেরা। সঙ্গে নেন দুটি মোটরবাইকও। শুরু হয়ে যায় শহর জুড়ে জাতীয় পতাকা কুড়োনোর কাজ। মঙ্গলবার ভোর পাঁচটা থেকে ১১টা পর্যন্ত শহরের এ রাস্তা-ও রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় তাঁদের। অবাক হয়ে যান প্রাতর্ভ্রমণে বেরোনো লোকজন, দোকান খুলতে আসা ব্যবসায়ীরা। দিনের শেষে প্রায় দু’বস্তা পতাকা কুড়িয়ে ফেরে তাঁরা।

স্বাধীনতা দিবসের দিন বাড়িতে, গাড়িতে, শহর জুড়ে হাজারো অনুষ্ঠান পতাকা তোলা নতুন নয়। আবার পরের দিন অবহেলায় সে পতাকা পড়ে থাকাও নতুন নয়। কেউ কেউ পতাকা খুলে রেখে দেন, আবার কোথাও হাওয়ায় উড়ে, দলা পাকিয়ে পড়ে থাকে তেরঙ্গা। তবে দল বেঁধে শহর ঘুরে পতাকা গুছিয়ে তুলে রাখার এ উদ্যোগ আনকোরা। কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অত্যন্ত ভাল কাজ করেছে ছেলেমেয়েগুলো। আগে কখনও এমন হয়নি।’’

Advertisement

এ দিন কলেজ মাঠ, হাপপাতাল চত্বর, চৌরাস্তা, পানুহাট ঘুরতে থাকেন ওই আট বন্ধু। পতাকা পড়ে থাকতে দেখলেই তুলে বস্তায় ভরে ফেলে প্রদীপ দাস, অচিন্ত্য চক্রবর্তী, গৌরাঙ্গ রায়, দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, চিত্রলেখা ঘোষেরা।

সকালে ওই এলাকাতেই হাঁঠতে বেরিয়েছিলেন গৌরাঙ্গপাড়ার বিষ্ণু দে। তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎ দেখি কয়েকটা ছেলে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে জাতীয় পতাকা কুড়োচ্ছে। প্রথমে অবাক হলেও মনটা ভরে গেল।’’ মাধবীতলার দিপা দাস, মাধাইতলার গৌরাঙ্গ পণ্ডিত, কাছাড়ি রোডের কৌশিক দে-রাও বলেন, ‘‘আমাদের চোখ এ দৃশ্যে অভ্যস্ত নয়। খুব ভাল কাজ করেছে ওরা।’’

জিৎ, চিত্রলেখাদের বাড়ির লোকজনেরাও বলেন, ‘‘স্বাধীনতা দিবসের দিন দেশভক্তি তো সবাই দেখায়। কিন্তু পরের দিন পতাকাগুলোর দিকে ফিরে তাকান না কেউ। আমাদের ছেলেরা পতাকার সম্মান রাখল।’’

তবে জিৎদের এ সবে কান নেই,। তাঁরা শুধু বলেন, ‘‘ব্যবহারযোগ্য পতাকাগুলো আমরা রেখে দেব। পরে প্রজাতন্ত্র দিবসে কোনও ক্লাব বা সংস্থা যদি চায় তাদের বিনামূল্যে দিয়ে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন