আছে কিছু মেয়াদ ফুরনো সিলিন্ডার। রবীন্দ্রভবনে ছবিটি তুলেছেন শৈলেন সরকার।
অগ্নি নির্বাপণের সিলিন্ডারের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। নবীকরণের কোনও উদ্যোগ নেই। প্রশাসনের তরফেও নজরদারির ব্যবস্থা নেই। অগ্নি বিধিকে এ ভাবে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই বছরভর নানা অনুষ্ঠান চলছে আসানসোলের নানা প্রেক্ষাগৃহে। একই পরিস্থিতি সিনেমা হলগুলিরও। বড় আগুন লাগলে যে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে, মানছেন প্রশাসনের কর্তা থেকে অনুষ্ঠানের আয়োজক, সকলেই।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নাটক চলাকালীন আগুন লাগে কলকাতার অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের মঞ্চে। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নেভায়। অসুস্থ হয়ে পড়েন কয়েক জন নাট্যকর্মী। আসানসোলের রবীন্দ্রভবন প্রেক্ষাগৃহ বা বার্নপুরের সম্প্রীতি প্রেক্ষাগৃহে যাঁরা মাঝে-মধ্যে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন তাঁদের মতে, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার যা হাল, তাতে বিপন্মুক্ত নয় এই সব অনুষ্ঠানের জায়গাও।
রবীন্দ্রভবন ও সম্প্রীতিদু’টিই পুরসভার প্রেক্ষাগৃহ। আসানসোলের বিএনআর এলাকায় রবীন্দ্রভবনে প্রায় সব সময়েই কোনও না কোনও অনুষ্ঠান হয়। হাজারখানেক মানুষের বসার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার ব্যাপারে কার্যত কোনও নজরই দেওয়া হয় না। আগুন নেভানোর জন্য ২২টি অগ্নি নির্বাপণ সিলিন্ডার রয়েছে। কিন্তু সব ক’টির মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে ২০০৫ সালে। নানা রকম বৈদ্যুতিন জিনিসপত্র যে ভাবে রাখা, তাতে শর্ট সার্কিটের আশঙ্কা কোনও ভাবে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আগুন লাগলে নেভানোর জন্য তৎক্ষণাৎ জল পাওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। বার্নপুরের ত্রিবেণী মোড়ে সম্প্রীতি প্রেক্ষাগৃহের অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে অগ্নি নির্বাপণের কোনও ব্যবস্থাই নজরে পড়েনি।
এই দুই প্রেক্ষাগৃহের এমন অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারাও। রবীন্দ্রভবন প্রসঙ্গে আসানসোলের একটি নাট্যদলের অভিনেতা সম্পদ বসু বলেন, “শহরে এত বড় আর কোনও প্রেক্ষাগৃহ নেই। তাই বাধ্য হয়ে এই হল ভাড়া করতে হয় আমাদের। কিন্তু এখানে অগ্নিকাণ্ড থেকে রেহাই পাওয়ার মতো ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। কলকাতার ঘটনার পরে আমাদের ভয় আরও বাড়ল।” এই প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া করে নিয়মিত নানা অনুষ্ঠান করেন গৌতম রায়। তাতে যোগ দেন কলকাতার অনেক শিল্পীও। গৌতমবাবুর খেদ, “অনেক টাকা ভাড়া গোনার পরেও ন্যূনতম নিরাপত্তা মেলে না। ঝুঁকি নিয়ে অনুষ্ঠান করা খুবই মুশকিলের।” আর দেরি না করে শীঘ্র উপযুক্ত বন্দোবস্ত করা উচিত বলে তাঁদের দাবি। প্রেক্ষাগৃহগুলির থেকেও শোচনীয় অবস্থা শহরের সিনেমা হলগুলির। কোথাও সামান্য অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থাটুকুও দেখা যায়নি। যদিও, হল কর্তৃপক্ষগুলি কোনও গাফিলতির কথা মানতে চান না। তাঁদের দাবি, উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
পুরসভার প্রেক্ষাগৃহগুলির এই অবস্থা নিয়ে এই দফতরের সদ্য প্রাক্তন মেয়র পারিষদ অভিজিৎ ঘটক জানান, তাঁরা বছর চারেক আগে শেষ বার অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা পরীক্ষা ও নবীকরণ করিয়েছিলেন। অথচ, আসানসোলের দমকলের ওসি সেলিম জাভেদ জানান, প্রতি বছর নিয়ম করে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ও সিলিন্ডারগুলি তাঁর দফতর থেকে পরীক্ষা করিয়ে নবীকরণ করানোর কথা।
প্রেক্ষাগৃহগুলি বছর চারেক আগে শেষ বার পরীক্ষা করালেও শহরের সিনেমা হলগুলি কোনও দিনই তা করে না বলে দমকল কর্তৃপক্ষের দাবি। প্রেক্ষাগৃহগুলির অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা যে সন্তোষজনক নয়, তা স্বীকার করেন পুরসভার সংস্কৃতি দফতরের সদ্য প্রাক্তন মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলাম। এই ব্যবস্থা না রাখা ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রেক্ষাগৃহগুলির অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার দিকে নিয়মিত নজর রাখা উচিত বলে জানিয়েছেন আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাসও। তাঁর মতে, এই বিষয়টিতে গাফিলতি করা উচিত নয়। তিনি বলেন, “আমি দমকলের ওসির সঙ্গে কথা বলে শহরের সব ক’টি প্রেক্ষাগৃহের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করব।” দরকারে আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান তিনি।