আইএসএলে সুযোগের অপেক্ষায় ছোটরা

শঙ্কর ওঁরাও, সফর সর্দার থেকে মণীশ ভার্গব। ময়দানে পরিচিত মুখের সংখ্যা কম নয়। ভিন্ রাজ্যের নানা ক্লাবেও ছড়িয়ে রয়েছেন দুর্গাপুরের মোহনবাগান-সেল অ্যাকাডেমির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। পূর্বসূরীদের এই সাফল্যের খতিয়ান তো রয়েছেই। এ বার এই অ্যাকাডেমির ফুটবলারদের দু’চোখে স্বপ্ন নিয়ে হাজির ‘ইন্ডিয়ান সুপার লিগ’ (আইএসএল)।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৪৭
Share:

পয়লা বৈশাখে বারপুজোর পরে হাল্কা অনুশীলনে দুর্গাপুরের মোহনবাগান-সেল অ্যাকাডেমির শিক্ষার্থীরা। ছবি: বিকাশ মশান।

শঙ্কর ওঁরাও, সফর সর্দার থেকে মণীশ ভার্গব। ময়দানে পরিচিত মুখের সংখ্যা কম নয়। ভিন্ রাজ্যের নানা ক্লাবেও ছড়িয়ে রয়েছেন দুর্গাপুরের মোহনবাগান-সেল অ্যাকাডেমির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। পূর্বসূরীদের এই সাফল্যের খতিয়ান তো রয়েছেই। এ বার এই অ্যাকাডেমির ফুটবলারদের দু’চোখে স্বপ্ন নিয়ে হাজির ‘ইন্ডিয়ান সুপার লিগ’ (আইএসএল)।

Advertisement

অনূর্ধ্ব ১৯ আই লিগে কলকাতা জোনে খুব বেশি দাগ কাটতে পারেনি মোহনবাগানের এই দল। তার পর থেকে প্রায় ছুটি চলছিল অ্যাকাডেমিতে। মঙ্গলবার বারপুজোর মধ্য দিয়ে শুরু হল নতুন মরসুম। ছোটদের আই লিগ খেলা আসা অনেকেই জানাল, আগামি ২-৩ বছরের মধ্যে আইএসএলে সুযোগ পাওয়াই এখন ‘পাখির চোখ’। কী ভাবে স্থানীয় খেলোয়াড় নিয়োগ করা হবে ওই প্রতিযোগিতায়, তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত কিছু জানা যায়নি। তবে অ্যাকাডেমির খুদেদের বক্তব্য, “নিজেকে তৈরি রাখতে দোষ কি! যদি সুযোগ আসে?”

মোহনবাগান ও সেলের যৌথ প্রয়াসে এই অ্যাকাডেমির যাত্রা শুরু ২০০৩ সালের জুলাইয়ে। বিগত বছরগুলিতে ওঠা-নামার মধ্য দিয়ে এগিয়েছে অ্যাকাডেমি। ২০০৬ সালের অগস্টে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড প্রিমিয়ার কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলতে ইংল্যান্ড গিয়েছিল অ্যাকাডেমির খুদেরা। মোট আট হাজার ক্লাব প্রাথমিক পর্বের খেলায় যোগ দিয়েছিল। শুধু ভারত নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সেরা হয়ে চূড়ান্ত পর্বের খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল তারা। যদিও ইংল্যান্ডের মাটিতে সঞ্জয় বোরোর নেতৃত্বাধীন দল বিশেষ দাগ রাখতে পারেনি। সে বছরেই অনূর্ধ্ব ১৫ দল গিয়েছিল সিঙ্গাপুরে ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জ কাপ খেলতে। বিদেশের ক্লাব দলগুলোর সঙ্গে খেলতে নেমে অ্যাকাডেমির ছেলেরা যাতে মানসিকতায় পিছিয়ে না পড়ে সে জন্যই এ সব উদ্যোগ।

