আড়ম্বর ছাড়াও সমান জনপ্রিয় বাড়ির পুজো

সেই বৈভব এখন আর নেই। নেই আগের আড়ম্বর। কিন্তু এখনও বনেদি বাড়ির পুজো ছাড়া পাণ্ডবেশ্বরের মানুষ দুর্গাপুজো ভাবতেই পারেন না। পাণ্ডবেশ্বর গ্রামের চট্টোপাধ্যায়েরা এলাকার জমিদার ছিলেন। বর্তমানে এই পুজোর প্রতিমা, স্থায়ী মণ্ডপের রক্ষণাবেক্ষণ, পুরোহিত, ঢাক-ঢোলের খরচ বহন করেন জমিদার বাড়ির সদস্যরা। চার দিনের পুজো-সহ পঙ্ক্তিভোজের দায়িত্ব থাকে চারটি অব্রাহ্মণ পরিবারের উপর।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

পাণ্ডবেশ্বর শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৪ ০২:১৭
Share:

সেই বৈভব এখন আর নেই। নেই আগের আড়ম্বর। কিন্তু এখনও বনেদি বাড়ির পুজো ছাড়া পাণ্ডবেশ্বরের মানুষ দুর্গাপুজো ভাবতেই পারেন না।

Advertisement

পাণ্ডবেশ্বর গ্রামের চট্টোপাধ্যায়েরা এলাকার জমিদার ছিলেন। বর্তমানে এই পুজোর প্রতিমা, স্থায়ী মণ্ডপের রক্ষণাবেক্ষণ, পুরোহিত, ঢাক-ঢোলের খরচ বহন করেন জমিদার বাড়ির সদস্যরা। চার দিনের পুজো-সহ পঙ্ক্তিভোজের দায়িত্ব থাকে চারটি অব্রাহ্মণ পরিবারের উপর। বাড়ির সদস্যরা জানান, ১৮০ বছর আগে এই পুজো শুরু করেছিলেন বৈদ্যনাথপুর ও পাণ্ডবেশ্বর মৌজার জমিদার কাঙালেশ্বর চট্টোপাধ্যায়। ৬০ বছর আগে এই পরিবারের এক শরিক ঝাড়খণ্ডের এক গ্রামে তাঁর মামার বাড়ির পারিবারিক পুজোকে এই পুজোর সঙ্গে মিলিয়ে দেন। ওই সময়েই গ্রামেই পৃথক পুজো শুরু করে গ্রামের রায় পরিবার। এই দু’টি পুজোতেই গণেশের পাশে রয়েছেন সরস্বতী এবং কার্তিকের পাশে রয়েছেন লক্ষ্মী। আসানসোল পুরসভার ডেপুটি মেয়র অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় এই পরিবারের সদস্য। তিনি বলেন, “এই পুজো গ্রামের সবার।” অপর সদস্য সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, এই পুজোর খরচ তোলার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট তহবিল। গ্রামের কোনও ছেলের বিয়ে হলে ১৫১ টাকা, মেয়ের বিয়ে হলে ১০১ টাকা, পুত্র সন্তান হলে ১০১ টাকা ও কন্যা সন্তান হলে ৫১ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়।

পাণ্ডবেশ্বর থেকে কিছু দূরে গৌরবাজার এলাকা বৈষ্ণব গ্রাম হিসেবে পরিচিত। কথিত আছে, এই গ্রামে এসেছিলেন স্বয়ং চৈতন্যদেব। এই এলাকায় মোট ১১টি পারিবারিক পুজো হয়। এর মধ্যে ১০টি বৈষ্ণব মতে। শুধুমাত্র পাণ্ডে বাড়ির পুজো হয় শাক্ত মতে। গ্রামের সব পুজোর বিসর্জন হয় একাদশীতে। তার আগে একটি ফাঁকা মাঠে সব পুজোর প্রতিমা আনা হয়। হয় লাঠি খেলা ও আদিবাসীদের নাচ। গৌরবাজারের পাশে বাসুদেবপুরের সব পুজোই হয় বৈষ্ণব মতে।

Advertisement

উখড়ার ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো ক্ষ্যাপাদুর্গা মায়ের পুজো বলে পরিচিত। প্রতিমার আটটি হাত ছোট ও দু’টি হাত বড়। বড় দু’টি হাতে শাঁখা পড়ানো হয়। ভট্টাচার্য পরিবারের এক সদস্যের দাবি, প্রায় ২০০ বছর আগে এক শাঁখারি তাঁদের বাড়িতে এসে জানান পরিবারের এক মেয়ে শাঁখা পরেছে। সে বলেছে বাড়ির মন্দির থেকে টাকা নিতে। কিন্তু তখন তাঁদের পরিবারে কোনও কন্যা সন্তানই ছিল না। তবু পূর্বপুরুষ গঙ্গারাম ভট্টাচার্য ওই মন্দিরে গিয়ে দেখেন, সত্যি টাকা রাখা আছে। গ্রামের পুকুরের মাঝে শাঁখা পরা দু’টি হাত দেখা যায়। তার পরে স্বপ্নাদেশ পেয়ে শুরু পুজো।

খান্দরার সরকার বাড়ির পুজো প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছরের। বাড়ির সদস্য অমিতাভ সরকার জানান, একটি মাটির হাঁড়ির মধ্যে জল রেখে তার উপর ফুটো তামার বাটি বসানো হয়। ওই বাটি ডুবলে শুরু হয় সন্ধিপুজো। ওই গ্রামের বক্সী বাড়ির পুজো প্রায় চারশো বছর। বাড়ির সদস্য শিশির বক্সী জানান, পূর্বপুরুষ গোর্বধন বক্সী পুজো শুরু করেন। অন্ডাল গ্রামের চট্টোপাধ্যায় বাড়ি সাহিত্যিক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের মামারবাড়ি। এই পরিবারের পুজো প্রায় সর্বজনীনে হয়ে গিয়েছে। অন্ডাল পঞ্চায়েতের প্রধান রাজু রায় জানান, এই পুজোয় এসেছেন স্বয়ং শৈলজানন্দ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন