অনলাইনে ভর্তির সিদ্ধান্তে পিছু হটল বিদ্যাসাগরও

এপ্রিলের সিদ্ধান্ত বদলে গেল জুনে! গত এপ্রিলে সব কলেজে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করার পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন দুই মেদিনীপুরের কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের এক বৈঠকে ডেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েও দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। জানানো হয়েছিল, এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কী পদক্ষেপ করবে, কলেজগুলোকে কী কী পদক্ষেপ করতে হবে, তা-ও।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৪ ০০:০৪
Share:

এপ্রিলের সিদ্ধান্ত বদলে গেল জুনে!

Advertisement

গত এপ্রিলে সব কলেজে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করার পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন দুই মেদিনীপুরের কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের এক বৈঠকে ডেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েও দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। জানানো হয়েছিল, এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কী পদক্ষেপ করবে, কলেজগুলোকে কী কী পদক্ষেপ করতে হবে, তা-ও। কিন্তু, রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়কেও পিছনের দিকে ফিরিয়ে দিল! আগের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে সোমবার কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের ফের বৈঠকে ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন, অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করা বাধ্যতামূলক নয়। ভর্তির জন্য কলেজ থেকেই ফর্ম দেওয়া যাবে। কেন আগের সিদ্ধান্ত বদল?

সদুত্তর এড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “আমরা বলিনি কোনও কলেজই অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া চালাতে পারবে না। যে সব কলেজ পারবে, তারা করবে। তবে, এ বার অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করা বাধ্যতামূলক থাকছে না।” ফলে, কলেজে ভর্তি ঘিরে যে সব অস্বচ্ছতার অভিযোগ, সমস্যার অভিযোগ এত দিন উঠত, এ বারও তা উঠতে চলেছে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

Advertisement

ইতিমধ্যেই একাংশ কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দাপাদাপি শুরু হয়েছে। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই বৈঠকের পর নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধ্যক্ষ বলছিলেন, “ভর্তির সময়ে ছাত্র সংসদ একটু তৎপর হয়ই। সংসদের অতি-তৎপরতা ঠেকাতে অনলাইন পদ্ধতি চালুই উপযুক্ত দাওয়াই হতে পারত। কিন্তু, কোথায় কী! এ বারও অনলাইন চালু হচ্ছে না।” তাঁর অনুমান, “অনলাইন যখন বাধ্যতামূলক নয়, তখন কে আর ঝুঁকি নিয়ে এই পরিষেবা চালু করতে চাইবে!”

কলেজগুলোয় কবে থেকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে, সোমবারের বৈঠকে তা-ও জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তালিকা তৈরি করেছেন। এ বার কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজের মতো করে দিনক্ষণ চূড়ান্ত করবেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশ, ৫ জুন থেকে ভর্তির ফর্ম দেওয়া শুরু হতে পারে। ফর্ম দেওয়া-জমা নেওয়ার কাজ শেষ করতে হবে ১৬ জুনের মধ্যে। কলেজগুলো মেধা-তালিকা প্রকাশ করবে ২১ থেকে ২৩ জুনের মধ্যে। ২৪ জুন থেকে ভর্তি শুরু হবে। প্রথম বর্ষের কাজ শুরু হবে আগামী ১০ জুলাই।

এপ্রিলের বৈঠকের পর ছাত্রছাত্রীদের সকলেই দিন বদলের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। তারা মনে করেছিলেন, ভর্তি ঘিরে ঝক্কির দিন বোধহয় শেষ হতে চলেছে। কারণ, কলেজ থেকে ফর্ম তোলা এবং পরে তা পূরণ করে জমা দেওয়া মানে তো নানা সমস্যা। সকাল থেকে ফর্ম তোলার লাইনে দাঁড়ানো। অনেক সময় ফর্ম পেতে পেতে দুপুর গড়িয়ে যাওয়া। অনলাইন চালু হলে অনেক কলেজে আবেদনের জন্য বাড়তি খরচ হত না। এ বার তা হবে। যেমন এপ্রিলের বৈঠকে জানানো হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সমস্ত কলেজে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ জন্য কিছু পদক্ষেপের কথাও ঘোষণা করা হয়।

যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়স্তরে সেন্ট্রাল অনলাইন কমিটি গঠন, প্রত্যেক কলেজেও অনলাইন কমিটি গঠন, কলেজগুলোতে হেল্প-ডেক্স তৈরি, পূর্ব- পশ্চিম মেদিনীপুরের ১০টি কলেজে নোডাল সেন্টার তৈরি প্রভৃতি। ঠিক হয়েছিল, ছাত্রছাত্রীরা অনলাইনে ফর্মপূরণ করবেন। নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করবেন। পরে মেধা-তালিকা অনুযায়ী কলেজে ভর্তি হবেন। একজন ছাত্রছাত্রী সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে ভর্তির আবেদন করতে পারবেন। এর বেশি নয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য বিষয় পৃথক হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। দুই মেদিনীপুরে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মোট ৪৩টি কলেজ রয়েছে। এরমধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৫টি, পূর্ব মেদিনীপুরে ১৮টি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ফি’ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলন, ২৫০ টাকা। কিন্তু, এগোনো নয়, পিছনোও নয়, রাজ্য সরকারের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে চলতে আগের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এলেন কর্তৃপক্ষ। ফলে, এপ্রিলের সিদ্ধান্ত জুনের গোড়ায় এসে বদলে দেওয়ার আগে বেশি ভাবতেও হল না তাঁদের।

সোমবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী, রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দী, কলেজ সমূহের পরিদর্শক বিনয় চন্দ প্রমুখ। বৈঠকের পর নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধ্যক্ষ বলছিলেন, “ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর পরে বেশ কিছু অভিযোগ উঠতে থাকে। আমাদের কাছেও অনেক দাবি-অভিযোগপত্র জমা পড়তে শুরু করে। এটাই দস্তুর! আমরা ছাত্র ভর্তিতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ঠেকিয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখার চেষ্টা করব। দেখা যাক কতদূর কী হয়!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন