অডিটের বৈঠকে মারপিট কাঁকসায়

একশো দিনের কাজের ‘সোশ্যাল অডিটে’র সভা চলাকালীন দু’দল গ্রামবাসীর মধ্যে হাতাহাতি হল কাঁকসার বিদবিহার পঞ্চায়েতের জামবন গ্রামে। মঙ্গলবারের এই ঘটনায় অডিট করতে যাওয়া সরকারি আধিকারিকেরাও প্রহৃত হন বলে অভিযোগ। আহত এক গ্রামবাসীকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আহতকে দলীয় সমর্থক দাবি করে ঘটনার দায় তৃণমূলের উপরে চাপিয়েছে বিজেপি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৪ ০১:২৯
Share:

একশো দিনের কাজের ‘সোশ্যাল অডিটে’র সভা চলাকালীন দু’দল গ্রামবাসীর মধ্যে হাতাহাতি হল কাঁকসার বিদবিহার পঞ্চায়েতের জামবন গ্রামে। মঙ্গলবারের এই ঘটনায় অডিট করতে যাওয়া সরকারি আধিকারিকেরাও প্রহৃত হন বলে অভিযোগ। আহত এক গ্রামবাসীকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আহতকে দলীয় সমর্থক দাবি করে ঘটনার দায় তৃণমূলের উপরে চাপিয়েছে বিজেপি।

Advertisement

দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক কস্তুরী সেনগুপ্ত জানান, একশো দিনের কাজের সভায় গোলমালের বিষয়টি কাঁকসা ব্লক অফিস থেকে পুলিশকে ফোনে জানানো হয়েছে। কস্তুরীদেবী বলেন, “ব্লক থেকে পুরো ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।” ইতিমধ্যে তৃণমূল পরিচালিত ওই পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ত্রিপল কেনায় দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। সে ব্যাপারে ব্লক প্রশাসন প্রধানকে পুরো বিষয়টি লিখিত ভাবে জানাতে বলেছে বলে খবর।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী এ দিন ওই গ্রামে একশো দিনের কাজের ‘সোশ্যাল অডিট’-এ যান ব্লকে অডিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক। গ্রামবাসীর সঙ্গে সংসদের সভা চলাকালীন হঠাৎই তিন-চার জন বাসিন্দা একশো দিনের কাজের বণ্টনে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে চেঁচামেচি জুড়ে দেন। কয়েক জন প্রতিবাদ করলে বচসা বাধে। তা গড়ায় হাতাহাতিতে। প্রহৃত হন উপস্থিত সরকারি আধিকারিক-কর্মীরা। আহত হন তরুণ রায় খয়রা নামে এক গ্রামবাসীও। তাঁকে প্রথমে কাঁকসা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, পরে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। তরুণবাবুর বাবা হাবলবাবুর অভিযোগ, “স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মীই এই হামলা চালিয়েছে।”

Advertisement

তরুণবাবুকে দলীয় সমর্থক দাবি করে বিজেপি-র দুর্গাপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অখিল মণ্ডলের অভিযোগ, “আমাদের সংগঠন ক্রমশ বাড়ছে। সেটা দেখেই রাজ্যের শাসকদলের নেতারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। তাই সামান্য বিষয়েও আমাদের কর্মীদের উপরে হামলা হচ্ছে।”

এই বিদবিহার পঞ্চায়েতেই আবার বিনা দরপত্রে ত্রিপল কেনার অভিযোগ উঠেছে। সিপিএমের অভিযোগ, শুধুমাত্র তৃণমূল সমর্থকদের সুবিধা পাইয়ে দিতেই এই কাজ করা হয়েছে। যদিও স্বজনপোষণের অভিযোগ উড়িয়ে পঞ্চায়েত প্রধান নিখিল ডোম বলেন, “অজ্ঞতার কারণেই এটা ঘটেছে। সরকারি নিয়ম আমাদের জানা ছিল না।”

পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, ফেব্রুয়ারিতে ত্রিপল কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী ‘কোটেশনে’র মাধ্যমে ত্রিপল কেনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। জুন পর্যন্ত ধাপে ধাপে পাঁচ দফায় প্রায় ৭ লক্ষ টাকার ত্রিপল কেনা হয়। সিপিএমের অভিযোগ, ৫ লক্ষ টাকার উপরে কোনও কিছু কেনার ক্ষেত্রে ‘ই-টেন্ডার’ ডাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। সিপিএমের কাঁকসা জোনালের প্রাক্তন সম্পাদক বীরেশ্বর মণ্ডলের দাবি, “সারা রাজ্যের মতোই বিদবিহার পঞ্চায়েতেও তৃণমূলের কাছের লোকেদের পাইয়ে দিতে এমন করা হয়েছে।”

যদিও সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য তথা প্রাক্তন কাঁকসা ব্লক সভাপতি দেবদাস বক্সী। তাঁর দাবি, “সিপিএমের লোকজন এখন বিজেপি-তে ঢুকে গোলমাল পাকিয়ে উন্নয়নে বাধা দিতে চাইছে। জামবনেও একই ঘটনা ঘটেছে।” ত্রিপল কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে দেবদাসবাবু জানান, সব ত্রিপল ফেরত দিয়ে সেগুলি পঞ্চায়েতের তহবিলে ঢুকিয়ে দিতে বলা হয়েছে। পরে সরকারি নিয়ম মেনে দরপত্র ডেকে ত্রিপল কেনা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন