বাঁ দিকে, বাড়িতে মায়ের সঙ্গে প্রতীক প্রামাণিক। ডান দিকে, স্কুলে ইউনুস মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।
স্কুল ৫০ বছরে পা দিয়েছে। সে জন্য সারা বছর ধরে নানা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে পূর্বস্থলী কাষ্ঠশালী নিভাননী উচ্চ বিদ্যালয়ে। তবে সেই অনুষ্ঠানকে অন্য মাত্রা দিল ইউনুস ও প্রতীক। তারা যে শুধু এ বার মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছে তা নয়, ইউনুস সম্ভাব্য মহকুমা সেরাও। তবে আর পাঁচটা স্বচ্ছল পরিবার থেকে উঠে আসেনি তারা। আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পূর্বস্থলীর চুপি গ্রামের ইউনুস মণ্ডল পেয়েছে ৬৫৯। প্রতীক প্রামাণিকের প্রাপ্ত নম্বর ৬২২। এই সাফল্যের জন্য তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইউনুসের বাবা নেপালবাবু ধান, পাট যাঁরা চাষিদের কাছে কেনেন তাঁদের আড়তে কাজ করেন। মেরেকেটে হাজার চারেক টাকা আয়। চুপি গ্রামে ইটের তৈরি এক কামরার বাড়ি। নেপালবাবু জানান, ইউনুস তাঁদের একমাত্র সন্তান। মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে ছেলের সব বিষয়ের শিক্ষক ছিল না। অর্থকষ্টের কারণে ভাল বইপত্র ছেলেকে দেওয়া যায়নি। এলাকার কয়েক জন শিক্ষক বিনা পয়সায় ছেলেকে সাহায্য করতেন। তিনি বলেন, ‘‘অভাব থাকলেও একমাত্র ছেলেকে ভাল ফল করার জন্য আমরা উৎসাহ দিতাম। ছেলের সঙ্গে আমরাও কত রাত জেগেছি!’’ ছেলে ভাল ফল করার পরেও চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা। ইউনুসের মা উলফা বিবির কথায়, ‘‘এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে কী করে ওকে পড়াব সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।’’ ইউনুসের স্বপ্ন, চিকিৎসক হবে সে।
পূর্বস্থলী পঞ্চায়েত ভবনের পাশে জেলেপাড়ায় টিনের ছাউনি দেওয়া বাড়িতে বাস প্রতীকদের। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে বাবা প্রদীপবাবু খেতমজুর। সংসার চালাতে তাঁকে মাঝেমধ্যে মাছ ধরতে হয়। দুই ছেলের মধ্যে প্রতীক ছোট। বড় ছেলে প্রতাপও মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছিল বলে জানান প্রদীপবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল। স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত প্রথম ছিল। পড়াশোনায় কোনও দিনই ছেলেকে তেমন কোনও সাহায্য করতে পারিনি। তার মধ্যেই সে ভাল ফল করেছে। ছেলে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। কী করব তাই ভাবছি!’’
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার মাধ্যমিকে ১৩১ জন ছাত্রের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১১৭ জন। প্রধান শিক্ষক মদন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ বার স্কুল ৫০ বছরে পা দিয়েছে। সে জন্য সারা বছর ধরে অনুষ্ঠান চলছে। এই সময়ে ওদের সাফল্যে স্কুল গর্বিত।’’