অধ্যক্ষের পদত্যাগ, চাপান-উতোর ভাতারে

কাজে যোগ দেওয়ার মাস দুয়েকের মধ্যে পদত্যাগ করলেন ভাতার কলেজের অধ্যক্ষ শান্তিরানি দাঁ বিশ্বাস। বৃহস্পতিবার ওই কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠকে তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। শান্তিরানিদেবী বলেন, ‘‘শারীরিক ও পারিবারিক কারণে পদত্যাগ করেছি।’’ যদিও, তৃণমূলের একটি অংশ এবং এসএফআইয়ের দাবি, স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক বনমালী হাজরার ঘনিষ্ঠদের চাপেই পদত্যাগ করেছেন অধ্যক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদতা

ভাতার শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৪৪
Share:

কাজে যোগ দেওয়ার মাস দুয়েকের মধ্যে পদত্যাগ করলেন ভাতার কলেজের অধ্যক্ষ শান্তিরানি দাঁ বিশ্বাস। বৃহস্পতিবার ওই কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠকে তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। শান্তিরানিদেবী বলেন, ‘‘শারীরিক ও পারিবারিক কারণে পদত্যাগ করেছি।’’ যদিও, তৃণমূলের একটি অংশ এবং এসএফআইয়ের দাবি, স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক বনমালী হাজরার ঘনিষ্ঠদের চাপেই পদত্যাগ করেছেন অধ্যক্ষ।

Advertisement

২০১৩ সালে ভাতারের উচ্চ বিদ্যালয়ে এই দাশরথি হাজরা কলেজ চালু হয়। কোনও ভবন তৈরি না হওয়ায় বর্ধমান-কাটোয়া রোডের ধারে ওই স্কুলে সকালে কলেজের ক্লাস হয়। দীর্ঘ দু’বছর কলেজে কোনও অধ্যক্ষ ছিল না। গত ২৭ জুলাই রামপুরহাট কলেজে রসায়ন বিভাগের শিক্ষক শান্তিরানিদেবী লিয়েন নিয়ে ভাতার কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি আসার পরেই কলেজ তৈরির জন্য রাজ্য সরকার ১ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করে। তার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৬০ লক্ষ টাকা এসে গিয়েছে।

এসএফআই এবং তৃণমূলের অভিযোগ, গত সেপ্টেম্বরে পরিচালন সমিতির বৈঠকে কলেজ ভবন কী ভাবে তৈরি হবে, সে নিয়ে বিশদে আলোচনা হয়। অধ্যক্ষ সরকারি নিয়ম মেনে পূর্ত দফতরের মাধ্যমে ভবন তৈরির পক্ষে মত দেন। কিন্তু ভাতারের বিধায়কের দুই ঘনিষ্ঠ স্থানীয় ঠিকাদারদের দিয়ে কাজ করানোর জন্য চাপ তৈরি করেন। পরিচালন সমিতির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্যের অভিযোগ, “পরিচালন সমিতির কেউ কেউ নির্মাণ সামগ্রী ব্যবসায় যুক্ত রয়েছেন।” যদিও এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যে বলে দাবি করেছেন ভাতারের বিধায়ক বনমালীবাবু। তাঁর দাবি, “পূর্ত দফতরের মাধ্যেমে কলেজ ভবন তৈরি হবে বলে আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

Advertisement

কলেজের একটি সূত্রের আবার দাবি, তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বৃত্তির ফর্ম দিচ্ছে। প্রতিটি কলেজকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পড়ুয়াদের কাছ থেকে পূরণ করা ফর্ম জমা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়। অভিযোগ, ভাতার কলেজ কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের ১৯ তারিখের মধ্যে ফর্ম জমা দিতে নির্দেশ দেয়। সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের ভর্ৎসনা করেন। পরিচালন সমিতির সরকারের প্রতিনিধি বলাই দাস বৈরাগ্যের দাবি, “আমাদের নতুন কলেজ। শিক্ষাকর্মী কম। বৃত্তির ফর্ম নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। পড়ুয়ারা অধ্যক্ষকে ঘেরাও করেছিল। সেই চাপ সামলাতে না পেরে তিনি পদত্যাগ করেছেন।” কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে অধ্যক্ষ অনির্দিষ্ট কাল ছুটি নেন। ২৮ সেপ্টেম্বর পরিচালন সমিতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরিচালন সমিতি অনুরোধ করলেও অধ্যক্ষ পদত্যাগপত্র ফিরিয়ে নেননি। পরিচালন সমিতির সভাপতি মইনুদ্দিন মির্দা বলেন, “আমার আন্তরিক ভাবে চেয়েছিলাম, অধ্যক্ষ থাকুন। সব রকম চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তিনি গররাজি থাকায় শেষ পর্যন্ত পদত্যাগপত্র গ্রহণ করতে হল।” চাপের কথা সত্য কি না, প্রশ্ন করা হলে অধ্যক্ষ হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘দুঃখিত, এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’’

এসএফআই জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সৌমেন কার্ফার অবশ্য অভিযোগ, “শাসকদলের আর্থিক স্বজনপোষণে বাধা পড়লে অধ্যক্ষকে চাপ দিয়ে সরানো হবে, এ আর নতুন কথা কী!” টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা বক্তব্য, “কারা অধ্যক্ষকে চাপ দিল জানা নেই। তিনি তো পারিবারিক কারণে পদত্যাগ করেছেন বলে জানি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন