অবশেষে আলোর খেলা রাজবাড়িতে

বরাদ্দ টাকা মিললেও পুরাতত্ত্ব বিভাগের অনুমতি, বিদ্যুত্‌ সমস্যার নানা জটে প্রায় তিন বছর আটকে ছিল কালনার ১০৮ শিবমন্দির ও রাজবাড়ি কমপ্লেক্সের আলো-ছায়া প্রকল্প। বুধবার তারই উদ্বোধন করে গেলেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা নানা পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন ঘুরে দেখার সঙ্গে এ দিন তিনি খোঁজ নেন শহরে পর্যটকদের রাতে থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে কি না, সে বিষয়েও। ব্রাত্যবাবু জানান, কালনার আলো-ছায়া প্রকল্প ছাড়াও জেলার আরও নানা মন্দির ও ঐতিহাসিক নির্দন সংস্কারের জন্য পর্যটন বিভাগের তরফে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০৭
Share:

কালনা রাজবাড়ি কমপ্লেক্সে পর্যটন মন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

বরাদ্দ টাকা মিললেও পুরাতত্ত্ব বিভাগের অনুমতি, বিদ্যুত্‌ সমস্যার নানা জটে প্রায় তিন বছর আটকে ছিল কালনার ১০৮ শিবমন্দির ও রাজবাড়ি কমপ্লেক্সের আলো-ছায়া প্রকল্প। বুধবার তারই উদ্বোধন করে গেলেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু।

Advertisement

শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা নানা পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন ঘুরে দেখার সঙ্গে এ দিন তিনি খোঁজ নেন শহরে পর্যটকদের রাতে থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে কি না, সে বিষয়েও। ব্রাত্যবাবু জানান, কালনার আলো-ছায়া প্রকল্প ছাড়াও জেলার আরও নানা মন্দির ও ঐতিহাসিক নির্দন সংস্কারের জন্য পর্যটন বিভাগের তরফে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

২০১১ সালে তত্‌কালীন পর্যটন মন্ত্রী রচপাল সিংহ কালনার নানা পর্যটনস্থল ঘুরে সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পুরসভাকে তড়িঘড়ি পরিকল্পনা পাঠাতে বলেন। পুরসভা তা পাঠাতে টাকাও অনুমোদন করে পর্যটন দফতর। কিন্তু যে এলাকায় প্রকল্পটি করার কথা ভাবা হয় সেটি পুরাতত্ত্ব বিভাগের হাতে থাকায় তখন তার অনুমোদন মেলেনি। পরে দিল্লি থেকে ওই বিভাগের প্রতিনিধি দল এলাকা ঘুরে যান। এ বছরের মাঝামাঝি কেন্দ্রীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ, রাজ্য পর্যটন বিভাগ এবং কালনা পুরসভার ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে একটি মৌ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ঠিক হয়, বিদ্যুত্‌ খরচ এবং প্রকল্পটি দেখভালের দায়িত্ব নেবে কালনা পুরসভা। এর পরে কাজ শুরু হয়। আলো-ছায়া প্রকল্প তৈরি করতে রাজ্য পর্যটন দফতর চলচ্চিত্র জগতের আলো বিশেষজ্ঞ কনিষ্ক সেনের সাহায্য নেয়। ১০৮ শিব মন্দির, প্রতাপেশ্বর মন্দির, রাসমঞ্চ, কৃষ্ণচন্দ্র মন্দিরে লাগানো হয় অত্যাধুনিক আলো।

Advertisement

পর্যটনে বরাদ্দ

• কালনার গোপীনাথ মন্দির সংস্কারে ১১ লক্ষ।

• স্বাধীনতা সংগ্রামী বটুকেশ্বর দত্তের ভিটা সংস্কারে সাড়ে ৮ লক্ষ।

• সর্বমঙ্গলা মন্দির সংস্কারে ১ কোটি ৪৮ লক্ষ।!

• অন্যান্য শিব মন্দির সংস্কারে আরও ৪৪ লক্ষ।

বুধবার বিকেলে পর্যটন মন্ত্রী রাজবাড়ি কমপ্লেক্সের ভিতরের মন্দিরগুলি খুঁটিয়ে দেখেন। বর্ধমান রাজারা কোন সময়ে মন্দিরগুলি তৈরি করেছিলেন তার বিস্তারিত খোঁজ নেন। প্রতাপেশ্বর মন্দিরের গঠন শৈলী এবং কৃষ্ণচন্দ্র মন্দিরের পোড়া মাটির কারুকাজ মুগ্ধ করে মন্ত্রীকে। তিনি বলেন, “এত ভাল মন্দির এখানে আছে না এলে দেখতে পেতাম না। সব থেকে সুন্দর প্রতাপেশ্বর মন্দির। এই মন্দিরের সমস্ত প্রাচীন কারুকার্য আজও অখ্যত।” ব্রাত্যবাবুর সঙ্গে এ দিন ছিলেন কালনার বিধায়ক তথা পুরপ্রধান বিশ্বজিত্‌ কুণ্ডু। মন্ত্রী বিধায়ককে জিজ্ঞেস করেন, প্রতিদিন কত পর্যটক আসেন শহরে। বিধায়ক জানান, দেড়শো থেকে দুশো। তাঁদের রাতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে কি না তাও জানতে চান মন্ত্রী। পুরপ্রধান জানান, পুরসভার চারটি গেস্ট হাউস রয়েছে। তবে সেগুলি মন্দির লাগোয়া নয়। মন্ত্রী বিধায়ককে দ্রুত মন্দির লাগোয়া গেস্ট হাউসের পরিকল্পনা তার দফতরে পাঠাতে বলেন।

মন্দির ঘুরে দেখার পরে একটি সভায় পর্যটন মন্ত্রী জানান, এই সরকার পর্যটনে ছ’গুন বেশি টাকা বরাদ্দ করেছে। সাধারন মানুষের কাছে নানা পরামর্শ নেওয়ার জন্য একটি ফেসবুক এবং টুইটার অ্যাকাউন্ট খুলেছে পর্যটন দফতর। জোর দিয়েছে ইকো টুরিজমেও। মন্ত্রীর দাবি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ছোট কটেজ তৈরি করা হচ্ছে। এ ধরনের পরিকাঠামো কালনায় চালু করতে চাইলে তার দফতর কর্মশালার জন্য প্রতিনিধি দল পাঠাবে বলেও জানান তিনি। পরে বিশ্বজিত্‌ বাবু বলেন, “কালনায় আসা পর্যটকরা সাধারণত রাতে থাকেন না। তাঁরা রাত বাস করলে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে উন্নত হবে শহর।” বিধায়কের দাবি, আলো ও ছায়া প্রকল্পের জন্য বিদ্যুত্‌ দফতরের কাছে একটি ২৫ কেবি ট্রান্সফর্মারের আবেদন জানানো হয়েছে। এই প্রকল্পটি চালু হওয়াই পর্যটকদের কাছে কালনার আকর্ষণ আরও বেড়ে যাবে। অনুষ্ঠানের শেষ দিকে আসেন রাজ্যের আর এক মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। সন্ধ্যায় দুই মন্ত্রীর উপস্থিতিতে জ্বালানো হয় বিভিন্ন মন্দিরের আলো। আলো বিশেষজ্ঞ কনিষ্কবাবু বলেন, “অত্যাধুনিক এলইডি আলো লাগানো হয়েছে এই প্রকল্পে। ফলে বিদ্যুত্‌ পুড়বে অল্পই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন