সাক্ষ্য গ্রহণের চতুর্থ দিনেই ‘বিরূপ’ বলে ঘোষিত হলেন এক সাক্ষী। আইনজীবীদের একাংশের অনুমান, বৃহস্পতিবার নবাবহাটের ওই ধর্ষিতা ছাত্রীর বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনার ভয় পেয়েই পুলিশের কাছে দেওয়া বয়ান থেকে সরে আসছেন সাক্ষীরা।
শুক্রবার একাদশ শ্রেণির স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালীন পুলিশের কাছে দেওয়া বয়ান ‘চাপে পড়ে’ দিয়েছিলেন বলে জানালেন এক সাক্ষী। অথচ শেখ কলিমুদ্দিন নামে ওই সাক্ষীই পুলিশকে জানিয়েছিলেন, ধর্ষণের ধটনার ধৃত নয় অভিযুক্তকেই তিনি চেনেন। এরপরেই তাঁকে ‘বিরূপ’ ঘোষণা করেন বিচারক।
সরকার পক্ষের আইনজীবী অরূপ দাসের দাবি, “যে ক’জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে মৃতার বাবা-মা ছাড়া কেউই তেমন ভাবে মুখ খুলতে চাইছেন না। একজনকে তো আজ হস্টাইল বলে ঘোষণাও করা হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে, সাক্ষীদের ভয় দেখানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতেই কাজলের বাড়িতে বৃহস্পতিবার আগুন লাগানো হয়েছে।” এ দিন বিচারকের কাছে সাক্ষীদের পুলিশের গাড়িতে আদালতে আসাযাওয়ার ব্যবস্থা করারও আবেদন জানিয়েছেন তিনি। বিচারক অবশ্য ওই মৌখিক আবেদনের উত্তরে কোনও মন্তব্য করেননি।
এ দিন দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে স্থানীয় একটি নির্মিয়মান নার্সিংহোমের অন্যতম অংশিদার আসরফ আলি মণ্ডলের সাক্ষ্যও গৃহীত হয়। বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দেন তিনি। এর আগে ওই ধর্ষিতা ছাত্রীর মা ও বাবার সাক্ষ্য গৃহীত হয়েছে। তাঁরা ঘটনায় ন’জন জড়িত বলে জানিয়েছেন। অভিযুক্তদের আইনজীবি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “এই নিয়ে মোট ছ’জনের সাক্ষ্য নেওয়া হল। সব মিলিয়ে ২৭জনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, ঘটনার পরে মোট সাতজন অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। পরে দু’জন আদালতে আত্মসমর্পন করেন। প্রত্যেকেই নবাবহাট এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশও ওই ছাত্রীর বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনায় সন্দেহ করছে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় জড়িত ওই ৯ জনকেই। তার মূল কারণ, আগুন লাগানোর ঘটনা নজরে আসার পর থেকেই ওই ন’জনই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “ওই ন’জনের খোঁজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি কেউই নিজেদের বাড়িতে নেই। ফলে ওদের বিরুদ্ধেই আগুন লাগানোর মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
বর্ধমান থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, বাড়িতে আগুন লাগার খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই অভিযুক্তদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালায়। কিন্তু কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। এসপি বলেন, “আদালতে হাজির হতে হচ্ছিল বলে ওই ব্যক্তিরা এতদিন এলাকায় উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ওই ছাত্রীর বাড়িতে আগুন লাগার পরেই তাদের পালাতে দেখে আমরা নিশ্চিত যে ওই ঘটনায় তারাই জড়িত। আদালতকে বলে ওদের নামে সমন জারি করানো হবে।”