Advertisement

এক সময়ে একাধিক বিদেশি কোচও ছেলেদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ২০০৭ সালে দায়িত্ব নিয়ে আসেন ব্রাজিলিয়ান লুই হেনরিক রিবিয়েরো গ্রেকো। ফুটবল দুনিয়ায় যিনি পরিচিত ‘প্রফেসর গ্রেকো’ নামে। দীর্ঘদিন তিনি ছিলেন ব্রাজিলের ক্রুজেইরো এসপোর্টে ক্লাবে, যেখানে খেলেছেন রিভাল্ডো, জোয়ারজিনহো, জুয়ান পাবলো সোরিন, পাবলো ফোরলনের মতো ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ের এক ঝাঁক তারকা ফুটবলার। এরপর আসেন পর্তুগিজ কোচ রয় ব্যরেটো। তিনি জিম্বাবোয়ের জাতীয় দলের, বেশ কিছু ক্লাব দলের এবং দক্ষিণ আফ্রিকার একাধিক ক্লাবের হয়ে কোচিং করিয়েছেন। ইদানীং অবশ্য অ্যাকাডেমিতে কোচিংয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ভারতীয় কোচ দীপক বেরা। অ্যাকাডেমির সঙ্গে প্রায় প্রথম থেকে তিনি জড়িয়ে আছেন।

মঙ্গলবার বারপুজোর পরে দীপকবাবু জানালেন, এখন মোট ৩০ জন খেলোয়াড় রয়েছে। প্রত্যকেই অনূর্ধ্ব ১৯ বিভাগের। সকাল-বিকাল দু’বেলা কোচিং করান। তিনি নিজেও ২৪ ঘণ্টা অ্যাকাডেমিতেই কাটান। এক দিন অন্তর জিম করে ছেলেরা। তবে জাকুজি খারাপ থাকায় একটু অসুবিধা হচ্ছে। দীপকবাবু জানান, অনূর্ধ্ব ১৯ আই লিগে নজর কেড়েছে অনির্বান মান্না, পিন্টু মাহাতো, রাম মালিক, সানু হাজরারা। হাওড়ার বালির অনির্বানের বাবা স্টেশনে হোটেল চালান। মা পরিচারিকার কাজ করেন। অনির্বান বলে, “আইএসএল আমাদের জন্য বাড়তি সুযোগ এনে দিতে পারে। এখন শুধু মন দিয়ে অনুশীলন করতে চাই।” জঙ্গলমহলের ঢডরাশোল গ্রাম থেকে এসেছে পিন্টু। সে জানায়, বাবা সামান্য চাষি। স্থানীয় কোচ অমিয় ভট্টাচার্যের কাছ থেকে অ্যাকাডেমির খবর পায়। পিন্টু বলে, “বছরখানেক আছি। অনেক শিখেছি। আরও শিখতে হবে। ময়দানের পাশাপাশি আইএসএল-ও সামনে রয়েছে। আগামি ২-৩ বছরের মধ্যে তো আমিও সুযোগ পেতে পারি!” বসিরহাটের সনু নিজের এলাকায় প্রায় সব প্রতিযোগিতাতেই ম্যাচের সেরা হয়ে থাকে। সে জন্য প্রথম প্রথম অ্যাকাডেমিতে অনুশীলনে ঢিলে দিত। কোচ দীপকবাবুর কড়া নজরে এখন তার অনুশীলনে জোর বেড়েছে।

আইসিএল নিয়ে ছেলেদের উৎসাহ দেখে কোচ দীপকবাবু বলেন, “আমি সবটা এখনও জানি না। তবে যা শুনছি, তাতে আইএসএল আমাদের ছেলেদের কাছে সুযোগ হয়ে দেখা দিতে পারে।” অ্যাকাডেমির সহ-সচিব তপন রায় বলেন, “এখান থেকে কলকাতা-সহ দেশের বিভিন্ন বড় ক্লাবে ছেলেরা গিয়েছে। আইএসএলেও যদি সেই ধারা বজায় থাকে খুব খুশি হব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন